Advertisement
E-Paper

অবৈধবাসী ফেরাতে গিয়ে ১১ মার্কিন অফিসার দু’সপ্তাহ ধরে কন্টেনারে ‘আটকে’ আফ্রিকায়! তাড়া করছে একজোড়া আতঙ্ক

জিবুতির যেখানে কন্টেনারগুলি রাখা, সেখানে দিনে তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে। রাতে ছেঁকে ধরে ‘ম্যালেরিয়ার মশা’।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২৫ ১৯:০১
আফ্রিকার জিবুতিতে রাখা রয়েছে সেই কন্টেনার।

আফ্রিকার জিবুতিতে রাখা রয়েছে সেই কন্টেনার। ছবি: সংগৃহীত।

গিয়েছিলেন অবৈধবাসীদের ছাড়তে। কিন্তু আইনি প্যাঁচে দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে জাহাজে মাল রাখার কন্টেনারে সেই অবৈধবাসীদের পাহারায় দিন-রাত কাটাচ্ছেন আমেরিকার অভিবাসন দফতরের প্রায় ১১ জন আধিকারিক! ওই অবৈধবাসীদের অনেকেই আবার ‘দাগি’। জিবুতির যেখানে কন্টেনারগুলি রাখা, সেখানে দিনে তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে। রাতে ছেঁকে ধরে ‘ম্যালেরিয়ার মশা’। সেখানেই শেষ নয়। এই এলাকায় যে কোনও সময় পড়তে পারে ইয়েমেনের সশস্ত্রবাহিনীর ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র। সে ক্ষেত্রে কন্টেনারের ভিতরেই প্রাণ যেতে পারে বন্দি-রক্ষক সকলের। এই অবস্থায় আমেরিকার কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন অভিবাসন দফতরের ওই আধিকারিকেরা। আগের রায়ে স্থগিতাদেশ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা।

ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে বসার পরেই অবৈধবাসীদের আটক করে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। প্রায় দু’সপ্তাহ আগে কিউবা, ভিয়েতনাম, মায়ানমার, লাওসের অবৈধবাসীদের নিয়ে আমেরিকা থেকে উড়েছিল একটি বিমান। ওই অবৈধবাসীদের সুদানে নামিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। এই নিয়েই বাধে গোল। আমেরিকার ডিস্ট্রিক্ট জাজ (বিচারক) ব্রায়ান ই মার্ফি জানান, প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত তাঁর আগের নির্দেশ লঙ্ঘন করেছে। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, অবৈধবাসীদের নিজের নিজের দেশেই ছেড়ে আসতে হবে। অন্য কোনও দেশে ছাড়া চলবে না, যেখানে তারা প্রয়োজনীয় পরিষেবা পাবেন না।

বিচারকের এই রায় শোনার পরে প্রশাসনিক কর্তারা অবৈধবাসীদের আমেরিকায় ফিরিয়ে আনতে পারতেন। কিন্তু তা না-করে তাঁরা বিমানটিকে নামিয়ে দেন জিবুতিতে। তার পরেই শুরু হয় দুর্ভোগ। সে দেশে আমেরিকার নৌবাহিনীর শিবিরে জাহাজের কন্টেনারের ভিতর তৈরি করা হয় অস্থায়ী ডিটেনশন কেন্দ্র। গত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে সেখানেই অবৈধবাসীদের পাহারা দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন আমেরিকার অভিবাসন এবং শুল্ক (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বা আইসিই) দফতরের আধিকারিকেরা। সেই পরিস্থিতির রিপোর্ট বৃহস্পতিবার বিচারককে দিয়েছেন অভিবাসন দফতরের আধিকারিক মেলিসা হার্পার।

রিপোর্টে জানানো হয়েছে, জিবুতিতে যখন অবৈধবাসীদের নিয়ে আমেরিকার বিমান অবতরণ করেছিল, তখন অভিবাসন দফতরের তিন আধিকারিক ভাবতেই পারেননি এতটা দুর্ভোগ হবে। সেনা আধিকারিকেরা তাঁদের ইয়েমেনের ক্ষেপণাস্ত্র হানা নিয়ে সতর্ক করেন। যদিও তখন আর কিছু করার নেই অভিবাসন দফতরের আধিকারিকদের। কারণ, আত্মরক্ষার জন্য কোনও জ্যাকেট সঙ্গে ছিল না তাঁদের। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দিনে সেখানকার তাপমাত্রা প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাতের আকাশ ঢেকে যায় কালো ধোঁয়ায়। কারণ, আমেরিকার নৌসেনার ওই শিবিরের কাছেই আবর্জনা পোড়ান স্থানীয়েরা। তার জেরে রাতে নাকে মাস্ক লাগিয়েই ঘুমোতে বাধ্য হচ্ছেন আধিকারিকেরা। তাঁদের সকলের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। মশার কামড়ে যে কোনও সময় ম্যালেরিয়া হতে পারে। তা ছাড়া রাত-দিন পাহারা দিয়ে তাঁরা ক্লান্ত। অসুখ করলে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই।

বিচারক মার্ফির আগের নির্দেশে স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তারা সওয়াল করে জানিয়েছে, অবৈধবাসীদের নিজেদের দেশ তাঁদের ফেরাতে না-চাইলে তৃতীয় দেশে রেখে আসায় কোনও বাধা নেই। বিশেষত, সেই অবৈধবাসীরা যদি ‘দাগি’ হন। জিবুতিতে প্রশাসনের আধিকারিকদের দুরবস্থা বর্ণনা করেছেন আইনজীবীরা। জানিয়েছেন, প্রথম তিন জন অফিসার ছিলেন অবৈধবাসীদের পাহারায়। তাঁরা ক্লান্ত, অবসন্ন হয়ে পড়ছিলেন বলে আরও আট জনকে আমেরিকা থেকে পাঠানো হয়। অবৈধবাসীদের আইনজীবী তাঁদের স্বাস্থ্য নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে আবার মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাম জানিয়েছেন, তাঁদের দেশের নাগরিককে যে জিবুতিতে পাঠানো হচ্ছে, তা তাঁদের জানানো হয়নি। মেক্সিকোর ওই অবৈধবাসী আবার ফ্লরিডায় খুনে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, নিজের দেশের নাগরিককে তিনি ফেরাতে রাজি। এই আবহে বিচারক মার্ফি যদিও নিজের রায়ে অনড়। আদালতে মীমাংসা না-হওয়া পর্যন্ত আপাতত জিবুতিতেই দিন কাটতে চলেছে অভিবাসন দফতরের আধিকারিকদের, যাঁরা এত দিন আমেরিকা-ছাড়া করেছেন অবৈধবাসীদের।

Immigration Donald Trump Africa Djibouti
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy