‘বিষাক্ত ছত্রাক’ দিয়ে আমেরিকার কৃষিব্যবস্থা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দুই চিনা নাগরিক তথা গবেষককে গ্রেফতার করেছে আমেরিকা। ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন বা এফবিআই জানিয়েছে, এঁদের মধ্যে এক জন চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। ৩৩ বছরের ইউনকিং জিয়ান এবং ৩৪ বছরের জ়ুনিয়ং লিউওয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, পাচার, ভুয়ো তথ্যপ্রদান এবং ভুয়ো ভিসা ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে আমেরিকা। জিয়ান এখন আমেরিকার হেফাজতে। লিউওয়ের গ্রেফতারি নিয়ে নির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি। তবে আমেরিকার বিচার বিভাগের দাবি, দুই চিনা নাগরিক ‘ফুসারিয়াম গ্রামিনিয়ারাম’ নামে একটি বিপজ্জনক প্যাথোজেন নিয়ে আমেরিকায় ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল ‘কৃষি-সন্ত্রাস’-এর। ঠিক কতটা ক্ষতিকর ওই ছত্রাক?
গবেষকরা জানাচ্ছেন, ফুসারিয়াম গ্রামিনিয়ারাম যে বিপজ্জনক ছত্রাক উদ্ধার হয়েছে বলে আমেরিকা যে দাবি করেছে, তার কুপ্রভাব মারাত্মক। এর প্রয়োগে ধান, গম, বার্লি, ভুট্টা ইত্যাদি ফসলে ‘হেড ব্লাইট’ হয়। তাতে শস্যের বীজ বা শস্যের মুকুল কিংবা গোড়া নষ্ট হয়ে যায়। আমেরিকার অভিযোগ, চিনা গবেষকদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ছত্রাকে যে উপাদান থাকার আশঙ্কা করা হয়েছে, তা কৃষিব্যবস্থার জন্য ভয়ঙ্কর। বস্তুত, একে কৃষির উপর সন্ত্রাসবাদী হানার চেষ্টা বলে আখ্যা দিয়েছে তারা। কোটি কোটি টাকার কৃষিসম্পত্তি ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে ওই ছত্রাকের।
শুধু শস্যই নয়, কৃষক থেকে গবাদি পশুর স্বাস্থ্যের উপরেও ফুসারিয়াম গ্রামিনিয়ারামের প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, নানা অসুখ হতে পারে ওই ছত্রাকের জন্য। বমির মতো উপসর্গ দিয়ে শুরু। ফুসারিয়াম গ্রামিনিয়ারিমের প্রভাবে যকৃৎ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ওই ছত্রাক সংক্রমিত শস্য দিয়ে যে খাবারই রান্না করা হোক না কেন, তা বিষাক্ত। এমনকি, প্রজনন ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এফবিআই দাবি করেছে, তারা চিনা গবেষক লিউয়ের ফোন ঘেঁটে একটি প্রতিবেদনের লিঙ্ক পেয়েছে। যার শিরোনাম, ‘প্ল্যান্ট-প্যাথোজ়েন ওয়ারফেয়ার আন্ডার ক্লাইমেট কন্ডিশন্স।’ অভিযোগ, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইউনকিং অবৈধ ভাবে ওই ছত্রাক নিয়ে গবেষণা করেছেন। এ বিষয়ে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করছে তারা।
আরও পড়ুন:
কোনও দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে অনেক সময় ‘টার্গেট’ করে থাকে শত্রুদেশ। এর মূল কারণ হল, ওই আক্রমণ শনাক্ত করা কঠিন। আর বিষাক্ত খাদ্যবস্তুকে সহজেই অস্ত্রে পরিণত করতে পারে তারা। ‘কৃষি-সন্ত্রাস’কে বলা হয় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার অন্যতম উপায়। ২০১৬ সালে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) একটি রিপোর্টে জানায়, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে একটি বিষাক্ত ছত্রাক পাওয়া গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের দু’টি জেলায়। পরে কেন্দ্রীয় সরকার পদক্ষেপ করে। ওই দুই জেলায় তিন বছরের জন্য গম চাষ নিষিদ্ধ করা হয়। তা ছাড়া, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলির আন্তর্জাতিক সীমান্তের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে চাষবাস নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। একই ভাবে ২০১৫ সালে পাকিস্তানে তুলোচাষে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল। সে বার দক্ষিণ পঞ্জাবে এক প্রকারের মাছির উপদ্রব দেখা দিয়েছিল। চাষবাসে প্রচুর আর্থিক লোকসান হয় পাকিস্তানে। অন্তত ১৫ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছিলেন সে বার।