Advertisement
E-Paper

গাজ়ায় ৫ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে, চার দিকে ভিড় ক্ষুধার্ত মানুষের! এর মধ্যেই চলছে ইজ়রায়েলের সামরিক হামলা

মার্চ মাস থেকে গাজ়া অবরোধ করে রেখেছে ইজ়রায়েলি সেনা। ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না ত্রাণ বা বাণিজ্যিক পণ্য সরবরাহকারী ট্রাককে। তার জেরে তীব্র খাদ্যসঙ্কটের মুখোমুখি গাজ়াবাসী।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২৫ ২১:০৬
Gaza Strip with famine and faces 500,000 with starvation, a global hunger monitor has warned

ছবি: রয়টার্স।

গোলাবর্ষণ চলছে। ঘরবন্দি বহু মানুষ। ঘর থেকে বার হলে গোলাগুলিতে মৃত্যুর আশঙ্কা! কিন্তু ঘরে খাবার নেই, সঙ্কট ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যেরও। তবে বাইরেও যে খাবার, ওষুধের খুব একটা সরবরাহও আছে, তা নয়! চারপাশে শুধুই হাহাকার। খাবার নেই, ওযুধ নেই, প্রয়োজনীয় পণ্যের অভাব। এমনই চিত্র গাজ়ার সর্বত্র। কারণ, ইজ়রায়েল সরকার ‘অবরোধ’ করে রেখেছে গাজ়া। এর ফলে দুর্ভিক্ষের মুখে এই উপত্যকা। সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, গাজ়ায় প্রায় পাঁচ লক্ষ প্যালেস্টাইনি ক্ষুধার্ত। ওই অবস্থাতেই বেঁচে আছেন কোনও রকমে।

ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি) নামক এক সংস্থা যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজ়ার মানুষদের করুণ চিত্র তুলে ধরেছে তাদের প্রতিবেদনে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেড় বছর ধরে ভয়াবহ যুদ্ধের মুখোমুখি গাজ়া উপত্যকা। একই সঙ্গে খাদ্যসঙ্কট প্যালেস্টাইনিদের ঠেলে দিচ্ছে দুর্ভিক্ষের মুখে।

মার্চ মাস থেকে গাজ়া অবরোধ করে রেখেছে ইজ়রায়েলি সেনা। ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না ত্রাণ বা বাণিজ্যিক পণ্য সরবরাহকারী ট্রাককে। তার জেরে তীব্র খাদ্যসঙ্কটের মুখোমুখি গাজ়াবাসী। হাজার হাজার শিশু অপুষ্টির কারণে হাসপাতালে ভর্তি। অনাহারে মৃতের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। আইপিসি-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য পণ্য বা সামগ্রী হয় শেষ হয়ে গিয়েছে, নয়তো আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ফুরাবে। গাজ়াবাসী তীব্র খাদ্যসঙ্কটে ভুগছেন। সেখানে পাঁচ লক্ষ মানুষ (প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে এক জন) অনাহারের সম্মুখীন হচ্ছেন।’’ পরিসংখ্যান তুলে ধরে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, গাজ়ার জনসংখ্যার প্রায় ৯৩ শতাংই তীব্র খাদ্যঘাটতির মুখোমুখি।

গত বছর অক্টোবরেও এই সংস্থা গাজ়ার পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। তবে সেই সময়কার তুলনায় এখনকার পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্য ভাবে অবনতি ঘটেছে। মনে করা হচ্ছে, ইজ়রায়েলি অবরোধ যদি অব্যাহত থাকে তবে গোটা গাজ়ার পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। শুধু তা-ই নয়, খাদ্যসঙ্কট আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

একে মুহুর্মুহু বোমাবর্ষণ, অন্য দিকে অনাহার— দুই সঙ্কটে নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা গাজ়াবাসীর। এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, ইজ়রায়েল মার্চ মাস থেকে গাজ়া অবরোধ করায় ইতিমধ্যে অন্তত ৫৭ জন গাজ়াবাসীর মৃত্যু হয়েছে অনাহারে। গত সপ্তাহের দেওয়া সেই পরিসংখ্যান বদলে যেতে পারে। বাড়তে পারে অনাহারে মৃতের সংখ্যাও। আইপিসি-এর রিপোর্টে দাবি করা হয়েছ, সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছেন উত্তর গাজ়া এবং দক্ষিণের রাফার বাসিন্দারা। ইজ়রায়েল যদি এই অবরোধ চালিয়ে যায় তবে, গাজ়া উপত্যকার অধিকাংশ মানুষই খাদ্য, জল, আশ্রয় এবং ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য পাবেন না! এই সঙ্কট গাজ়াবাসীদের মধ্যেই অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলবে। এমনকি, সঙ্কট থেকে বাঁচতে একে অপরকে হামলাও করতে পারেন। বাড়তে পারে প্রতিযোগিতাও।

ইজ়রায়েলের অবরোধের কারণে গাজ়ায় মজুত খাদ্যের ভান্ডার ক্রমশ ফুরিয়ে যাচ্ছে। খাদ্যের সঙ্কট যত বাড়ছে, ততই দামও বাড়ছে। কিন্তু যুদ্ধপরিস্থিতিতে আর্থিক সঙ্কটও বাড়ছে। নেই রোজগার, নেই কর্মসংস্থান। ফলে প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য টাকার জোগানও নেই গাজ়ার ঘরে ঘরে। আইপিসি-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতে মধ্য গাজ়ার ডের এল-বালা হোক বা দক্ষিণের খান ইউনিসে গমের আটার দাম তিন হাজার শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

গাজ়ায় ইজ়রায়েলের খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে নানা মহলে। রাষ্ট্রপুঞ্জের দাবি, খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে ইজ়রায়েল, যা একে বারেই ঠিক নয়। তবে নানা সমালোচনার পরেও নিজের অবস্থানে অনড় বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার। আইপিসি-এর প্রতিবেদনে বার বার যুদ্ধবিরতির দাবি করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, যুদ্ধ বন্ধ করে অবাধ মানবিক সহায়তা প্রদানের সুযোগ দেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আচমকাই দক্ষিণ ইজ়রায়েলে হামলা চালায় প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। পাল্টা গাজ়ায় হামলা শুরু করে ইজ়রায়েলি সেনা। ইজ়রায়েল হোক বা হামাস— দুই পক্ষই অনেককে পণবন্দি করে। তার পর থেকেই ইজ়রায়েল এবং হামাসের মধ্যে পণবন্দিদের নিয়ে দর কষাকষি চলছে। ১৯ মাস ধরে চলা যুদ্ধে কাতার, মিশরের মতো দেশগুলির মধ্যস্থতায় বেশ কয়েক বার সাময়িক যুদ্ধবিরতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনও পর্যন্ত যুদ্ধ থামার লক্ষণ নেই। তবে এর মধ্যেই যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসাবে দুই পক্ষই পণবন্দিদের মুক্তি দিয়েছে। তবে কেউই সরাসরি যুদ্ধের পথ থেকে সরে আসতে রাজি নয়।

রবিবারও অবরুদ্ধ গাজ়ায় হামলা চালায় ইজ়রায়েলি সেনা। গাজ়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ইজ়রায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন প্যালেস্টাইনির মৃত্যু হয়েছে, যাঁদের মধ্যে শিশু ও মহিলাও রয়েছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ইজ়রায়েলি হামলায় গাজ়ায় মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা লক্ষাধিক।

Israel-Hamas Conflict Gaza war
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy