Advertisement
E-Paper

আমেরিকার ৪১তম প্রেসিডেন্ট ‘সিনিয়র বুশ’ প্রয়াত

 তাঁর টুপিতে পালকের সংখ্যা কম নয়। ১৯৮৯ থেকে চার বছর, মার্কিন-সোভিয়েত ঠান্ডা যুদ্ধের শেষ পর্যায় এবং পশ্চিম এশিয়ায় ভয়াবহ সঙ্কটকালে আমেরিকার কর্ণধার ছিলেন তিনিই।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:১৬
জর্জ হারবার্ট ওয়াকার বুশ

জর্জ হারবার্ট ওয়াকার বুশ

তাঁর টুপিতে পালকের সংখ্যা কম নয়। ১৯৮৯ থেকে চার বছর, মার্কিন-সোভিয়েত ঠান্ডা যুদ্ধের শেষ পর্যায় এবং পশ্চিম এশিয়ায় ভয়াবহ সঙ্কটকালে আমেরিকার কর্ণধার ছিলেন তিনিই। কিন্তু জর্জ হারবার্ট ওয়াকার বুশকে গোটা বিশ্ব চিনত উপসাগরীয় যুদ্ধের জন্য! আমেরিকার ৪১তম প্রেসিডেন্ট, সেই ‘সিনিয়র বুশ’ মারা গেলেন গত কাল। বয়স হয়েছিল ৯৪।

তাঁর ছেলে জর্জ ডব্লিউ বুশ পরবর্তী কালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন এবং তিনিও ইরাকে যুদ্ধ করেছিলেন! কী সমাপতন!

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ময়দান থেকে হোয়াইট হাউস— দীর্ঘ পথ হেঁটে আসা ‘ফর্টিওয়ান বুশ’ লড়ে গিয়েছেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। শেষ বয়সে আক্রান্ত হয়েছিলেন পার্কিনসন্স রোগে। ১৯৯২-এর ভোটে ‘সিনিয়র বুশ’কে হারিয়ে হোয়াইট হাউসে এসেছিলেন ডোমোক্র্যাট বিল ক্লিন্টন। পূর্বসূরির মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি আজ টুইট করলেন, ‘‘ফাঁকা লাগছে। সিনিয়র বুশকে বন্ধু হিসেবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।’’ শোক জানিয়েছেন বারাক ওবামা, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-সহ অনেকেই।

সিনিয়র বুশ হোয়াইট হাউসে আসার কিছু আগে থেকেই ভাঙন ধরছিল পূর্ব ইউরোপে কমিউনিস্ট শাসনের লৌহ প্রাচীরে। তিনি ১৯৯০ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ক’মাস পরেই ভেঙে পড়ে বার্লিনের প্রাচীর। ১৯৯১-এ ভাঙল সোভিয়েত ইউনিয়ন। বিশ্ব রাজনীতির এমন টালমাটাল আবহে কী ভাবে সব কিছু সামাল দেন বুশ, সে দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা বিশ্ব।

আরও পড়ুন: আর্থিক অন্যায় রোখার বার্তা দিলেন মোদী

দেখা গেল, তিনি তৈরি হয়েই এসেছেন। টানা দু’বার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ, সিআইএ-র ডিরেক্টর পদ সামলানোর অভিজ্ঞতা ছিলই। প্রেসিডেন্ট হয়ে প্রতিশ্রুতি দিলেন, ‘‘আমি নতুন বাতাস বয়ে এনেছি। পুরনো সব ভাবনা ঝরা পাতার মতো ঝেড়ে ফেলে এ বার নতুন সম্ভাবনার দিকে এগোবে আমেরিকা।’’

বাকিটা ইতিহাস। প্রথম লক্ষ্য, চার দশক ধরে চলা ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান। সেটা করেও ফেললেন। ১৯৯১-এ তাঁর চুক্তি-সইয়ের বন্ধু প্রাক্তন সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচভ আজ বলেছেন, ‘‘সত্যিই উনি বন্ধু ছিলেন। যুদ্ধ শেষে আমাদের সফল অংশীদার।’’

ঠান্ডা যুদ্ধ শেষ তো, তেলের জন্য যুদ্ধ শুরু! ১৯৯০-এর উপসাগরীয় যুদ্ধ। কুয়েতের জমিতে সাদ্দাম হুসেনের ইরাক হানা দিতেই পেয়ে গেলেন সুযোগ। ৩০টি দেশকে নিয়ে গড়লেন সেনাজোট। বুশের আক্রমণে গুঁড়িয়ে গেল ইরাকের বিরাট অংশ। মার্কিন শক্তির কাছে মাথা নোয়াতে বাধ্য হলেন সাদ্দাম। কিন্তু বুশের গায়ে লেগে গেল ‘যুদ্ধবাজ’ তকমা।

কয়েক বছর পরে ‘জুনিয়র বুশ’ও ইরাক আক্রমণ করেন। তবে তিনি বাবার মতো সাদ্দামকে ছাড় দেননি, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। ছেলের গায়েও লেগেছে ‘যুদ্ধবাজ’ তকমা!

ইরাক যুদ্ধ শেষ হতেই সিনিয়র বুশ বুঝলেন তাঁকে ঘিরে আমেরিকার অন্দরেই অসন্তোষ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। বিদেশ সামলাতে গিয়ে ঘর দেখা হয়নি। তাঁর সামনে বড় কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিল ক্লিন্টন। ভোটের আগে জনমত সমীক্ষাই বলে দিল, অর্থনীতিতে ডাহা ফেল সিনিয়র বুশ। আসন নড়বড়ে। আর হলও তা-ই। হেরেই গেলেন।

তাঁর মতোই ধনকুবের থেকে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ট্রাম্প। তিনিও রিপাবলিকান। তবু সিনিয়র বুশের না-পসন্দ ট্রাম্প। তাই ২০১৬-য় তিনি ভোট দেননি ট্রাম্পকে। বেলাশেষে #মিটু-তেও নাম জড়িয়েছিল। সে জন্য ক্ষমাও চেয়েছিলেন বলেছিলেন, ‘‘আমার কোনও খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। তবু কারও খারাপ লেগে থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’’

ক্ষমা চাননি শুধু ইরাক যুদ্ধের জন্য। কেন? মৃত্যুর পরেও সে প্রশ্ন রইলই।

George HW Bush Death US
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy