হামাসের হাতে পণবন্দিদের মুক্তির দাবিতে ইজ়রায়েলে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স।
ইজ়রায়েল অধিকৃত প্যালেস্টাইনে বসতি স্থাপনের নিন্দা জানিয়ে প্রস্তাব এনেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। সেই প্রস্তাবের সমর্থনে ভোট দিল ভারত-সহ অধিকাংশ সদস্য রাষ্ট্র। প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে সাতটি দেশ। দেশগুলির মধ্যে রয়েছে আমেরিকা, কানাডা। ভোটদানে বিরত থেকেছে ১৮টি দেশ।
রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাবে অধিকৃত প্যালেস্টাইনের পূর্ব জেরুসালেম এবং গোলান হাইটস-এ বসতি স্থাপনের নিন্দা করা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য রাষ্ট্রের ভোটে প্রস্তাবটি অনুমোদন পায় গত বৃহস্পতিবারে। প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগেই ইজ়রায়েল-হামাসের মধ্যে চলতি সংঘাতে যুদ্ধবিরতি চেয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে জর্ডনের আনা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটিতে গরহাজির থেকেছিল ভারত। ভারতের সেই অবস্থান নিয়ে চর্চা শুরু হয় দেশে-বিদেশে। কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির সমালোচনায় সরব হয় কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী দলগুলি। এ বার ভারত রাষ্ট্রপুঞ্জে বসতি স্থাপন নিয়ে নিন্দা প্রস্তাবের সমর্থনে ভোট দিয়ে ইজ়রায়েল-হামাস সংঘাতে ‘ভারসাম্যের নীতি’ বজায় রাখল বলে মনে করা হচ্ছে।
পরে ভারতের তরফে এই ‘অভূতপূর্ব’ অবস্থানের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর ভোপালের একটি অনুষ্ঠান থেকে বলেন, “আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিই। কারণ, আমরা সন্ত্রাসবাদের বড় ভুক্তভোগী।” সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষায় জোর দিয়ে বিদেশমন্ত্রী বলেন, “যখন সন্ত্রাসবাদ আমাদের ক্ষতি করে, তখন সেটিকে গুরুত্ব দেব, আর অন্যরা সন্ত্রাসবাদের শিকার হলে, সেটাকে গুরুত্ব দেব না— এমন অবস্থান নিলে আমাদের কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে না।” ভোটদানে বিরত থাকার ব্যাখ্যা হিসাবে নিজের এই মন্তব্যকে তুলে না ধরলেও মনে করা হয় যে, প্রকারান্তরে ভারতের ওই অবস্থানের কারণই ব্যাখ্যা করলেন জয়শঙ্কর।
কিছু দিন আগেই রাষ্ট্রপুঞ্জে মানবিক সহায়তার কারণে গাজ়া ভূখণ্ডে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এনেছিল জর্ডন। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১২০টি সদস্য দেশ। বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ১৪টি দেশের প্রতিনিধিরা। ভারত-সহ ৪৫ সদস্যরাষ্ট্র ভোটদানে বিরত ছিল। বিদেশমন্ত্রক সূত্রে জানা যায়, প্রস্তাবে গত ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলের উপর প্যালেস্তিনীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলার উল্লেখ না থাকার কারণেই ভারত ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। জর্ডনের ওই প্রস্তাবের সঙ্গে ‘হামাসের আক্রমণের’ প্রসঙ্গ সংযোজনের জন্য একটি সংশোধনী প্রস্তাব এনেছিল কানাডা। ভারতের তরফে সমর্থন করা হলেও সংশোধনী প্রস্তাবটি ভোটাভুটিতে খারিজ হয়ে যায়।
ভারত চিরকালই প্যালেস্টাইন প্রশ্নে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশগুলির তুলনায় বেশি ‘নরম’। ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্তাইন— এই দুই রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষেই অতীতে সওয়াল করেছে ভারত। সম্প্রতি ‘দ্য হিন্দু’র একটি নিবন্ধে প্রকাশ, কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী ভারতের সেই ধারাবাহিক কূটনৈতিক অবস্থানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করেন। বিজেপি শিবির অবশ্য দাবি করে, কূটনৈতিক ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই পদক্ষেপ করছে সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy