বছর শেষ হতে চলল। কিন্তু পাল্টাল না এ দেশে বন্দুক-হিংসার ভয়াবহ চিত্র। সমাজকর্মীদের আশঙ্কা, ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হতে পারে। কারণ ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, ‘‘বন্দুক-মালিকদের আমিই সব থেকে বড় বন্ধু।’’
সমীক্ষা অনুযায়ী, আমেরিকায় প্রতিদিন গড়ে ১২৫ জন বন্দুকজনিত হিংসায় নিহত হন। দিন কয়েক আগেই নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার একটি প্রাথমিক স্কুলে ঢুকে গুলি চালিয়েছে আততায়ী। গুরুতর জখম ছ’বছর বয়সি দু’টি বাচ্চা। প্রাণে বেঁচে গেলেও একটি শিশুর দু’টি পা-ই অচল হয়ে গিয়েছে।
প্রতিদিন দেশের কোনও না কোনও প্রান্ত থেকে এ রকম খবর আসছে। এই বছর এ দেশে ২৯ হাজারেরও বেশি মানুষ বন্দুক-হিংসায় নিহত হয়েছেন। তাতে কি বন্দুকজনিত আইন বা শক্তিশালী আগ্নেয়াস্ত্র লবির প্রভাবের কোনও পরিবর্তন হবে? সমাজকর্মীরা বলছেন, বিন্দুমাত্রও নয়।
তবু সাধারণ মানুষকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। নিহতদের স্মরণে রাখতে হয় নানা ভাবে। সেই উদ্দেশ্যে ‘গান ভায়োলেন্স মেমোরিয়াল প্রজেক্ট’ একটি ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী শুরু করেছে বস্টনের সিটি হল থেকে। চারটি বাড়ি তৈরি হয়েছে ইট দিয়ে। বাড়িগুলিতে আছে আগ্নেয়াস্ত্রের বলি মানুষদের ব্যবহৃত জিনিস। এই প্রজেক্টটি নিছক একটি ‘আর্টওয়ার্ক’ নয়, যে মানুষগুলো সম্পূর্ণ বিনা কারণে হিংসার বলি হয়ে রাতারাতি চলে গিয়েছে পৃথিবী ছেড়ে, তাদের প্রিয় টুপি, জ্যাকেট বা বেসবল থেকে গিয়েছে। এই জিনিসগুলি সংগ্রহ করা হয়েছে সমস্ত দেশ ঘুরে নিহতদের পরিবারের থেকে।
এই স্মৃতিসৌধের অন্যতম স্রষ্টা এমাজির কথায়, এই বাড়িগুলিতে এলে আপনার মনে হবে, নিহতদের পরিবার যেন বলছে— ‘‘এসো আমাদের বাড়ি। দেখে যাও, কী ভাবে ছিল আমার সন্তান।’’ ২০০৭ সালে ভার্জিনিয়া টেকে এক বন্দুকহামলা ৩২ জন ছাত্র আর শিক্ষকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। সে দিন একমাত্র ছেলে রসকে হারিয়েছিলেন লিনেট আলম্যাডেন। তিনি জানান, রস তার কম্পিউটার নিয়েই থাকত বেশির ভাগ সময়ে, তাই ওই কম্পিউটারটিই স্মৃতিসৌধে দিয়েছেন তিনি। রসের কম্পিউটারের মাউসের পাশে আছে ব্রিসেল জোনসের প্রিয় পারফিউমের শিশি। কেউ দিয়েছেন ছেলের লাইব্রেরি কার্ড, কেউ বা সন্তানের প্রিয় বড়দিনের টুপি। নিহতেরা তো কথা বলতে পারে না। কিন্তু তারা যে শুধু খবরে বেরোনো একটি সংখ্যা নয়, সেটাই মনের করিয়ে দিচ্ছে এই প্রদর্শনী।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)