Advertisement
E-Paper

ভোট বৈতরণী পার হতে হিলারির অস্ত্র মা

মেরে পাস মা হ্যায়! একটু ভুল বলা হল। মা নয়, মায়ের স্মৃতি। আর সেই স্মৃতিটুকু হাতিয়ার করেই এ বার বিশ্বের সব চেয়ে শক্তিশালী মসনদ দখলের লড়াইয়ে নামছেন হিলারি রডহ্যাম ক্লিন্টন।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৫ ১০:৩৩
২০০৭-এর ডিসেম্বরে নির্বাচনী প্রচারে মেয়ের পাশে মা। ছবি: রয়টার্স।

২০০৭-এর ডিসেম্বরে নির্বাচনী প্রচারে মেয়ের পাশে মা। ছবি: রয়টার্স।

মেরে পাস মা হ্যায়!

একটু ভুল বলা হল। মা নয়, মায়ের স্মৃতি। আর সেই স্মৃতিটুকু হাতিয়ার করেই এ বার বিশ্বের সব চেয়ে শক্তিশালী মসনদ দখলের লড়াইয়ে নামছেন হিলারি রডহ্যাম ক্লিন্টন।

হিলারি আর তাঁর মা ডরোথি হাওয়েল। দু’জনের জীবন-কাহিনিতে আসমান-জমি ফারাক। স্বাচ্ছন্দ ও সাফল্যে মোড়া হিলারির জীবন। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় চোস্ত ছিলেন। একের পর এক স্কলারশিপ পেয়ে নামজাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়েছেন। হিলারির বাবা ছিলেন এক সফল ব্যবসায়ী। তিনিও হিলারির প্রতিটি পদক্ষেপে মেয়েকে সমর্থন জুগিয়ে গিয়েছেন। হিলারিকে বলেছেন, ‘‘তুমি মেয়ে বলে থেমে থেকো না। এগিয়ে চলো। আকাশ ছুঁতে হবে।’’ তার পর একে একে ইয়েল ল কলেজ থেকে আইন পাশ, বিল ক্লিন্টনের সঙ্গে বিয়ে, আট বছরের জন্য আমেরিকার ফার্স্ট লেডি, দাম্পত্য ঝড়-ঝাপ্টা কাটিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ানো, প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে বারাক ওবামার কাছে হেরে গেলেও তাঁর ক্যাবিনেটে চার বছর বিদেশসচিব হয়ে থাকা যাওয়া। হিলারির এই নজরকাড়া জীবনে উজ্জ্বল উপস্থিতি তাঁর মা ডরোথির। যে ডরোথির জীবনের অনেকটাই কিন্তু তিক্ততায় মোড়া।

ডরোথি হাওয়েলের বয়স তখন সবে আট। মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পরে ঠাকুরদা-ঠাকুমার সঙ্গে থাকতেন ডরোথি ও তাঁর বোন। কষ্টের সেই শুরু। সকালে এক গ্লাস দুধ তো দূরের কথা, সারা দিন ঠিক মতো খাবারই জুটত না দুই বোনের। কয়েক দিন বাদে ডরোথিদের স্কুলে যাওয়াও বন্ধ করে দেন তাঁদের অত্যন্ত রক্ষণশীল ঠাকুর্দা। নিজের চেষ্টায় আর এক সহৃদয় শিক্ষকের সাহায্যে কোনও রকমে স্কুলে গণ্ডি পার করতে পেরেছিলেন ডরোথি।

শেষ পর্যন্ত অতিষ্ঠ হয়ে ঠাকুর্দার বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন ডরোথি। সপ্তাহে তিন ডলার পারিশ্রমিকে পরিচারিকার কাজ করতেন। শিকাগোয় ফিরে মায়ের সঙ্গে ফের থাকতে চাইতেন তিনি। কলেজে ভর্তি করার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে শিকাগোয় ডেকে পাঠান মা। কিন্তু কলেজে পাঠানো তো দূরের কথা, মা-ও তাঁকে ব্যবহার করতেন ঘরের কাজকর্ম সামলাতে। পরে একটা কেরানির চাকরি জুটিয়ে নিয়েছিলেন ডরোথি।

মায়ের এই জীবনসংগ্রামের কাহিনিই এ বার ভোটারদের সামনে তুলে ধরতে চান হিলারি। কিন্তু কেন?

হিলারির ঘনিষ্ঠ শিবির জানাচ্ছে, হোয়াইট হাউসে একটি আদর্শ পরিবারকে দেখতে চায় মার্কিন আমজনতা। মধ্যবিত্ত স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছিলেন বারাক ওবামা। কিন্তু প্রতিপত্তি ও সম্পদের নিরিখে এখন আমেরিকার প্রথম সারির পরিবারগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্লিন্টনদের নাম। বিল ক্লিন্টনের বিপুল তহবিল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবার তাঁদের মেয়ে চেলসির ব্যবসা বাড়ানোয় বিল-হিলারির প্রতিপত্তি ব্যবহার করা হয়েছে কি না, সেই নিয়েও নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে।

এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মার্কিনদের কাছে পৌঁছতে তাঁর মায়ের কাহিনিই সাহায্য করতে পারে বলে মনে করছেন হিলারি। আজ তাঁর প্রচারের প্রথম দিন থেকেই ‘সাধারণ মানুষ’ ডরোথির গল্প শুনিয়ে তিনি ভোটদাতাদের বোঝাতে চান, সম্পদ-প্রতিপত্তির কোনও গজদন্ত মিনারে বাস করে না ক্লিন্টন পরিবার। তাঁরা সাধারণ মানুষের কাছের লোক। লড়াই করেই এগিয়েছেন তাঁরা।

মায়ের সঙ্গে বরাবরই অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হিলারির। কিন্তু ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারের সময়ে মায়ের কাহিনি প্রচার করতে রাজি হননি তিনি। আইওয়া প্রদেশের প্রাইমারির সময়ে তাঁর নির্বাচনী টিম ডরোথির কথা ব্যবহার করে সুফল পেয়েছিল। কিন্তু হিলারির আপত্তিতে সেই পথে আর এগোননি তাঁর প্রচার সচিবেরা। আসলে বরাবরই ব্যক্তিগত জীবনকে রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে রাখতে চেয়েছেন হিলারি। ১৯৯২ সালে বিল ক্লিন্টন যখন প্রথম বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ছেন, তখন প্রচারের জন্য মেয়ে চেলসিকে নিয়ে পারিবারিক ভিডিও তৈরি করায় আপত্তি জানিয়েছিলেন হিলারি।

পরিবারই যে শেষ কথা, তা তাঁর প্রতিটি রাজনৈতিক পদক্ষেপেই স্পষ্ট করে দেন হিলারি। তাই মনিকা-বিলকে নিয়ে কেচ্ছাতে যখন সারা বিশ্ব তোলপাড়, হিলারি নীরবে তাঁর স্বামীর পাশের থেকে তাঁকে সমর্থন জুগিয়ে গিয়েছেন। সে সময়েও হিলারির পাশে ছিলেন ডরোথি। বিলকে ভর্ৎসনা করে তখনই হিলারিকে নিজের রাজনৈতিক জীবন তৈরি করতে উৎসাহ দেন তিনি। মায়ের কথাতেই হিলারি প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে নেমেছিলেন।

ক্লিন্টনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল ডরোথির। বিল ক্লিন্টন যখন আরকানসের গর্ভনর, তখন হিলারি ব্যস্ত আইনজীবী। তখন ছোট্ট চেলসির দায়িত্ব নেন ডরোথি। বিল প্রেসিডেন্ট হলে হোয়াইট হাউসে ক্লিন্টন দম্পতির সংসারও সামলান তিনি। হিলারি ও চেলসির সঙ্গে ভারত, চিন, ফ্রান্স ও হাওয়াই সফরে গেলেও প্রচারের আলো থেকে দূরেই থেকেছেন।

২০০৮-এ ডেমোক্র্যাটদের ঘরে লড়াইয়ে বারাক ওবামার কাছে হেরে গিয়ে দেশের প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়ে ওঠা হয়নি হিলারির। তার বছর চারেক পরে চলে গিয়েছেন ডরোথি। পরিবারকে প্রচারের আলো থেকে দূরে রাখার ছুঁৎমার্গ থেকেও বোধ হয় কিছুটা সরে এসেছেন প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি। এখন ‘সাধারণ’ মায়ের ‘সাধারণ’ গল্প বলে ভোটারদের মন জয় করাই লক্ষ্য তাঁর।

কাচের ছাদ ছোঁয়ার অনন্যসাধারণ কাজটা যে তাঁকে এ বারেই সেরে ফেলতে হবে!

Hillary Clinton America election mother voter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy