অতীত হয়ে গেলেন এই ঐতিহাসিক চুম্বনের নায়ক-নায়িকা।
১৯৪৫ সালের ১৪ অগস্ট। নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ার। লোকটার মাথায় টুপি আর গায়ে কালো পোশাক। দেখলে বেশ চেনা যাচ্ছে তিনি একজন নাবিক। আচমকা কাছাকাছি চলে এলেন এক তরুণীর। তার পরনে সাদা অ্যাপ্রন। পেশায় তিনি একজন নার্স। পায়ে জুতো আর লম্বা সাদা মোজা। তার পরেই সেই অমর হয়ে যাওয়া মুহূর্ত। সাদা আর কালো মিশে যাওয়ার মুহূর্ত। যে মুহূর্তে সাদা অ্যাপ্রন আর কালো কোট ডুবে যায় গভীর চুম্বনে।
অচেনা অজানা নার্সকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করছেন এক নাবিক— দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেই তোলা ওই ছবি পোঁছে গিয়েছিল প্রায় অমর চিত্রকথার পর্যায়ে। অনেক পরে পাওয়া গিয়েছিল সেই নাবিক যুবক আর সেই তরুণী নার্সের পরিচয়। বছর তিনেক আগে ৯২ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছিলেন সেই ছবির নায়িকা গ্রেটা ফ্রিডম্যান। এ বার প্রয়াত হলেন সেদিনের সেই নাবিক জর্জ মেন্ডোসা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি, রবিবার আচমকা হার্ট অ্যাটাকে মারা যান তিনি। তার দু’দিন পরেই ছিল তাঁর জন্মদিন।
১৯৪৫ সালে আমেরিকার সেনার কাছে আত্মসমপর্ণ করে অক্ষশক্তির অন্যতম বড় শরিক জাপান। সেই খবর পাওয়ার পরেই রাস্তায় ঢল নামে নিউইয়র্কবাসীর। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন ২১ বছরের গ্রেটা ও মেন্ডোসাও। মেন্ডোসারও বয়স তখন ২১। সেই বিজয়ের উল্লাসের মধ্যেই আচমকা দৌড়ে এসে আনন্দে আত্মহারা জর্জ মেন্ডোসা চুমু খেয়েছিলেন গ্রেটার কোমর জড়িয়ে ধরে। টাইমস স্কোয়ারের কাছেই রেডিও সিটি মিউজিক হলে একটি কনসার্ট শুনতে গিয়েছিলেন তিনি। আনন্দের উচ্ছ্বাসে সেখান থেকেই দৌড়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। গ্রেটা ও জর্জের এই চুম্বনরত ছবিটি তুলেছিলেন চিত্রসাংবাদিক আলফ্রেড আইজেনস্টাট।
আরও পড়ুন: ছোট্ট ‘ভুলে’ ভেস্তে যায় ওয়াশিংটন খুনের ছক
পরে আমেরিকার একটি জনপ্রিয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ছবিটি। কিন্তু ছবিটির কথা তখনই জানতে পারেননি গ্রেটা। প্রায় ১৫ বছর পরে, ১৯৬০ সালে আলফ্রেডের ছবির একটি বইতে ছবিটি দেখেছিলেন তিনি। পরে এক সাক্ষাৎকারে গ্রেটা বলেছিন যে ওই চুম্বন শুধুমাত্র আনন্দের বহিঃপ্রকাশেরই নমুনা ছিল। এমনকি, মেন্ডোসাকে তিনি চুমু খাবেন কি না সেই ব্যাপারেও নিশ্চিত ছিলেন না খুব একটা।
তবে মজার ব্যাপারটা হল, ওই সময়েই সেখানে উপস্থিত ছিলেন মেন্ডোসার প্রেমিকা রিটা পেট্রিও, পেশায় যিনিও একজন নার্স ছিলেন। পরে রিটার সঙ্গেই বিয়ে হয় জর্জের। ওই বিখ্যাত চুমু নিয়ে রীতিমতো মস্করা করতেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে রিটা জানিয়েছিলেন যে জর্জ কোনওদিনই রিটাকে ওই বিখ্যাত ‘গ্রেটা-চুমু’ উপহার দেননি।
আরও পড়ুন: সন্ত্রাসের প্রশ্নেও পাক-সৌদি বন্ধুত্ব, অস্বস্তিতে ভারত
আরও জানা যায় যে, ছবির দু’জনের পরিচয় ১৯৮০ সাল পর্যন্ত অজ্ঞাতই ছিল। ছবিটি বিখ্যাত হওয়ার পরে অন্তত ১১ জন দাবি করেছিলেন যে, তাঁরাই ওই ছবির নাবিক। আর ৩ জন মহিলা জানিয়েছিলেন, ছবির নার্স তাঁরাই। শেষ পর্যন্ত ২০১২ সালে লরেন্স ভেরিয়ার লেখা ‘দ্য কিসিং সেলর: দ্য মিস্ট্রি বিহাইন্ড দ্য ফটো দ্যাট এন্ডেড ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু’ বইয়ে পাওয়া যায় ওই দু’জনের নাম ও বাকি তথ্য। প্রযুক্তির সাহায্যেই ওই দু’জনের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছিলেন তিনি বলে জানিয়েছিলেন।
অবশেষে রইলেন না নায়ক নায়িকা কেউই। রয়ে গেল শুধু সেই টাইমস স্কোয়ারেই দাঁড়িয়ে থাকা ২৫ ফুট দীর্ঘ সেই মুহূর্তের ভাস্কর্য— 'আনকন্ডিশনাল স্যারেন্ডার'; যার অর্থ, নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ।
'আনকন্ডিশনাল স্যারেন্ডার'
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy