বিস্ফোরণে ধসে গিয়েছে রাস্তা। তাইওয়ানের কোহিয়ং শহরে। ছবি: এপি।
রাত দেড়টা নাগাদ ভয়ঙ্কর কাঁপতে শুরু করেছিল বহুতল বাড়িটা। চেন কিং তাও ভেবেছিলেন বোধ হয় ভূমিকম্প হচ্ছে। দরজা খুলে বাইরে বেরোতে গিয়েই ভুল ভাঙে তাঁর। দেখেন, আগুন আর ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে পুরো শহরটাই। তখনই চেন জানতে পারেন, গ্যাসের পাইপলাইনে বিস্ফোরণের ফলে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে কোহিয়ং। তাইওয়ানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।
কাল রাতের ওই বিস্ফোরণের জেরে মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের, আহতের সংখ্যা ২৬০। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, আহতদের মধ্যে অনেকেরই আঘাত মারাত্মক। ফলে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। পুলিশ জানিয়েছে, কাল মাঝ রাত থেকে আজ ভোর পর্যন্ত মোট পাঁচ বার বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে কোহিয়ং।
দক্ষিণ তাইওয়ানের বন্দর শহর কোহিয়ং বহুতল আর বড় বড় দোকানে ঠাসা। ওই শহরেরই মাটির তলা দিয়ে গিয়েছে বিভিন্ন গ্যাসের পাইপলাইন। পুলিশের ধারণা, প্রপিলিন গ্যাসের পাইপ থেকেই বিপর্যয় ঘটেছে কাল রাতে। প্রপিলিন একটি হাইড্রোকার্বন। পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে এটি তৈরি করা হয়। সাধারণত পেট্রোরাসায়নিক শিল্পে নানা কাজে এটি ব্যবহৃত হয়। পলিপ্রপিলিন প্লাস্টিক তৈরি করতেও এই রাসায়নিকের গুরুত্ব অসীম।
রাত দেড়টা নাগাদ প্রথম বিস্ফোরণটি হয়। তার পর আরও চারটে। আগুনের গোলা ছড়িয়ে পড়ে সারা আকাশ জুড়ে। দমবন্ধ করা ধোঁয়ায় ঢেকে যায় গোটা শহর। বিস্ফোরণের তীব্রতায় রাস্তায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। গাড়িগুলো উল্টে পড়েছে খেলনার মতো। পুলিশের কথায়, “স্থানীয় একটি বাজার রাতে খোলা থাকে, তার আশপাশে থাকা ক্রেতারাই বিস্ফোরণে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।” চেন ইউ পিং নামে এক পুলিশ অফিসারের কথায়, “বিস্ফোরণের তীব্রতায় মাটি থেকে শূন্যে উড়ে গিয়েছিলাম।”
তবে বিস্ফোরণের কারণ নিয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্তে আসতে রাজি নন দেশের প্রেসিডেন্ট মা ইং ঝেউ। বিষয়টির উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যে পাইপলাইনে বিস্ফোরণটি হয়েছে, সেটি সরকারি সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন। আর কোনও বিস্ফোরণ যাতে না-হয়, সে দিকেই প্রশাসনকে বিশেষ নজর দিতে বলেছেন প্রেসিডেন্ট। জঙ্গি হানার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে সরকার।
দমকল কর্মীদের সঙ্গে উদ্ধার কাজে হাত লাগিয়েছে সেনা বাহিনীও। মৃতদের মধ্যে চার জন দমকল কর্মী রয়েছেন। ১২০০ জন বাসিন্দাকে সরকারি ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy