সত্যিটা শেষমেশ কবুল করে ফেললেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ।
জানালেন, নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তানে ‘হিরো’র মর্যাদা পেত লশ্কর-ই-তৈবার মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের দুই নেতা হাফিজ সইদ আর জাকিউর রেহমান লকভি। কাশ্মীরে ভারত-বিরোধী যাবতীয় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালানোর জন্য লশ্কর-সহ ১১/১২টি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে নিয়মিত মদত দিয়ে যেত ইসলামাবাদ। পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হত লশ্কর জঙ্গিদের।
শুধুই লশ্কর জঙ্গি নয়, পাকিস্তানের প্রাক্তন সেনাপ্রধান মুশারফ এ-ও জানিয়েছেন, ওই সময় ইসলামাবাদে ‘বীরে’র মর্যাদা দেওয়া হত আল-কায়েদা সুপ্রিমো ওসামা বিন লাদেন, অন্যতম নেতা জাওয়াহিরি, হাক্কানি আর তালিবানদের। আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সেনা হটাতে তালিবান জঙ্গিদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হত ইসলামাবাদে।
২৫/৩০ বছর আগে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামাবাদ কী ভাবে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে গোপনে মদত দিত, রবিবার একটি পাকিস্তানি টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তার অনেকটাই কবুল করেছেন প্রাক্তন পাক সেনাপ্রধান।
মুশারফ বলেছেন, ‘‘নব্বইয়ের দশকে নতুন করে আজাদির লড়াই শুরু হয় কাশ্মীরে। ওই সময়েই লশ্করের মতো আরও ১১/১২টি জঙ্গি সংগঠনের জন্ম হয় কাশ্মীরে। আজাদির জন্য তারা লড়ছিল বলে আমরা সেই সময় তাদের মদত দিতাম। ওই সংগঠনগুলির জঙ্গিদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিতাম।’’
যদিও কূটনীতিকদের বক্তব্য, মুশারফ এখনও সত্যিটা পুরোপুরি স্বীকার করেননি। অর্ধ সত্য বলেছেন।
এর কারণ, ২৬/১১-র মুম্বই হামলার ঘটনার আট বছর পরেও ওই ঘটনার দুই মূল চক্রী হাফিজ সইদ আর জাকিউর লকভির বিরুদ্ধে এখনও তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি পাক প্রশাসনকে। ওই জঙ্গি হামলায় ১৬৬ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। সইদ এখনও পাকিস্তানে বুক ফুলিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভারত-বিরোধী মন্তব্যও করে চলেছে আকছার। আর ওই হামলা চালানো ও তার ছক কষার জন্য লকভি-সহ সাত জনের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেও পাক আদালত লকভিকে জামিন দিতে দেরি করেনি।
সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সরাসরি তার কোনও জবাব দেননি ঠিকই। তবে সন্ত্রাসবাদীদের ওই মদত দেওয়াটাই যে এখন ‘ব্যুমেরাং’ হয়ে ফিরছে ইসলামাবাদে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট।
মুশারফের কথায়, ‘‘কাশ্মীরে আজাদির লড়াইয়ের সময় সইদ, লকভিরা আমাদের দেশে ‘হিরো’র মর্যাদা পেত। সেটা কিন্তু ছিল ধর্মীয় জঙ্গিপনা। যা ইসলামাবাদই শুরু করেছিল। পরে সেটা সন্ত্রাসবাদে আমূল বদলে যায়। এখন ওই জঙ্গিরাই পাকিস্তানে নিজেদের লোক মারছে। পাকিস্তানের মধ্যেই নানা ধরনের নাশকতামূলক কার্যকলাপে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে। এর রাশ টানা দরকার। অবিলম্বে।’’
প্রশ্ন করা হয়েছিল, সইদ, লকভিরও কি রাশ টানার দরকার নেই?
কুশলী মুশারফ অবশ্য সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে চাননি। বলেছেন, ‘‘মন্তব্য করব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy