Advertisement
E-Paper

আইএস-এর ড্রোনের ‘যম’ রয়্যাল ইগল! অবিশ্বাস্য কৌশল ফরাসি বাহিনীর

ইরাক এবং সিরিয়ার বিরাট এলাকা এক সময় চলে এসেছিল দখলে। কিন্তু আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া-সহ বৃহৎ শক্তিগুলির সাহায্যপুষ্ট বাহিনীর সামনে এখন রোজ পিছু হঠছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। সিরিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যে শহর বছর খানেক আগেও আইএস-এর রাজধানী ছিল, সেই রাকা হাতছাড়া।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১৬:৩৩
ড্রোনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে রয়্যাল ইগল। ছবি: এএফপি।

ড্রোনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে রয়্যাল ইগল। ছবি: এএফপি।

ইরাক এবং সিরিয়ার বিরাট এলাকা এক সময় চলে এসেছিল দখলে। কিন্তু আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া-সহ বৃহৎ শক্তিগুলির সাহায্যপুষ্ট বাহিনীর সামনে এখন রোজ পিছু হঠছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। সিরিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যে শহর বছর খানেক আগেও আইএস-এর রাজধানী ছিল, সেই রাকা হাতছাড়া। আলেপ্পোর দুর্ভেদ্য ঘাঁটিও বিপর্যস্ত। আর ইরাকের ময়দানে পিছু হঠতে হঠতে মসুলের পশ্চিমাঞ্চল এবং সংলগ্ন কিছু এলাকায় সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছে আইএস রাজত্ব। শেষ দুর্গ রক্ষায় এ বার একের পর এক ড্রোন হামলা শুরু করেছে আইএস।

আবু বকর আল বাগদাদির বাহিনীর কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন মসুল রক্ষা করা। পূর্ব মসুল আগেই হাতছাড়া হয়েছিল। কিন্তু টাইগ্রিসের পশ্চিম তীরে মসুলের যে অংশ, তা এখনও আইএস-এর দখলে। গত রবিবার থেকে সেখানেও ভয়ঙ্কর যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ইরাকের সরকারি বাহিনী, শিয়া মিলিশিয়া এবং কুর্দ বাহিনী ঘিরে ধরেছে পশ্চিম মসুলকে। আকাশ থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন ফোর্স। ফলে ইরাকের শেষ দুর্গে ঘোর সঙ্কটে আইএস।

মসুলকে ঘিরে ফেলছে ইরাকি বাহিনী। ছবি: এএফপি।

মসুলের আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম ইতিমধ্যেই আইএস-এর দখল থেকে মুক্ত করে নিয়েছে ইরাকি সেনা। কিন্তু শহরের ঘিঞ্জি গলি, সঙ্কীর্ণ রাস্তা আর জনবহুল এলাকায় দ্রুত ঢুকে পড়া সে বাহিনীর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তাতে বিপুল ক্ষয়ক্ষয়তির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে নিরীহ মানুষের প্রাণহানির ভয়ও। তাই ইরাকি বাহিনী এবং কোয়ালিশন ফোর্স এখন ধীরে এগনোর নীতি নিয়েছে। চার পাশ থেকে ঘিরে ধরে পশ্চিম মসুলকে অবরুদ্ধ করে রাখতে চাইছে ইরাক, যাতে রসদের অভাবে আইএস কিছু দিনের মধ্যে পিছু হঠতে বাধ্য হয়। কিন্তু ইরাকি বাহিনীর এই পরিকল্পনা সহজে সফল হতে দিতে চায় না আইএস-ও। মসুলকে ঘিরে অবস্থানরত ইরাকি সেনার বিভিন্ন ঘাঁটিতে এ বার ড্রোন হামলা চালাতে শুরু করেছে তারা। ছোট আকারের হালকা ড্রোনে বোমা লাগিয়ে আকাশে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। রিমোট নিয়ন্ত্রিত এই সব ড্রোন ইরাকি সেনা ঘাঁটির উপরে পৌঁছে বোমা ফেলে আবার ফিরে যাচ্ছে নিজের ঘাঁটিতে। এই ড্রোন হামলার কৌশল মাসখানেক আগে থেকেই প্রয়োগ করতে শুরু করেছে আইএস। জঙ্গি সংগঠনটির দাবি, এই ধরনের হামলায় মাত্র এক সপ্তাহে ৩৯ জন ইরাকি সেনা হতাহত হয়েছেন। মসুলকে ঘিরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাই এই কৌশল আরও বেশি করে প্রয়োগ করতে শুরু করেছে আইএস। পরিস্থিতি এমনই যে ইরাকি বাহিনী এবং কোয়ালিশন ফোর্স ড্রোন হামলার বিষয়ে বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করতে বাধ্য হয়েছে।

অনেকটা এ ভাবেই ড্রোনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে ফরাসি বিমান বাহিনীর ইগলগুলি। —নিজস্ব চিত্র।

আইএস-এর ড্রোন হামলা মোকাবিলায় জবরদস্ত কৌশলও কিন্তু প্রস্তুত হচ্ছে অন্য প্রান্তে। পথপ্রদর্শক হয়ে উঠেছে ফ্রান্স। ড্রোনের উপর পাল্টা হামলা চালানোর অভিনব কৌশল নিয়েছে ফরাসি বাহিনী। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিকারি ইগল নিমেষে ঝাঁপিয়ে পড়ছে ড্রোনের উপর। ইগলের থাবায় ভেঙে যাচ্ছে ড্রোনের অংশবিশেষ তার পর অকেজো ড্রোনকে নিয়ে লোকালয় থেকে দূরে চলে যাচ্ছে ইগল। যাতে বিস্ফোরণ ঘটলেও ক্ষয়ক্ষতি না হয়।

ইরাক বা সিরিয়ায় এই কৌশল এখনও ফ্রান্স প্রয়োগ করেনি। কিন্তু চারটি ইগলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ সুসম্পন্ন। একাধিক বার উড়ন্ত ড্রোনকে মাঝ আকাশেই ভেঙে দিয়েছে এই ইগলগুলি, তার পর নামিয়ে দিয়েছে কোনও ঘাস জঙ্গলে।

আরও পড়ুন: শিরশ্ছেদের আগে এ ভাবেই বুক চিতিয়ে ছিলেন এই ইরাকি অফিসার

উড়ন্ত ড্রোনকে গুলি করেও আকাশ থেকে নামানো যায়। কিন্তু তাতে অন্য আশঙ্কা থাকে। জনবহুল এলাকার উপর সেটি ভেঙে পড়লে বড় ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। ফরাসি বিমান বাহিনী যে ইগলগুলিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, তারা ড্রোনকে আকাশে ভেঙে দেবে। কিন্তু নীচে পড়তে দেবে না। টেনে নিয়ে যাবে লোকালয় থেকে দূরবর্তী কোনও এলাকায়। ইগলের গলায় চামড়ার বেল্টে বিস্ফোরক অকোজো করার যন্ত্রও লাগানোর তোড়জোড় শুরু করেছে ফ্রান্স। কারণ ইগল ড্রোনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেই রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ইগলটিকেও শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করবে জঙ্গিরা। সেই ছক ভেস্তে দিতেই বিস্ফোরক অকেজো করার যন্ত্র লাগানো হবে ইগলের গলায়।

ফরাসি বিমানঘাঁটিতে প্রশিক্ষণ চলছে রয়্যাল ইগলের। ছবি: এএফপি।

কী ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল এই ইগলগুলিকে? ফরাসি বিমানবাহিনী সূত্রের খবর, চারটি ইগলের ডিমকে ড্রোনের উপর রেখে দেওয়া হয়েছিল। ডিম ফুটে ইগলগুলির জন্মও হয় ড্রোনের উপরেই। যত দিন পর্যন্ত ইগলের ছানাগুলিকে খাইয়ে দিতে হচ্ছিল, তত দিন ওই ড্রোনের উপরেই রাখা হয়েছিল তাদের। ফলে জন্মমুহূর্ত থেকে ড্রোন চিনে গিয়েছিল তারা। এর পর ড্রোনের উপর মাংসের টুকরো রেখে সেগুলিকে আকাশে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল। ইগলগুলি সেই ড্রোনকে তাড়া করে ধরছিল, তার পর ঘাসের জঙ্গলে নামিয়ে নিয়ে মাংস খাচ্ছিল। একটি ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, মাত্র ২০ সেকেন্ডের মধ্যে ২০০ মিটার উড়ে গিয়ে একটি ড্রোনকে মাঝ আকাশে ভেঙে দিচ্ছে প্রশিক্ষিত ইগল।

ফরাসি বিমান বাহিনী ইগলগুলির সক্ষমতায় উচ্ছ্বসিত। এই ভাবে আরও ইগলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

IS Drone Attack Royal Eagle French Air Force Iraq-Syria
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy