তিন পরমাণুকেন্দ্র লক্ষ্য করে আমেরিকার হামলার পর কি ‘নতিস্বীকার’ করবে ইরান? না কি প্রত্যাঘাত হিসাবে আরও বড় কোনও হামলার ছক কষতে পারে তারা? আমেরিকা, ইজ়রায়েলকে ‘জবাব’ দিতে কোন কোন পথ নিতে পারে তেহরান, তা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। প্রত্যাঘাতের অন্তত চারটি সম্ভাব্য পথ নিয়ে বিশ্ব জুড়ে চলছে চর্চা।
আমেরিকার হামলার তীব্র নিন্দা করেছে ইরান। সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বিষয়টি উল্লেখ করে জানানো হয়েছে, আমেরিকা কোনও নীতির ধার ধারে না। ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে আমেরিকা তা বুঝিয়েছে। এই হামলার নিন্দা জানানো হচ্ছে। এই গুরুতর অপরাধের পরিণতির জন্য আমেরিকাই সম্পূর্ণরূপে দায়ী! তবে মার্কিন সেনার এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পূর্ণশক্তি দিয়ে লড়াই করার ক্ষমতা রয়েছে ইরানের। নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থরক্ষার অধিকার তাদেরও রয়েছে।
ইরানের ‘পূর্ণশক্তি’ ব্যবহারের উল্লেখ কি কোনও প্রত্যাঘাতের ইঙ্গিত? পশ্চিমি দুনিয়ার আশঙ্কা, আমেরিকার হামলার পরে বেশ কিছু পদক্ষেপ করতে পারে ইরান। হয় মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘শর্ত’ মেনে আলোচনার টেবিলে বসতে পারে তারা, নয়তো পাল্টা হামলার পথ বেছে নিতে পারে! পশ্চিমি দুনিয়ার মতে, আমেরিকায় ঢুকে ইরানের সরাসরি হামলা চালানোর সম্ভাবনা কম। তবে অন্য পথে আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়ার অন্যান্য দেশকে ‘চাপে’ রাখার কৌশল নিতে পারে ইরান!
কয়েক দশক ধরে ইরান তাদের সামরিক শক্তির বহর বৃদ্ধি করে চলেছে। বহুস্তরীয় সামরিক জাল বুনছে তেহরান। মনে করা হচ্ছে, সেই সামরিক শক্তি দিয়ে পুরোদমে হামলার প্রস্তুতি নিতে পারে ইরান। তবে সেই হামলা পশ্চিম এশিয়ায় থাকা মার্কিন ঘাঁটিতে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। শুধু তা-ই নয়, বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহের পথে বড় বাধার সৃষ্টি করতে পারে ইরান। পাশাপাশি, পরমাণু কর্মসূচি আবার চালু করার কথা ভাবতে পারে তারা। উল্লেখ্য, ২০০৩ সাল থেকে তা বন্ধ রয়েছে বলে দাবি ইরানের।
হরমুজ প্রণালীতে নিশানার সম্ভাবনা
ওমান ও ইরানের মধ্যে সরু সমুদ্রপ্রণালী হল হরমুজ়। এই প্রণালী ৪০ কিমি চওড়া। যখন দুই জাহাজ পাশাপাশি যায়, তখন তাদের মধ্যে দু’কিমির ফাঁক থাকে। এই জলপথ দিয়েই বিশ্বের অধিকাংশ তেল আমদানি-রফতানি হয়। সংঘাতের আবহে ইরান হরমুজ় প্রণালীতে অবরোধ সৃষ্টি করতে পারে। তার ফলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম হু হু করে বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। ইরান তার নৌশক্তিকে ব্যবহার করে হরমুজ় প্রণালী সাময়িক আটকে রাখতে পারে বলে আশঙ্কা। পারস্য উপসাগরীয় উপকূল থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
পশ্চিম এশিয়ার মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার সম্ভাবনা
পশ্চিম এশিয়ার এই উত্তেজনাপ্রবণ এলাকায় আমেরিকার কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কুয়েতের মতো জায়গায় স্থায়ী ঘাঁটিও রয়েছে আমেরিকার। আশঙ্কা, এই সব ঘাঁটি ইরানের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে! এ ছাড়াও, পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার বন্ধু দেশগুলির তেল এবং গ্যাসভান্ডারে আক্রমণ করতে পারে ইরান।
আঞ্চলিক মিত্রদের সক্রিয় করার সম্ভাবনা
পশ্চিম এশিয়ায় ইরানের সমর্থিত বেশ কয়েকটি সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হুথি। আশঙ্কা করা হচ্ছ, লোহিত সাগরে মার্কিনঘাঁটিতে হামলা চালাতে পারে তারা। শুধু হুথি নয়, হিজ়বুল্লার মতো সংগঠনও হামলার ছক কষতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে।
আরও পড়ুন:
পরমাণু অস্ত্রভান্ডারে জোর
ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি আবার নতুন করে শুরু করতে পারে। এই কর্মসূচি নিয়েই আপত্তি আমেরিকা, ইজ়রায়েলের মতো দেশগুলি। ইরানের পরমাণুঘাঁটিগুলি গুঁড়িয়ে দিতে চায় তারা। তবে ইরানও তার প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে পারে। ইরানের অধিকাংশ পরমাণুঘাঁটিই মাটির গভীরে। সেখানেই নিজেদের পরমাণুভান্ডার আরও মজবুত করার কৌশল নিতে পারে ইরান, এমনই মনে করছেন অনেকে।