হিজাব বিরোধী আন্দোলনে উত্তপ্ত ইরান। ফাইল চিত্র।
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় সোরান বন্দুকের নলের ঢঙে দুই আঙুল কপালে ঠেকালেন, তার পর জানালেন “প্রশ্ন করা তো দূরের কথা, নিছক কথা বললেই ওরা কপালে বুলেট ভরে দিতে পারে।” সদ্য কাজের খোঁজে ইরানের সীমানা পার হয়ে ইরাকে এসেছেন সোরান। চোখ বুজলে দেখতে পাচ্ছেন নিরাপত্তাবাহিনীর অত্যাচারের ঘটনাগুলি। “শুধু মিছিলে পা মিলিয়েছিলাম, সেই ‘দোষেই’ বাহিনী নির্বিচারে মারধর করে আমাকে। চোখের সামনে আমার প্রিয় বন্ধুকে গুলি করে তারা। ম্লান হেসে জানান সোরান। তাঁর বাড়ি ইরানের কুর্দিস্তানের সক্কেজ় শহরে। যে শহরে বাড়ি ছিল মাহশা আমিনিরও।
প্রায় একই কথা জানালেন ফারহাদ। তাঁর বাড়ি ইরানের সনন্দাজ শহরে, কর্মসূত্রে থাকেন ইরাকে। আন্দোলনের সময়ে প্রায় পুরোটাই ছিলেন ইরানে। নিরাপত্তা বাহিনীর নির্বিচারে বলপ্রয়োগ দেখেছেন তিনি। একটি কুর্দিশ মানবাধিকার সংস্থা সূত্রে খবর, চার সপ্তাহের এই আন্দোলনে পশ্চিম ইরানের কুর্দিস্তানে প্রাণ গিয়েছে ৩২ জনের। আহত কমপক্ষে ১৫৪০। ফারহাদের দাবি, সংখ্যাটি আরও বেশি। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, সোমবারই কুর্দিস্তানে হামলায় প্রাণ গিয়েছে ২০ জনের। এমনকি, সীমানা পার হওয়ার সময়েও হামলা করছে নিরাপত্তা বাহিনী। তাঁদের অবশ্য এ নিয়ে মুখ খোলা মানা। কড়া নজরে রেখেছে ইরানের গোয়েন্দা বিভাগ।
আন্দোলন শুরু হতেই সক্রিয় হয়েছে গোয়েন্দা বিভাগ। ফলে, যাঁর তোলা ছবির সূত্রে ইরানে হিজাব বিরোধী আন্দোলনের সূচনা, সেই মহিলা সাংবাদিক নিলুফার হামেদির দিন কাটছে নিঃসঙ্গ সেলে বন্দি হয়ে। বুধবার, ইরানের আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, একশোরও বেশি মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে প্রশাসন। শুধু তেহরান প্রদেশেই বিচার হয়েছে ৬০ জনের। হরমোজ়গন প্রদেশে অন্তত ৬৫ জনের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়ানোর মামলা চলছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ইরানের সংবাদ সংস্থা জানিয়েছিল, হরমোজ়গন প্রদেশে ৮৮ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর ইরানের উত্তরাংশ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ১২০০ জনকে, ৬০ জন তাঁদের মধ্যে মহিলা।
১৬ সেপ্টেম্বর মাহশা আমিনির মৃত্যুর পরেই সারা ইরান জুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদ। তা থামাতেই এত ধরপাকড়-মামলা। হরমোজ়গান প্রদেশের আদালতের প্রধান বিচারপতি মোজতবা ঘরেমানির দাবি, প্রতিবাদের নামে সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ, সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করা, অগ্নিসংযোগ, হিংসা ছড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। তাই, সরকারের তরফে সঠিক পদক্ষেপই করা হচ্ছে।
তবে, তাতেও প্রতিবাদ থামছে কি? বিক্ষোভকারীদের একাংশের দাবি, স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে ভয় দেখিয়ে থামানো যায় না। এমনটা ভাবেন সোরেনও। সংবাদমাধ্যমকে তিনি স্পষ্ট জানালেন— “আগে ভয় পেতাম প্রশাসনকে, ফতোয়াকে। এখন সেই ভয় ফুরিয়ে গিয়েছে।” এ দিকে, ইউরোপের ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি থেকে শুরু করে আমেরিকায় ছড়িয়েছে প্রতিবাদ। সে দেশে বসবাসকারী ইরানিরা পথে নেমেছেন ইরানের আন্দোলনের সমর্থনে। প্রতিবাদ ছড়িয়েছে ভারতেও। ভারতীয় টিভি সিরিজ় ‘সেক্রেড গেমস’-এর ইরানি বংশোদ্ভূত অভিনেত্রী এলনাজ় নোরোজ়ি সমাজমাধ্যমে পোশাক খুলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে দিয়েছেন বার্তা, কী পোশাক পরব, তা একান্ত ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। কোনও প্রশাসন, নীতি পুলিশ তা ঠিক করে দিতে পারে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy