Advertisement
০২ মে ২০২৪

বাংলা বলে বাঁচলেন চিকিৎসক, হত তালিকায় ভারতের মেয়ে তারিশিও

ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ঢাকার বাড়িতে বাবা-মা’র সঙ্গে ছুটি কাটাতে এসেছিলেন বছর উনিশের তারিশি জৈন। গুলশনের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হোলি আর্টিজান বেকারিতে বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া সারতে গিয়েছিলেন শুক্রবার সন্ধ্যায়।

মা-বাবার সঙ্গে তারিশি জৈন (মাঝে)। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।

মা-বাবার সঙ্গে তারিশি জৈন (মাঝে)। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।

সংবাদ সংস্থা
ঢাকা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৬ ০৩:২০
Share: Save:

ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ঢাকার বাড়িতে বাবা-মা’র সঙ্গে ছুটি কাটাতে এসেছিলেন বছর উনিশের তারিশি জৈন। গুলশনের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হোলি আর্টিজান বেকারিতে বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া সারতে গিয়েছিলেন শুক্রবার সন্ধ্যায়। রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ রেস্তোরাঁটিতে হানা দেয় সশস্ত্র জঙ্গিরা। জনা চল্লিশ পণবন্দির সঙ্গে আটক করে তারিশিকেও। প্রায় ১০ ঘণ্টার গুলির লড়াই শেষে ছয় জঙ্গিকে মেরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বাংলাদেশ সেনা। যদিও তার আগে অন্য বিদেশিদের মতো তারিশিকেও হত্যা করেছে জঙ্গিরা।

শনিবার সকাল আটটা নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বাংলাদেশ সেনা। সেনার তরফে জানানো হয়, হামলায় নিহত ২০ জনের মধ্যে রয়েছেন ভারতীয় নাগরিক তারিশিও।

সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নইম আশফাক চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা যে ২০টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছি, তাঁদের মধ্যে সকলেই বিদেশি। নিহত হয়েছেন এক ভারতীয় তরুণীও।’’ ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে পরে জানানো হয়, নিহতের নাম তারিশি জৈন। তারিশির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমবেদনা জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘ঢাকায় পণবন্দি ভারতীয় তরুণী তারিশিকে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। আমরা তাঁর বাবা সঞ্জীব জৈনের সঙ্গে কথা বলেছি। এই শোকের মুহূর্তে গোটা দেশ তাঁদের সঙ্গে রয়েছে।’’

সূত্রের খবর, তারিশিরা আদতে উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদের বাসিন্দা। বাবা সঞ্জীব জৈন পেশায় পোশাক ব্যবসায়ী। গত ১৫-২০ বছর ধরে ঢাকায় ব্যবসা করছেন সঞ্জীব। তারিশির মায়ের নাম তুলিকা জৈন। ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়তেন ওই তরুণী। এক বছর আগে পড়তে যান বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। একটি সূত্র বলছে, অর্থনীতির স্নাতক স্তরের ছাত্রী ছিলেন মেধাবী তারিশি। বর্তমানে ঢাকার বারিধারায় থাকতেন তাঁরা। তাঁর ভাই সঞ্চিত জৈন থাকেন কানা়ডায়।

শুক্রবার বন্ধুদের সঙ্গে নৈশাহার সারতে গুলশনের জনপ্রিয় স্প্যানিশ রেস্তোরাঁটিতে গিয়েছিলেন তারিশি। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই আসে ভয়াবহ সেই খবর। সশস্ত্র জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে হোলি আর্টিজান বেকারিতে। বিপদ আঁচ করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন আত্মীয়রা। তারিশি কোথায়, কী অবস্থায় আছেন জানতে চেষ্টা করতে থাকেন নাগাড়ে। শেষ রাতে আসে দুঃসংবাদ। এক আত্মীয় জানিয়েছেন, শনিবার ভোররাত ৩টে নাগাদ মেয়ের হত্যার খবর পান বাবা সঞ্জীব জৈন।

তারিশির খুড়তুতো ভাই শিরীষ জৈন জানিয়েছেন, তারিশির বাবা-মা ছাড়া আর কোনও আত্মীয়ই এখন বাংলাদেশে নেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব ঢাকা পৌঁছে ওঁদের পাশে দাঁড়াতে চান পরিবারের বাকিরা। তাঁর কথায়, ‘‘বাইরে থেকে যখন এই রকম ঘটনার খবর পাওয়া যায়, তখন এতটা মারাত্মক লাগে না। কিন্তু যখন পরিবারকে সরাসরি আঘাত করে তখন সহ্য করা যায় না।’’ বোনের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি জানান, গত বছর আমেরিকায় পড়তে গিয়েছিলেন তারিশি। গরমের ছুটি কাটাতে বাড়ি ফিরেছিলেন কিছু দিন আগে। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানান, তারিশির পরিজনদের জন্য ভিসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যোগাযোগ রাখছেন কাকা রাকেশ জৈনের সঙ্গে।

তারিশি না ফিরলেও বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছেন ভারতীয় চিকিৎসক সত্য পাল। জানা গিয়েছে, ঝরঝরে বাংলায় কথা বলতে পারায় জঙ্গিদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে যান তিনি। বাংলাদেশি মনে করে জঙ্গিরা রেহাই দেন ওই চিকিৎসককে। পরে বাকি পণবন্দিদের সঙ্গে তাঁকেও উদ্ধার করে সেনাবাহিনী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tarishi bangladesh attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE