প্রতীকী ছবি।
আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার কাছ থেকে পাঁচটি এস ৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং তার আনুষাঙ্গিক যন্ত্র কিনতে চলেছে ভারত যার আর্থিক মূল্য সাড়ে চারশো কোটি ডলার। আগামী অক্টোবরে রাষ্ট্রীয় সফরে সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নয়াদিল্লি আসছেন। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী তখনই এই চুক্তি চূড়ান্ত হবে।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে নিঃসন্দেহে এটি একটি ঝুঁকি নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অবশ্যই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চলছে আমেরিকাকে নিজেদের শর্তে রাজি করানোর। এটাও ঠিক যে কিছুটা নরমও হয়েছে ওয়াশিংটন। তবে শেষ পর্যন্ত আমেরিকার আইন অগ্রাহ্য করে রাশিয়া থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি কেনার পর ট্রাম্প প্রশাসন কী পদক্ষেপ করবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে আমেরিকার সিদ্ধান্ত যাই হোক, নয়াদিল্লি বিষয়টিতে অনড়। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার মতে, ‘‘আমরা যদি নতি স্বীকার করে নিই তা হলে বারবার বিভিন্ন শর্তে মাথা ঝোঁকাতে হবে। আর আমরা তো একা নই। সৌদি আরব, তুরস্ক, কাতারের মতো দেশগুলিও রাশিয়ার কাছে থেকে অস্ত্র বিষয়ে নির্ভরশীল। ওয়াশিংটনের সঙ্গে কথা চলেছে। তবে শেষ মুহূর্তেও যদি ওরা ছাড় না দেয়, তা হলে আমাদেরও কিছু করার থাকবে না। রাশিয়ার কাছে বহু দিন আগে থেকেই আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’ কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন, আমেরিকা যদি শেষ পর্যন্ত ভারতের জন্য ছাড় দেয় তা হলে ভাল। না হলে দিল্লি পরিস্থিতি কতটা সামলাতে পারে তা নিয়ে সংশয় আছে।
গত বছরের শেষ দিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া-বিরোধী আইনটি আনার পর হইচই পড়ে যায়। ওই আইন অনুযায়ী কোনও দেশ মস্কোর কাছ থেকে বড় মাপের প্রতিরক্ষা-বাণিজ্য করলে তাদের মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে। এই আইনের ফলে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি সঙ্কটের মুখে পড়ে ভারত। কারণ এক দিকে যেমন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র রফতানিকারী দেশ রাশিয়া, তেমনই ভারতও সব চেয়ে বেশি অস্ত্র কেনে এই দেশটির কাছ থেকেই। আবার এটাও ঠিক যে ভারত বহু কাঠখড় পুড়িয়ে আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত অংশিদারিত্ব শুরু করতে পেরেছে। তাই উভয়সঙ্কটের মধ্যে বিভিন্ন স্তরে হোয়াইট হাউসের কাছে সাউথ ব্লক দরবার করতে থাকে যে এই চুক্তিটি দীর্ঘদিনের দ্বিপাক্ষিক প্রস্তুতির ফসল এবং পুতিনকে মোদীর কথা দেওয়া হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার প্রশ্নে এই অস্ত্র ব্যবস্থা নয়াদিল্লির জন্য কতটা জরুরি সেটিও বিশদে বোঝানো হয় ট্রাম্প প্রশাসনকে। এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শত্রুপক্ষের পারমাণবিক বোমা বহনকারী যুদ্ধবিমান, ফাইটার জেট, গোয়েন্দা বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন শুধু শনাক্তই করতে পারে না, ৪০০ কিলোমিটার গতিতে ৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় সেগুলো ধ্বংসও করতে পারে।
মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ এবং তারপর সিরিয়ায় রাশিয়ার অভিযানের মত বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করে আমেরিকা-রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ তিক্ত হচ্ছে। সূত্রের খবর, এই যুযুধান পরিস্থিতিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বিষয়টি নিয়ে আমেরিকার শীর্ষ স্তরে কথা বলছেন। ট্রাম্প প্রশাসনকে কিছুটা হলেও নরম করা গিয়েছে। তার একটি প্রতিফলনও আজ পাওয়া গিয়েছে হোয়াইট হাউসের কাছ থেকে। আজ মার্কিন প্রশাসন ভারতকে ৬টি এএইচ-৬৪ই হেলিকপ্টার বিক্রির প্রশ্নে সবুজ সংকেত দিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একটি বিবৃতিও দিয়েছে আমেরিকার প্রতিরক্ষা দফতর। বলা হয়েছে, এই হেলিকপ্টার পাওয়ার ফলে ভারতের প্রতিরক্ষা আরও আধুনিক হয়ে উঠবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy