Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ওয়েস্টমিনস্টারে হকিংয়ের সমাধি কেন, প্রশ্ন

সেই স্টিফেন হকিং-এর চিতাভস্ম ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রাখার সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠছে অনেকেরই মনে।

স্টিফেন হকিং। —ফাইল চিত্র।

স্টিফেন হকিং। —ফাইল চিত্র।

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৮ ০২:৪২
Share: Save:

ঘোষিত নাস্তিক ছিলেন তিনি। বলতেন, মৃত্যুকে যারা ভয় পায়, তারাই ‘মৃত্যুর পরের জীবন’ নিয়ে আজগুবি গল্প বানায়। অন্ত্যেষ্টি-ক্রিয়া নিয়ে কখনও কিছু বলেননি। শুধু চেয়েছিলেন, তাঁর সমাধি-ফলকে লেখা থাকবে তাঁরই বিখ্যাত সমীকরণ। সেই স্টিফেন হকিং-এর চিতাভস্ম ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রাখার সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠছে অনেকেরই মনে।

গত কাল বিজ্ঞানীর পরিবারসূত্রে জানানো হয়েছিল, ৩১ মার্চ, ইস্টার শনিবারের বিশেষ দিনে, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেট সেন্ট মেরিজ গির্জায় অধ্যাপকের শেষকৃত্য হবে। যে গনভিল ও কিইস কলেজের সঙ্গে ৫২ বছর যুক্ত ছিলেন হকিং, তারই অদূরে এই গির্জা। তার পর তাঁর চিতাভস্ম রাখা হবে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে। আইজাক নিউটন এবং চার্লস ডারউইনের সমাধিও রয়েছে লন্ডনের এই অ্যাবেতে। কিন্তু চার্চ অব ইংল্যান্ডের প্রধান গির্জায় হকিংয়ের সমাধি কেন? ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবের ডিন রেভারেন্ড জন হলের কথায়, ‘‘হকিংয়ের কাজের জন্যই এই সম্মান। তিনি নাস্তিক ছিলেন কি না, এটা বিবেচ্য বিষয় নয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এটাই তো প্রত্যাশিত যে, মৃত্যুর পরে নিউটন বা ডারউইনের মতো মহান বিজ্ঞানীদের পাশেই হকিংয়ের স্থান হবে।

তবে এ কথাও ঠিক যে ঘোষিত নাস্তিক হলেও, ‘ঈশ্বর’কে কখনও অচ্ছুত করে রাখেননি হকিং। তাঁর ১৯৮৮ সালের দুনিয়াকাঁপানো ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’-এ হকিং লিখেছিলেন, ‘‘বিজ্ঞানীরা যদি মহাবিশ্বের সমস্ত বস্তু ও শক্তিকে ব্যাখ্যা করার মতো উপযুক্ত কোনও সমীকরণগুচ্ছ তৈরি করতে পারেন, তা হলে সেটাই হবে মানব-মননের চূড়ান্ত জয়। তখন আমরা ঈশ্বরের চিন্তাধারাও বুঝতে পারব।’’ ঈশ্বরের চিন্তাধারা? তা হলে তাঁর মনের কোণেও কি ঈশ্বরচেতনা ছিল? এই প্রশ্নের মুখে পড়ে হকিং স্পষ্ট বলেছিলেন, সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার তত্ত্বে তিনি বিশ্বাস করেন না। তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা বলতেই পারেন যে, পদার্থবিদ্যার নীতিই ঈশ্বরের কার্যকলাপ। কিন্তু ঈশ্বর কী, এ তো তার ব্যাখ্যা মাত্র। ঈশ্বর যে সত্যিই আছেন, তার সপক্ষে প্রমাণ নয়।’’

ধার্মিক না-হলেও ধর্ম নিয়ে যে তাঁর বিশেষ ছুঁতমার্গও নেই, তা বেশ বোঝা গিয়েছিল ২০০৮-এ। তৎকালীন পোপ বেনেডিক্ট ভ্যাটিকানে এক দল বিজ্ঞানীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক হকিংও। আরও আট বছর পরে, ২০১৬-তে ভ্যাটিকানে হকিংকে ফের আমন্ত্রণ জানান বর্তমান পোপ ফ্রান্সিস। হকিংয়ের সঙ্গে এই মোলাকাতকে ‘ধর্মের বিজ্ঞানকে বোঝার চেষ্টা’ হিসেবেই ব্যাখ্যা করেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস।

সেই বোঝার তাগিদ থেকেই হয়তো ওয়েস্টমিনস্টারে হকিংয়ের সমাধি গড়ার সিদ্ধান্ত। ধর্মের কাছে মাথা নোয়াননি যে বিজ্ঞানী, তাঁকে ধর্মের কুর্নিশ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE