২০৪৫। হাতে আর ২০ বছর। এর মধ্যেই এশিয়ার অর্থনীতিতে রাজকীয় উত্থান ঘটতে পারে চিনের এক পড়শি দেশের। আপাতত সেই লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে তারা। অর্থনীতি ঢেলে সাজা হচ্ছে। গত কয়েক দশকে এশিয়ার বাজারে দক্ষিণ কোরিয়া বা তাইওয়ানের যে উত্থান দেখা গিয়েছে, এ ক্ষেত্রেও তেমন কিছু দেখা যেতে পারে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের। দেশটির নাম ভিয়েতনাম।
চিনের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে দক্ষিণ চিন সাগরের উপকূল বরাবর উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত ভিয়েতনাম। রাজধানী হানোইয়ে হো চি মিনের মূর্তির নীচে দাঁড়িয়ে সেখানকার কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান টো ল্যাম গত বছর ঘোষণা করেছিলেন, ভিয়েতনামের অর্থনীতিতে উন্নয়নের এক নতুন যুগ শুরু হতে চলেছে। সেটা যে নেহাত কথার কথা ছিল না, এক বছরে তা বেশ টের পাওয়া গিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। বাণিজ্য নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে যে সাময়িক মতানৈক্য তৈরি হয়েছিল, তা-ও মিটিয়ে নিয়েছে সে দেশের সরকার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে তাদের চূড়ান্ত সমঝোতা হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন:
আমেরিকার সঙ্গে ভিয়েতনামের বাণিজ্যে প্রধান যে সমস্যা দেখা দিয়েছিল, তা হল আমদানি এবং রফতানির ভারসাম্যহীনতা। ভিয়েতনাম যে পরিমাণ পণ্য আমেরিকা থেকে আমদানি করছিল, তার চেয়ে বেশি রফতানি করছিল। ফলে বাণিজ্য হয়ে পড়ছিল উদ্বৃত্ত। ট্রাম্প এতে রুষ্ট হন এবং প্রাথমিক ভাবে ভিয়েতনামের উপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দেন। তার পর দুই দেশের আধিকারিকদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক চূড়ান্ত করেছেন ট্রাম্প। একে একপ্রকার ‘জয়’ বলেই ধরে নিচ্ছেন ভিয়েতনামের নেতৃত্ব।
গত কয়েক দশকে ভিয়েতনামের মানুষ দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে সাফল্য পেয়েছেন। দেশ জুড়ে তৈরি হয়েছে উঁচু উঁচু ঝাঁ চকচকে ইমারত, রাস্তা, গগনচুম্বী সব দফতর। এই অর্থনৈতিক বিকাশের সঙ্গে কেউ কেউ চিনের উত্থানের মিল পাচ্ছেন। ভিয়েতনামে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। তার জন্য কিছুটা দায়ী অবশ্য আমেরিকা এবং চিনের বাণিজ্যিক শৈত্য। বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতি বাণিজ্য নিয়ে সমঝোতায় আসতে না-পারায় বিনিয়োগকারীরা বিকল্প হিসাবে কেউ কেউ ভিয়েতনামকে বেছে নিচ্ছেন।
অর্থনীতির সঙ্কটকালে সেমিকন্ডাক্টরকে হাতিয়ার করেছিল তাইওয়ান। দক্ষিণ কোরিয়া ভর দিয়েছিল বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতির কাঁধে। ভিয়েতনাম কোন পণ্যকে বেছে নেবে? অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বিষয়টি এখন আর অত সহজ নেই। ভিয়েতনামের অর্থনীতি এখন অনেক বেশি জটিল এবং বৈচিত্র্যময়। তাই দক্ষিণ কোরিয়া বা তাইওয়ানের মতো কোনও একটি ক্ষেত্রে ভর করে তাদের উত্থান সম্ভব নয়। ভিয়েতনাম জোর দিচ্ছে কম্পিউটার চিপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উপরে। দেশের অন্দরে পারমাণবিক কেন্দ্র এবং রেলে ঢেলে বিনিয়োগ করছে ভিয়েতনাম সরকার। এ ছাড়া, তাদের অর্থায়নের অন্যতম ভিত্তি হয়ে উঠছে দেশের অভ্যন্তরে ব্যক্তিগত উদ্যোগের ছোটবড় ব্যবসা।