E-Paper

মহামারিতে ঘরছাড়া মানুষ, বদল জিনেও

গবেষণার অন্য একটি প্রয়োজনও রয়েছে। তা হল, রোগ-জীবাণুর অতীত জেনে তার বর্তমান রূপের সঙ্গে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫ ০৮:৫৭
কোভিডের সংক্রমণ সাম্প্রতিক ঘটনা হলেও অন্য প্রাণী থেকে মানুষে রোগ সংক্রমণের ইতিহাস অনেক পুরনো।

কোভিডের সংক্রমণ সাম্প্রতিক ঘটনা হলেও অন্য প্রাণী থেকে মানুষে রোগ সংক্রমণের ইতিহাস অনেক পুরনো। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

কোভিডের সংক্রমণ সাম্প্রতিক ঘটনা হতে পারে। তবে অন্য প্রাণী থেকে মানুষে রোগ সংক্রমণের ইতিহাস অনেক পুরনো—আনুমানিক সাড়ে ছ’হাজার বছরের। আবার, এক সময়ে গোটা ইউরোপের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা উজাড় করা প্লেগের জীবাণুর হদিস পাওয়া যায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগেও। সংক্রামক রোগের ইতিহাস নিয়ে এ যাবৎ করা সব চেয়ে বড় ডিএনএ গবেষণায় মিলেছে এমনই সব চমকপ্রদ তথ্য।

‘নেচার’ জার্নালের প্রতিবেদনে প্রকাশ, গবেষণা-পর্বে প্রাগৈতিহাসিক মানুষের ১৩০০-র বেশি ডিএনএ নমুনা নিয়ে কাটাছেঁড়া চলেছে। সব চেয়ে পুরনোটি ছিল প্রায় ৩৭ হাজার বছর আগের। গবেষণায় অন্য যে সব প্রাচীন রোগের হদিস মিলেছে, তার অন্যতম—ম্যালেরিয়া (৪২০০ বছর), মৃগী (১৪০০ বছর), হেপাটাইটিস বি ভাইরাস (৯৮০০ বছর) ও ডিপথেরিয়া (১১,১০০ বছর)।

তবে রোগের ইতিহাস খোঁজা শুধু নয়, মহামারির সুদূরপ্রসারী প্রভাব বোঝারও চেষ্টা চলেছে বলে জানিয়েছেন গবেষক দলের প্রধান, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ই উইলারস্লেভ। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে অধুনা ইউক্রেন, দক্ষিণ-পশ্চিম রাশিয়া ও পশ্চিম কাজ়াখস্তান থেকে এক বিপুল জনগোষ্ঠী উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে পাড়ি জমান। প্রায় একই সময়ে ওই এলাকায় পশুবাহিত রোগের দাপটও বেড়েছিল। দু’টি ঘটনা যে কাকতালীয় নয়, তা এখন স্পষ্ট বলে মত তাঁর।

উইলারস্লেভ বলেন, “প্রাচীন মানুষের হাড়, দাঁতের মতো নমুনাগুলিই মূলত গবেষণায় পথ দেখিয়েছে। দাঁতের এনামেল অত্যন্ত কঠিন। তা হাজার বছর পরেও ডিএনএ-কে অক্ষত রাখতে পারে। আর করোটিতে সব চেয়ে কঠিন হাড় ‘পেট্রাস’ থাকে। তা থেকেও ডিএনএ নেওয়া হয়েছে।” তাঁর সংযোজন, পরিযান, পশুপালনের মতো ঘটনাগুলি যে কার্যত একের পর এক মহামারি ডেকে এনেছে, তার অনুমান ছিল। এখন তার প্রমাণ হাতে। আর মহামারি শুধু প্রাণহানি ঘটায়নি। মানুষকে ঘরছাড়া করেছে, বদল এনেছে জিনের গঠনেও।

গবেষণার অন্য একটি প্রয়োজনও রয়েছে। তা হল, রোগ-জীবাণুর অতীত জেনে তার বর্তমান রূপের সঙ্গে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া। গবেষণায় যুক্ত কোপেনহাগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্টিন সিকোরা বলেন, “কোভিড শুধু নয়, এখন অনেক সংক্রামক রোগেরই সূত্রপাত হচ্ছে পশু থেকে। রোগটি আদতে কী ভাবে এসেছে, সময়ের সঙ্গে কী ভাবে বিবর্তিত হয়েছে, তা জানা থাকলে প্রতিষেধক তৈরি সহজ হবে।”

উইলারস্লেভেরও মত, বিবর্তন অনিবার্য। কোন জীবাণু কখন, কী ভাবে বিবর্তিত হয়ে প্রাণঘাতী হয়ে উঠবে, বলা মুশকিল। তবে তার ইতিহাস জানা থাকলে প্রয়োজনীয় প্রতিষেধক তৈরি বা উপলব্ধ প্রতিষেধক কতটা কার্যকর, তার আন্দাজ পাওয়া যাবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Covid DNA

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy