অভিনন্দন বর্তমান।—ফাইল চিত্র।
বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে ফেরালে যদি ভারত-পাক উত্তেজনা প্রশমিত হয়, তাতে আপত্তি নেই পাকিস্তানের। এ ব্যাপারে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলতে চান ইমরান খান। যে কোনওরকম ইতিবাচক পদক্ষেপেই প্রস্তুত তাঁরা। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে জানালেন পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি। তবে সূত্রের খবর, অভিনন্দনকে ফেরাতে ভারত কোনওরকম আপসে যাবে না। নিঃশর্তেই বায়ুসেনার বায়ুসেনার উইং কমান্ডারকে ফিরিয়ে দিতে হবে পাকিস্তানকে।
বুধবার ভারতীয় বায়ুসেনার একটি বিমান ভেঙে পড়ে পাকিস্তানে। যদিও বিমানটি গুলি করে নামানো হয় বলে দাবি পাকিস্তানের। বিমানের উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে আটক করে তারা। সেই থেকে ইমরান খান সরকারের উপর চাপসৃষ্টি করছিল ভারত। অবিলম্বে অভিনন্দনকে নিরাপদে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছিল। তা না হলে আন্তর্জাতিক মহলেও বিষয়টি তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। তার পরই বৃহস্পতিবার সুর নরম করলপাক সরকার।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপি কনভয়ে হামলা চালায় পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ। তাতে প্রাণ হারান ৪৯ জন জওয়ান। কিন্তু পাকিস্তান সরকার হামলা দায় ঝেড়ে ফেলে। হামলায় পাকিস্তানি জঙ্গিদের হাত রয়েছে, ভারত যদি তার প্রমাণ দিতে পারে, তবেই বিষয়টি নিয়ে এগোবেন বলে জানান ইমরান খান। সম্প্রতি সেই তথ্যপ্রমাণ তাদের হাতে তুলে দিয়েছে ভারত সরকার। তার পরই জিও টিভিকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি বলেন, “ভারতের দেওয়া নথিপত্র সবে হাতে পেয়েছি আমি। এখনও পড়ে দেখার সুযোগ পাইনি। তবে গতকাল রাতেই সংসদীয় নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সবিস্তার আলোচনাও হয়েছে মন্ত্রিসভার যৌথ অধিবেশনে। শুরুতেই নথিপত্র পাঠিয়ে দিতে পারত ভারত। তা না করে প্রথমেবোমাবর্ষণ করে। নথিপত্র পাঠিয়ে দিলে এ সবের দরকার পড়ত না। তবে যাই হোক, মুক্তমনেই ভারতের দেওয়া প্রমাণ পরীক্ষা করে দেখব।’’
আরও পড়ুন: ‘ভারত-পাকিস্তান থেকে ভাল খবর আসবে, শেষ হবে উত্তেজনা’, বললেন ট্রাম্প
তবে ভারতের তরফে এই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দিল্লি সূত্রে বলা হয়েছে, মুম্বই এবং পাঠানকোটের সময় আগেভাগেই পাকিস্তানের হাতে সমস্ত প্রমাণ তুলে দেওয়া হয়েছিল। গ্রেফতার হওয়া জঙ্গির পরিচয়পত্র, অডিয়ো রেকর্ডিং সবই ছিল ওদের কাছে। কিন্তু পদক্ষেপ করা তো দূর, কোনও অভিযোগই মানতে চায়নি পাকিস্তান। পুলওয়ামা হামলার পর ১৩ দিন কেটে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত হামলায় জইশের ভূমিকা অস্বীকার করে চলেছে তারা। তাই প্রমাণ হাতে পেলেই পদক্ষেপ করত, পাকিস্তানের এমন দাবি একেবারেই ভিত্তিহীন।
পুলওয়ামায় হামলার পর থেকেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে টানাপড়েন চরম আকার ধারণ করেছে। তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মহলও। সামরিক সংঘাতে না গিয়ে, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশকে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। অভিনন্দকে ফেরালেই যদি তা সম্ভব হয় তাতে তাঁদের আপত্তি নেই বলেও জানান সাহ মেহমুদ কুরেশি। তাঁর কথায়, “অভিনন্দকে ফেরালেই যদি সংঘাত এড়ানো যায়, তাতেও আপত্তি নেই আমাদের। এ ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত আমরা। নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা বলতে রাজি ইমরান খান। শান্তিস্থাপনে পদক্ষেপ করতে প্রস্তুত। কিন্তু মোদী কি তার জন্য প্রস্তুত? আগে সেটা জানতে হবে।” সন্ত্রাস নিয়েও ভারতের সঙ্গে তাঁদের কথা বলতে আপত্তি নেই বলে জানান কুরেশি।
আরও পড়ুন: অভিনন্দনের বাবার কি মনে পড়ছে পাক হেফাজতে বরুণের উপর নির্যাতনের কথা?
দিল্লির তরফে তাঁর এই অভিযোগও উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, “করতারপুর নিয়ে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলাম আমরা। ওরাই পিছিয়ে গিয়েছে। সংঘাত এড়ানোর চেষ্টা করে চলেছি আমরা। কিন্তু পাকিস্তানি বিমানের উড়ান বন্ধ রেখেছে। বন্ধ করে দিয়েছে সমঝোতা এক্সপ্রেসের পরিষেবাও। ওদের তরফেই যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা চলছে।”অভিনন্দনকে নিরাপদে দেশে ফেরাতে ইতিমধ্যেই দিল্লিতে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের কাছে দাবি জানিয়েছে ভারত সরকার। পাকিস্তানে বন্দী ওই পাইলটের গায়ে যাতে আঁচড়ও না লাগে, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
(আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক চুক্তি, আন্তর্জাতিক বিরোধ, আন্তর্জাতিক সংঘর্ষ- সব গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy