E-Paper

সরকার মজে পাক প্রেমে, বাংলাদেশে এ বার অন্য একুশে

ছাত্রদের একটি খুবই ছোট সংগঠন ঘোষণা করেছে— ‘জুলাই আন্দোলনের সূতিকাগার’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহদ্দিতে রাষ্ট্রপতির আগমন তারা মেনে নেবে না।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:২০
ঢাকার ভাষা শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

ঢাকার ভাষা শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পেরোনোর ঠিক পরে। — নিজস্ব চিত্র।

মধ্যরাতে ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা পেরোলেই শহিদ মিনারে ফুলের স্তবকটি রেখে জাতির পক্ষে ভাষা-শহিদদের প্রথম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি। তার অব্যবহিত পরেই শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী, এ বারে যাঁর সমতুল সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের কর্মসূচিতে ছাড়পত্র দেয়নি গোয়েন্দা পুলিশ। কারণ ছাত্রদের একটি খুবই ছোট সংগঠন ঘোষণা করেছে— ‘জুলাই আন্দোলনের সূতিকাগার’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহদ্দিতে রাষ্ট্রপতির আগমন তারা মেনে নেবে না। রাষ্ট্রপতির অপরাধ, আগের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে নিয়োগ করেছিলেন। সন্ধ্যার অন্ধকার নামার পরে রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে জানানো হল, উনি যাচ্ছেন।

তবে আনুষ্ঠানিকতায় অন্তত অন্য বছরের থেকে পিছিয়ে থাকছে না ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার জানিয়েছেন, একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মধ্যরাতে তারিখ একুশ ছোঁয়া মাত্র উদ্‌যাপন শুরু হয়েছে মাতৃভাষা দিবস। পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, উপদেষ্টা, আমলাদের নিরাপত্তার আচ্ছাদন থাকছে। আম জনতা তাই রাত ১২টা ৪০-এর আগে যেন শহিদ মিনারে না আসেন। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে শ্রদ্ধা নিবেদন।

রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা ১৯৯৯-তে একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করেছিল। এ বার তার ২৫ বছর। সেই উপলক্ষে সব সদস্য দেশকে বাড়তি উৎসাহে দিনটি পালন করতে বলেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। কিন্তু কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসে এ বার একুশের অনুষ্ঠান হবে একান্তই ঘরোয়া ভাবে। বাংলাদেশের কূটনীতিক ও কর্মীরা সকালে নিজেদের মতো শ্রদ্ধা জানাবেন উপদূতাবাসের চত্বরের এক কোণে নির্মিত ভাষা-শহিদ মিনারটিতে। বিকেলে তাঁদের পরিবারই থাকবেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। এ বারে সকালে বাংলা বর্ণমালার কাটআউট নিয়ে শোভাযাত্রা হচ্ছে না। বিকেলে ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কনসুলেটের কর্মী ও কূটনীতিকেরা গানে-নাটকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে যেমন অনুষ্ঠান করতেন, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের কথাও উঠে আসত যেখানে— তা এ বার হচ্ছে না।

যেমন হচ্ছে না বনগাঁ সীমান্তের জ়িরো পয়েন্টে ভারত ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কর্মী ও শিল্পীদের সখ্য, মিষ্টিমুখ, উপহার বিনিময় এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আগে একুশের এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে সীমান্তের আগল তুলে নিত দু’দেশের সীমান্তরক্ষীরা। পরে বাধ্যবাধকতা বাড়ায় তা না হলেও গত বার পর্যন্ত অনুষ্ঠান হয়েছে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যের জ়িরো পয়েন্টে। এ বার এলাকার পঞ্চায়েত সমতির তরফে একুশের মেলা ও অনুষ্ঠান করা হচ্ছে সীমান্তের অদূরেই। কিন্তু তাতে বাংলাদেশের যোগ থাকছে না।

ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান গঠনের পরেও পূর্ব পাকিস্তানের উপরে পশ্চিমের চাপিয়ে দেওয়ার মনোভাবে বিক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাভাষীদের উপরে পাকিস্তানের শাসকেরা যখন সরকারি ভাষা হিসেবে উর্দুকে চাপিয়ে দেয়, শুরু হয় আন্দোলন। ভাষার ভিত্তিতে পৃথক দেশ গঠনের আকাঙ্ক্ষার সূত্রপাতও ১৯৫২-র এই ভাষা আন্দোলনে। ১৯৭১-এ স্বাধীনতার যুদ্ধে জয়লাভের মধ্য দিয়ে তা পূর্ণতা পায়। সেই যুদ্ধে সহযোগী হয় ভারতও। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার কিন্তু পাকিস্তানের প্রেমে মজেছে। যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, সব কিছুরই প্রাণকেন্দ্র— সেখানে সন্ধ্যা নামলে এখন উর্দু কাওয়ালির আসর বসানো হচ্ছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রেক্ষাগৃহে পালন করা হচ্ছে মহম্মদ আলি জিন্নার জন্ম ও মৃত্যুদিন। পাক সেনার হাতে ৩০ লক্ষ বাঙালির হত্যাকাণ্ড ও অগণিত মা-বোনের সম্ভ্রম হানির কথা উঠে আসে। সেই পাক সেনাদের সঙ্গেই এখন দহরম মহরম বাংলাদেশ সেনার। ভারতের বিরুদ্ধেও বিষোদ্গার করে চলেছেন নতুন সরকারের নিয়ন্ত্রক ছাত্র নেতা ও উপদেষ্টারা। এই পরিস্থিতিতে একুশে এ বার পালন হচ্ছে একেবারেই নতুন এক প্রেক্ষাপটে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

21 February Bangladesh Unrest

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy