Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
রক্ষীর গুলিতে হত শরণার্থী

বন্ধ হাঙ্গেরির সীমান্ত, জারি উদ্বাস্তু-সঙ্কট

ফের শরণার্থী-সঙ্কটে উত্তপ্ত ইউরোপের রাজনীতি। মানুষের ঢল ঠেকাতে রাতারাতি হাঙ্গেরি সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে পশ্চিম এশিয়া থেকে ইউরোপে আশ্রয়ের খোঁজে আসা মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সব মিলিয়ে কপালে ভাঁজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের!

সংবাদ সংস্থা
ব্রাসেলস শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৪২
Share: Save:

ফের শরণার্থী-সঙ্কটে উত্তপ্ত ইউরোপের রাজনীতি। মানুষের ঢল ঠেকাতে রাতারাতি হাঙ্গেরি সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে পশ্চিম এশিয়া থেকে ইউরোপে আশ্রয়ের খোঁজে আসা মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সব মিলিয়ে কপালে ভাঁজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের!

গত বৃহস্পতিবার রাতে বুলগেরিয়ার সীমান্তে নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে নিহত হন বছর পঁচিশের এক অজ্ঞাতপরিচয় আফগান যুবক। তার পর থেকেই ফের সরগরম ইউরোপ। ওই ঘটনার পর শুক্রবার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ক্রোয়েশিয়া-হাঙ্গেরি সীমান্ত। ফলে, ক্রোয়েশিয়ায় আটকে পড়া শরণার্থীরা এগোতে শুরু করেছেন স্লোভেনিয়ার দিকে। ক্রোয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রায় ছ’শো শরণার্থীকে নিয়ে স্লোভেনিয়ার সীমান্তে পৌঁছে গিয়েছে কয়েকটি বাস। সূত্রের খবর, ওই শরণার্থীদের নথিভুক্তিকরণের পর তাঁদের বেশিরভাগকেই অস্ট্রিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এ দিকে, আজ তুরস্ক থেকে গ্রিসের লেসবোসে আসার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের।

ইউরোপের নাগরিকদের স্বাধীনতা রক্ষার কথা বলে হাঙ্গেরির প্রশাসন সার্বিয়া-হাঙ্গেরি সীমান্তেও ১১০ মাইল লম্বা কাঁটাতার বরাবর রক্ষী মোতায়েন করেছে। শরণার্থীদের ভিড়ে শঙ্কিত স্লোভেনিয়া ইতিমধ্যেই ক্রোয়েশিয়া থেকে আসা সব ট্রেন বাতিল করে দিয়েছে। প্রশাসনের দাবি, নথিভুক্ত না করে কোনও শরণার্থী যাতে দেশে পা রাখতে না পারে তা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা। স্লোভেনিয়ার সীমান্তে কয়েকটি শিবির খুলে সেখানে শুরু হয়েছে নথিভুক্ত করার কাজ। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দেশে ঢোকার অন্য সব রাস্তা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ব্যবস্থায় ভিড় বাড়বে ক্রোয়েশিয়ায়। সে দেশে এত মানুষকে জায়গা দেওয়ার পরিকাঠামো না থাকায় স্বভাবতই এই পরিস্থিতিতে সিঁদুরে মেঘ দেখছে ক্রোয়েশিয়া প্রশাসনও।

যদিও জার্মানি সীমান্ত বন্ধ না করা পর্যন্ত সীমান্ত খোলাই থাকবে বলে আজ জানিয়েছেন স্লোভেনিয়ার বিদেশমন্ত্রী। কিন্তু চাপ বাড়তে থাকায় সুর চড়িয়েছে ক্রোয়েশিয়া। অন্যরা সীমান্ত বন্ধ করে দিলে তারাও যে সেই পথেই হাঁটবে তা স্পষ্ট করে দিয়েছে প্রশাসন।

রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী বিষয়ক মুখপাত্র ক্যারোলাইন ভ্যান ব্যুরেন অবশ্য সঙ্কটের প্রশ্ন উড়িয়ে দিয়েছন। তাঁর কথায়, ‘‘শরণার্থীদের নথিভূক্ত করা চলছে। পুলিশ ওঁদের নির্দিষ্ট শিবিরেও নিয়ে যাচ্ছে।’’ রাষ্ট্রপুঞ্জ আশ্বাস দিলেও ইউরোপের পরিস্থিতি যে ক্রমশ জটিল হচ্ছে, তা সামনে এনে দিয়েছে বুলগেরিয়ার শরণার্থী-হত্যা। গত এক বছরে প্রায় চার লক্ষ শরণার্থী ইউরোপে প্রবেশ করলেও সীমান্তরক্ষীর গুলিতে মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম। এই নিয়ে বুলগেরিয়ায় শুরু হয়েছে অন্তর্দ্বন্দ্ব। এক দিকে দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আতানাস আতানাসভ আফগান যুবকের মৃত্যুকে হত্যা বলে ব্যাখ্যা করছেন। কিন্তু জাতীয়তাবাদী নেতা ভালেরি সিমিওনভ বলছেন, ‘‘বুলগেরিয়ার সীমান্তরক্ষীদের মেডেল দেওয়া হোক! কারণ, ওঁরা তো ওঁদের কাজটাই করেছেন!’’

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বুলগেরিয়ার এই অন্তর্দ্বন্দ্ব আসলে ইউরোপের সার্বিক ছবিটাই তুলে ধরছে। কেউ নিরাপত্তার কথা বলে সীমান্তে পাঁচিল তুলছে, কেউ আবার খুলে দিচ্ছে দরজা। এই টানাপড়েনে হয়রানি বাড়ছে শরণার্থীদেরই। ফলে, জার্মানি-অস্ট্রিয়া দরাজ হলেও শরণার্থী সঙ্কটের ভূত যে পিছু ছাড়ছে না ভালই বুঝছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE