Advertisement
E-Paper

হল যে দিন ফাঁকা পাওয়া যাবে, পুজো হবে সে দিনই

প্রয়তি দত্ত

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৫৯
ঠাকুরের একদম কাছে দাঁড়িয়ে অঞ্জলি দেওয়ার অনুভূতিটাই আলাদা।

ঠাকুরের একদম কাছে দাঁড়িয়ে অঞ্জলি দেওয়ার অনুভূতিটাই আলাদা। ফাইল চিত্র।

গত বছর প্রথম বার কলকাতা থেকে বহু দূরে, ভার্জিনিয়ার ছোট একটা শহর ব্ল্যাক্সবার্গে আমার দুর্গাপুজো কাটে। মনটা খারাপই ছিল। কারণ, ছিল না পুজো-স্পেশাল অনেক কিছুই। শিউলি ফুলের গন্ধ, শুয়ে শুয়ে মহালয়া শোনা বা ঢাকের আওয়াজ— সবই হাতের নাগালের বাইরে। এই প্রথম ছিল না মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের সঙ্গে প্যান্ডেল হপিং। তবে সমস্ত না পাওয়া একটা দিনের জন্য ভুলিয়ে দিয়েছিল সামান্য আয়োজনে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বেঙ্গলি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পুজো।

ছোট্ট এই শহরে হাতেগোনা ক’টা বাঙালি পরিবার আর ছাত্রছাত্রীরা মিলে পাঁচ দিন ধরে পুজো করতে পারেন না। তাই পুজোর আগে বা পরে যবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব থেকে বড় হলটা পুরো একটা দিনের জন্য ফাঁকা পাওয়া যায়, আমাদের জন্য দুর্গা পুজোর দিন সেটাই।

আমাদের কাচে বাঁধানো একচালার শোলার প্রতিমা। পুজোর আগের রাতে সবাই কাজের জায়গা থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরেও মনের আনন্দে মায়ের আবাহনের প্রস্তুতিতে লেগে পড়েন। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে সমস্ত কাজ সেরে পরের দিন সকাল ৯টায় আবার সবাই শাড়ি বা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে হাজির পুজোর কাজে হাত লাগাতে। পুজো শুরুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত সে এক হন্তদন্ত ব্যাপার! ফল কাটতে গিয়ে দেখা গেল, কারও কাছে ছুরি আছে তো চপিং বোর্ড নেই। কারও আবার উল্টো।

মহিলা পুরোহিত ছিল গত বারের পুজোয় নজরকাড়া ব্যাপার। আমাদেরই এক সিনিয়র দিদি। মন্ত্র পড়া হচ্ছিল মোবাইলে পিডিএফ দেখে, যাতে জরুরি মন্ত্রগুলো হাইলাইট করা। পুজো শেষে পরিবারের সবচেয়ে খুদে সদস্য থেকে শুরু করে সবাই মিলে একসঙ্গে ঠাকুরের একদম কাছে দাঁড়িয়ে অঞ্জলি দেওয়ার অনুভূতিটাই আলাদা।

আমাদের এখানে দু’বেলাই খাওয়াদাওয়ার আয়োজন হয়। দুপুরে ঠাকুরের ভোগ খায় সবাই। রান্না করেন এখানকার বাঙালি পরিবারের সদস্যেরা। রাতের খাওয়ার আয়োজন হয় কাছের একটা ভারতীয় রেস্তরাঁ থেকে, সুস্বাদু বাঙালি ভোজ। বাঙালি পুজো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়া ভাবা যায় না। দুপুর থেকে বিকেল গড়িয়ে যায় নাচে-গানে-আবৃত্তিতে-নাটকে আর আড্ডায়।

গত বার আমার প্রথম পুজো ছিল, যার আয়োজনে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িয়ে ছিলাম। প্রত্যেক সদস্যের আন্তরিক প্রচেষ্টা দেখেছি। পুজোর শেষে সবার মুখে তৃপ্তির আনন্দও দেখেছি। হয়তো এখানে কলকাতার পুজোর মতো জাঁকজমক নেই, দিনক্ষণ মেনে পুজো করা নেই। কিন্তু বাঙালি সংস্কৃতিকে ধরে রাখার অদম্য ইচ্ছা আর শিকড়ের টানে এই পরবাসে পুজো করে চলেছেন প্রবাসী বাঙালিরা। এই দু’-এক দিনের পুজোর রেশটাই বাঙালি ধরে রাখতে চায় বছরের বাকি ক’টা দিন আর মনে মনে বলে, ‘‘মা তুমি এসো ঘরে, বারে বারে।’’

Durga Puja 2022 Virginia usa
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy