কখনও বেলচা, লাঠি দিয়ে, কখনও আবার খালি হাতেই ধ্বংসস্তূপ থেকে পাথর সরানোর চেষ্টা করছেন পাপুয়া নিউ গিনির এনগা প্রদেশের বাসিন্দারা। তাঁদের মনে এক ক্ষীণ আশা— ধ্বংসস্তূপের নীচে যদি প্রাণের কোনও আঁচ মেলে!
জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর অবশ্য আশঙ্কা, যে দু’হাজারেরও বেশি মানুষ ধসে চাপা পড়েছেন, তাঁরা কেউ আর বেঁচে নেই। একই আশঙ্কা রাষ্ট্রপুঞ্জেরও। এরই মাঝে আজ ভারত সরকার আট কোটিরও বেশি টাকার আর্থিক সহায়তার ঘোষণা করেছে ধসে ক্ষতিগ্রস্ত পাপুয়া নিউ গিনির মানুষজনের জন্য।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ মে হওয়া ধসের জেরে ওই এলাকার অন্তত দু’হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে থাকতে পারেন। ধসের নীচে চাপা পড়েছে দেড়শোটির বেশি ঘর-বাড়িও। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, এলাকায় অন্তত আট হাজার মানুষ বসবাস করতেন। তবে গত সপ্তাহের ধসের পরে আর এনগা অঞ্চলটিকে নিরাপদ বলে মনে করছে না তারা। আগামী কয়েক দিনে আরও ভূমিধস হতে পারে ওই এলাকায়, এমনটাও মনে করা হচ্ছে। তাই সে এলাকায় থাকা সকলকে যত দ্রুত সম্ভব সরিয়ে সুরক্ষিত জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।
কিন্তু জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী দ্রুত উদ্ধারকাজে নামলেও বৃষ্টির কারণে পার্বত্য এলাকায় পৌঁছতে সময় লেগে যাচ্ছে অনেকটাই। সঙ্গে রয়েছে আগামী দিনে আরও ভূমিধ্বস ও বৃষ্টির আশঙ্কা। রাস্তার বেহাল দশার কারণেও বিলম্বিত হচ্ছে উদ্ধারকাজ। এ দিন রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি সংস্থা জানিয়েছে, ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষজনকে সাহায্য করতে ভারী যন্ত্রের ব্যবহার করছে উদ্ধারকারী দল। ত্রাণ সামগ্রী যেমন পানীয় জল, ওষুধ, খাবার, জামা-কাপড় পৌঁছনোর চেষ্টা করছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। তবে আজ ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর মূল রাস্তার একটি সেতু ভেঙে পড়ার কারণে বিকল্প রাস্তা ধরতে হয়েছে উদ্ধারকারী-ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে আসা দলকে। এর ফলে স্বাভাবিকের থেকে অনেকটা বেশি সময় লেগে যাচ্ছে তাদের পৌঁছতে।
আরও উদ্বেগের বিষয় হল, যে দেহগুলি এখনও ধ্বংসস্তূপের নীচে রয়েছে, সেগুলিতে পচন ধরতে শুরু করেছে। তাই পার্বত্য অঞ্চলের ধ্বংসস্তূপ দিয়ে যাওয়া জলের মাধ্যমে সংক্রামক রোগও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই আবহে যখন উদ্ধারকর্মীদের পৌঁছতে দেরি হচ্ছে, তখন সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও।
ধসে বিধ্বস্ত মানুষজনকে সাহায্যের উদ্দেশ্যে আজ দশ লক্ষ ডলার, অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় আট কোটিরও বেশি টাকার সহায়তার ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সহায়তায় এগিয়ে এসেছে অস্ট্রেলিয়াও।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)