কী ভাবে রুশ ভূখণ্ডের মধ্যে ঢুকে একের পর এক সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইউক্রেন ড্রোন? কী ভাবে ধ্বংস হয় রুশ বিমানঘাঁটির ৪১টি সামরিক বিমান? ইউক্রেনের ধ্বংসলীলা চালানোর উপগ্রহচিত্র (স্যাটেলাইট ছবি) প্রকাশ্যে! শুধু তা-ই নয়, রাশিয়া কী ভাবে প্রতিরোধের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে, তা-ও প্রকাশ্যে।
গত রবিবার দুপুরে রুশ ভূখণ্ডের কয়েক হাজার কিলোমিটার অভ্যন্তরে ঢুকে একের পর এক বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ‘নিখুঁত’ ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেনের ড্রোন। ‘মাকড়সার জাল’-এর মতো আক্রমণের ছক কষেছিল ইউক্রেনীয় সেনা। অভিযানের নামও সেই মতোই রেখেছিলেন ভলোদিমির জ়েলেনস্কি, ‘মাকড়সার জাল’! ১১৭টি ড্রোন তছনছ করে দেয় রাশিয়ার পাঁচটি বিমানঘাঁটি। ইরকুটস্কের বেলায়া বিমানঘাঁটি, যা সীমান্ত থেকে সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এ ছাড়াও ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালায় রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে সুমেরুবৃত্তের কাছে অবস্থিত মুরমানস্কের ওলেনিয়া বিমানঘাঁটিতে, ইউক্রেন থেকে যার দূরত্ব প্রায় ২০০০ কিলোমিটার। তালিকায় রয়েছে মস্কোর অদূরে অবস্থিত ইভানোভো এবং রিয়াজ়ানের দিয়াগিলেভো বিমানঘাঁটি, ইউক্রেন থেকে দূরত্ব যথাক্রমে ৮০০ ও ৫২০ কিলোমিটার। শুধু তা-ই নয়, রাশিয়ার পূর্ব প্রান্তের এক বিমানঘাঁটিতেও হামলা চালায় ইউক্রেন।
‘ক্যাপেলা স্পেস’, এই স্যাটেলাইট কোম্পানিটি ইউক্রেন হামলার পরের ধ্বংসের ছবি ‘রয়টার্স’-এর সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে। বেলায়া বিমানঘাঁটির একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বেশ কয়েকটি বিমানের ধ্বংসাবশেষ! দাবি করা হয়েছে, ওই ছবি তোলা হয়, রবিবার ইউক্রেন হামলার ঠিক পরেই। ওই বিমানঘাঁটিতেই রাখা ছিল রাশিয়ার বোমারু বিমান— দুই টিইউ-৯৫ এবং টিইউ-২২। সাধারণত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার জন্য এই বিমানগুলি যুদ্ধে ব্যবহার করা হত। ইউক্রেন ড্রোন ওই বিমানগুলিকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে উপগ্রহচিত্রে। ‘ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স’-এর বিশ্লেষক ব্র্যাডি আফ্রিকও এই দুই বোমারু বিমান ধ্বংসের ব্যাপারে সহমত পোষণ করেছেন। তবে তিনি এ-ও মনে করেন, ‘‘ক্ষতির পরিমাণ সঠিক ভাবে মূল্যায়ন করার জন্য আরও কিছু ছবির প্রয়োজন। যদিও এটা স্পষ্ট যে ওই বিমানঘাঁটিতে সফল আক্রমণ চালানো হয়েছিল।’’
আরও পড়ুন:
ইভানোভো বিমানঘাঁটির উপগ্রহচিত্রও প্রকাশ্যে এসেছে। এই বিমানঘাঁটিতে রাখা ছিল রাশিয়ার উন্নত এ-৫০ এডব্লিউএসিএস। এই বিমান সাধারণত সেনাবাহিনীকে শত্রুবিমান সম্পর্কে আগাম তথ্য দেয়। যে কোনও সামরিক বাহিনীর কাছে এই বিমানগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে গত তিন বছর ধরে ইউক্রেনের সঙ্গে চলা যুদ্ধে রাশিয়া বেশ কয়েকটি এই ধরনের বিমান হারিয়েছে। অবশিষ্ট কয়েকটির মধ্যে রবিবার ইভানোভো বিমানঘাঁটির এ-৫০ এডব্লিউএসিএস বিমান ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে বলে দাবি। ইউক্রেনের মতে, এই ক্ষতি রাশিয়ার বিমানবাহিনীর কাছে অত্যন্ত চিন্তার কারণ।
উপগ্রহচিত্রে রিয়াজ়ানের দিয়াগিলেভো বিমানঘাঁটি ধ্বংসপ্রাপ্ত বেশ কয়েকটি যুদ্ধ ট্যাঙ্কার দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়াও রাশিয়ার পূর্ব প্রান্তের ইউক্রেইঙ্কার বিমানঘাঁটিতে থাকা টিইউ-৯৫ ধ্বংস হয়েছে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। জ়েলেনস্কি জানিয়েছিলেন, এক বছর ছ’মাস আগে এই হামলায় অনুমোদন দিয়েছিলেন তিনি। তার পর থেকে দেড় বছর ধরে প্রস্তুতি চলেছে। এত দিনে তা বাস্তবায়িত হয়েছে। রাশিয়ার বিমান বহরে বড়সড় হামলার পরেও তাদের বিমানবাহিনীর আক্রমণের তেজ কমেনি। তবে রবিবারের হামলার পরে মনোবল বেড়েছে ইউক্রেনের। মঙ্গলবার তারা আবার ক্রাইমিয়া এবং রাশিয়ার সংযোগকারী সেতুতে আঘাত হানে।