অবশেষে শুরু হয়েছে সংঘর্ষবিরতি। গাজ়া ভূখণ্ডের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গত কালই সেনা প্রত্যাহার করার কথা জানিয়েছে ইজ়রায়েলি বাহিনী। যা আদতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফার শান্তিচুক্তিরই প্রথম পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। টানা দু’বছর পরে যুদ্ধ থামায় স্বস্তিতে গাজ়াবাসীও। তবে আনন্দের মধ্যেও কোথাও যেন প্রতিটি পরিবারেই বাজছে বিষাদের সুর! যন্ত্রণাটা প্রিয়জনকে হারানোর। যুদ্ধ-কালে প্রায় তলানিতে ঠেকেছে সঞ্চয়ের অঙ্কও। তাই আপাতত তাঁদের লক্ষ্য কর্মস্থান, এমনটাই জানালেন দক্ষিণ গাজ়ার বাসিন্দা আবদেল রমহান এস জে আবু তাখিয়া।
শনিবার আনন্দবাজারের তরফে আবদেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘অবশেষে যুদ্ধ থেমেছে। গাজ়াবাসীর কাছে খবরটা কতটা আনন্দের, তা ভাষায় ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। আর এই অনুভূতিটা বাকি বিশ্বের মানুষের পক্ষে বোঝাও অসম্ভব। তবে যুদ্ধ-কালে প্রিয়জনদের হারানোর যন্ত্রণা আমাদের প্রবল কষ্ট দিচ্ছে।’’ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলে হামাসের আক্রমণের পরপরই গাজ়ায় শুরু হয়েছিল পাল্টা আক্রমণ। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইজ়রায়েলি হানায় প্রিয় এক কাকাকে হারিয়েছিলেন আবদেলের স্ত্রী হাদিল কে এল সাবাখি। এই প্রসঙ্গে আবদেল বলছিলেন, ‘‘যুদ্ধটা আর কিছু দিন আগে থামলে ভাল হত। তা হলে বহু মানুষ অন্তত প্রাণে বাঁচতেন। বহু মানুষকে গৃহহীন হয়ে ত্রাণ শিবিরে দিন কাটাতে হত না।’’
বছর সাতাশের আবদেল জানালেন, সারা গাজ়া ভূখণ্ড খুঁজেও সম্ভবত এমন একটা পরিবার মিলবে না, যাঁরা তাঁদের কোনও না কোনও প্রিয়জনকে এই যুদ্ধে হারাননি। কার্যত প্রাণ হাতে করে গত দু’টি বছর কাটিয়েছেন গাজ়াবাসী। ব্যতিক্রম নন আবদেলও। বলছিলেন, ‘‘খাবার, পানীয় জল সংগ্রহে কিংবা অন্য কোনও কাজে বাইরে গেলে সব সময় ভয় কাজ করত, এই বুঝি ইজ়রায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ল।’’ বাড়িতেও ভয়ে ভয়েই থাকতেন আবদেলরা। তাঁর কথায়, ‘‘পরের দিনের সকালটা আদৌ দেখতে পাব কি না, এই অনিশ্চয়তা নিয়েই প্রতি রাতে ঘুমোতে যেতাম। এ বার অন্তত শান্তিতে ঘুমোতে পারব।’’
যুদ্ধ থামায় ধীরে ধীরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বোঝাই ট্রাকও তো ঢুকতে শুরু করেছে? আবদেলের উত্তর, ‘‘অনেক দিন পরে আমরা এ বার ভাল করে খেতে পারব। আশা করছি, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আমরা জিভে জল আনা মাংসের পদও খেতে পারব।’’ গত ছ’মাসেরও বেশি সময় ধরে মাংস এবং পুষ্টিকর কোনও খাবার ছাড়াই দিন কাটিয়েছে তাঁর পরিবার, জানিয়েছেন আবদেল।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)