Advertisement
E-Paper

অবসাদ লুকিয়েই বিমানে ওঠেন কো-পাইলট লুবিৎজ

অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। নিয়মিত চিকিৎসাও চলছিল। ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছিলেন কিছু দিন কাজ থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু সেই মানসিক অসুস্থতার কথা সম্পূর্ণ গোপন করে মঙ্গলবার ককপিটে উঠেছিলেন অ্যান্ড্রিয়াস লুবিৎজ। জার্মানউইঙ্গস ফ্লাইট ৪ইউ ৯৫২৫-এর কো-পাইলট। আজ এ কথা জানিয়েছেন জার্মান তদন্তকারী অফিসাররা।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০২:৫০
চলছে উদ্ধারকাজ। শুক্রবার। ছবি: রয়টার্স।

চলছে উদ্ধারকাজ। শুক্রবার। ছবি: রয়টার্স।

অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। নিয়মিত চিকিৎসাও চলছিল। ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছিলেন কিছু দিন কাজ থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু সেই মানসিক অসুস্থতার কথা সম্পূর্ণ গোপন করে মঙ্গলবার ককপিটে উঠেছিলেন অ্যান্ড্রিয়াস লুবিৎজ। জার্মানউইঙ্গস ফ্লাইট ৪ইউ ৯৫২৫-এর কো-পাইলট। আজ এ কথা জানিয়েছেন জার্মান তদন্তকারী অফিসাররা।

এয়ারবাস এ-৩২০-র ভয়েস রেকর্ডার থেকে গত কালই জানা গিয়েছিল, ইচ্ছাকৃত ভাবেই পাইলটকে ককপিটের ভিতরে ঢুকতে না দিয়ে ১৪৯ জন যাত্রী নিয়ে আল্পসের বুকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন লুবিৎজ। এই তথ্য সামনে আসার পরই লুবিৎজের ফ্ল্যাটে হানা দেন তদন্তকারী অফিসারেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, লুবিৎজের লেখা কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি তাঁর বাড়িতে। মেলেনি কোনও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বা ধর্মীয় জেহাদের ইঙ্গিতও।

কিন্তু যা মিলেছে, তাতে বেশ চমকে গিয়েছেন গোয়েন্দারা। লুবিৎজের বাড়িতে কয়েকটা ছেঁড়া কাগজের টুকরো দেখতে পেয়েছেন তাঁরা। সেগুলোকে জড়ো করতেই দেখা যায়, সেটা আসলে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের অংশ।

অসুস্থতার কারণে কিছু দিন বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেওয়াও হয়েছে তাতে। তদন্তকারীদের এক জন বলেন, “উদ্ধার হওয়া কাগজপত্র থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট, লুবিৎজ মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন। এবং তাঁর চিকিৎসা চলছিল।”

কিন্তু মানসিক ভাবে অসুস্থ এক জন চালককে কী ভাবে ককপিটে ওঠার অনুমতি দেওয়া হল? সে প্রশ্ন এখন উঠতে শুরু করেছে। নিয়মমাফিক প্রতিটি উড়ানে আগে পাইলট ও কো-পাইলটের মানসিক পরীক্ষা করে দেখা হয়। সেই পরীক্ষাই বা কী ভাবে পাশ করেছিলেন লুবিৎজ? লুফৎহানসার (এরই শাখা সংস্থা জার্মানউইঙ্গস) চিফ এগ্জিকিউটিভ কার্স্টেন স্পোর জানান, ঘটনার দিন খুব ভাল ভাবেই ওই পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন লুবিৎজ। তিনি বলেন, “ও দিন ওঁর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা ধরা পড়েনি। উড়ানের আগে ওঁকে ১০০ শতাংশ সুস্থ বলে জানিয়েওছিলেন চিকিৎসকরা।”

তবে লুবিৎজের জীবনের একটা ইতিহাসের কথা জানিয়েছেন স্পোর। ছ’বছর আগে, ২০০৯ সালে এক বার হঠাৎই প্রশিক্ষণের মাঝপথে দীর্ঘ ছুটিতে চলে গিয়েছিলেন লুবিৎজ। বেশ কয়েক মাস নিজের কাজকর্ম থেকে দূরে সরে ছিলেন। এর পর প্রশিক্ষণ শেষ করে ২০১৩ সালে এয়ারবাস এ-৩২০ চালানোর অনুমতি পান তিনি। তবে লুবিৎজ কেন হঠাৎ অজ্ঞাতবাসে চলে গিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে কিছুই আলোকপাত করতে পারেননি স্পোর।

এ দিন জার্মানির একটি সংবাদপত্রে দাবি করা হয়েছে, সামনের বছর বিয়ের কথা ছিল লুবিৎজের। কিন্তু সম্প্রতি প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরে। বিয়েও সম্ভবত ভেঙে গিয়েছিল। বিচ্ছেদটাকে মেনে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।

তবে লুবিৎজকে বাইরে থেকে দেখে এ সব কিছুই বোঝার উপায় ছিল না। ওই কো-পাইলটের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, সকলেই কমবেশি পছন্দ করতেন ২৮ বছরের ছেলেটিকে। শরীরচর্চা নিয়ে তাঁর মারাত্মক পাগলামি ছিল। পশ্চিম জার্মানির মোন্টাবাউয়ারের বেশ অভিজাত পাড়ায় মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন তিনি। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে সহজ-সরল স্বভাবের ছেলেটি যে ভিতরে ভিতরে অবসাদে ভুগছিলেন, কেউ টেরই পাননি কোনও দিন।


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

দিন যত এগোচ্ছে লুবিৎজ সম্পর্কে এমনই সব তথ্য বেরিয়ে আসছে। যা দেখেশুনে স্তম্ভিত তাঁর সহকর্মীরাও।

এই পরিস্থিতিতে এয়ার কানাডা, ইজিজেট, নরওয়েজিয়ান এয়ার শাটল-এর মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা নিরাপত্তা-সংক্রান্ত নতুন নিয়ম আনার কথা ভাবছে।

ঘটনার দিন পাইলট এস প্যাট্রিক ককপিট থেকে বেরোনোর পর লুবিৎজ একাই ছিলেন। আর সেই সুযোগটাকে হাতিয়ার করেই তিনি ভিতর থেকে ককপিটের দরজা লক করে দিয়ে মরণঝাঁপ দিয়েছিলেন আল্পসে। তদন্তে এই সব তথ্য জানার পর উড়ান সংস্থাগুলি ভাবছে, এ বার থেকে ককপিটের ভিতর সর্বদা দু’জন বিমানকর্মী হাজির থাকবেন।

জার্মান বিমান সংস্থাগুলি এক জোটে জানিয়েছে, তারাও এ রকমই কিছু সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর কথা ভাবছে। চিন তো ইতিমধ্যেই তার বিমান সংস্থাগুলিকে এই ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে।

যদিও জার্মানউইঙ্গসের প্রধান টমাস উইঙ্কলমানের প্রশ্ন, এমন কোনও ব্যবস্থা থাকলেও কি মঙ্গলবারের ঘটনাটা আদৌ আটকানো যেত?

টমাস বলেছেন, “মনের মধ্যে শুধুই ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশ্নটা। যদি কোনও ব্যক্তি অপরাধমূলক কাজ করবার জন্য এতটা মরিয়া হয়ে ওঠে, ককপিটে কেউ থাকলে কি তাঁকে আটকাতে পারতেন?”

উত্তর খুঁজছেন টমাস।

হয়তো বাকি ১৪৯ জন যাত্রীর পরিবারও।

Germanwings Germanwings crash A320 French Alps German media co-pilot Andrease Lubitz
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy