ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতের আবহে দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিল ইরান। মঙ্গলবার বিকেল থেকেই ইরানের বিস্তীর্ণ অংশে ইন্টারনেট প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সে দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ক্রমশ সম্পূর্ণ ‘ব্ল্যাক আউট’-এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ইরান।
সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ়-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ইজ়রায়েলি হামলার কারণে নয়, বরং ইরান সরকারের সিদ্ধান্তেই ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ‘কেন্টিঙ্ক’ এবং ‘নেটব্লক্স’ নামে দুই সংস্থা সারা বিশ্বে ইন্টারনেট সংযোগের উপর নজর রাখে। তারা জানিয়েছে, স্থানীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে ইরানে ইন্টারনেট সংযোগ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গিয়েছে। কোথাও কোথাও খুবই ধীরগতিতে পরিষেবা চলছে। তবে এর ফলে সব মিলিয়ে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে ইরানিদের।
আরও পড়ুন:
অন্য দিকে, অতি ধীরগতির ইন্টারনেটের কারণে বিদেশি সাইটগুলি দেখার জন্য ব্যবহৃত ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন)-এর মতো পরিষেবাগুলিও প্রভাবিত হয়েছে। ইন্টারনেট পরিষেবা সংস্থা ‘ক্লাউডফ্লেয়ার’-ও জানিয়েছে, ইরানের দু’টি প্রধান মোবাইল নেটওয়ার্ক সংযোগ আচমকা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। এ বিষয়ে ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি জানিয়েছেন, ইজ়রায়েলি সাইবার হামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবে আপাতত সাময়িক ভাবে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে ইরানে দেশজোড়া বিক্ষোভের সময় শেষ বার ছ’দিনের ‘ব্ল্যাক আউট’ কার্যকর করা হয়েছিল। সেই ঘটনার দীর্ঘ ছ’বছর পর আবার একই পথে হাঁটল ইরান।
ইরানের মানবাধিকার সংস্থা মিয়ান গ্রুপের এক কর্তা আমির রশিদি জানিয়েছেন, যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত কিছু জনপ্রিয় অ্যাপও বন্ধ করে দিয়েছে ইরান। এর মধ্যে হোয়াট্সঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম-ও রয়েছে! নাগরিকদের কাছে ইরান সরকার আর্জি জানিয়েছে, তাঁরা যেন নিজেদের ফোন থেকে হোয়াট্সঅ্যাপ মুছে ফেলেন। ইরানের দাবি, মেটা-র মতো যে সংস্থাগুলি ইজ়রায়েলের কাছে গোপনে তথ্য পাচার করছে। পাল্টা জবাব দিয়েছে হোয়াট্সঅ্যাপও। হোয়াট্সঅ্যাপের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘‘এই সঙ্কটময় মুহূর্তে, যখন মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সে সময় পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার জন্যই এ সব মিথ্যা অজুহাত দিচ্ছে ইরান।’’ হোয়াট্সঅ্যাপ ছাড়াও গুগল এবং অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত ইরানের জাতীয় তথ্য নেটওয়ার্ক (এনআইএন) ব্যবহার করতে পারছেন ইরানবাসীরা। সরকার অনুমোদিত ওয়েবসাইটগুলির দেশব্যাপী এই নেটওয়ার্ক বহির্বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত নয়। সে কারণেই সেটি ব্লক করা হয়নি। অন্য দিকে, দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হতেই কেউ কেউ ইলন মাস্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা ‘স্টারলিঙ্ক’কে হস্তক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছে। এর আগেও সংঘাতের সময়ে এ ভাবে ইন্টারেট পরিষেবা প্রদানের নজির রয়েছে স্টারলিঙ্কের।