কোথাও কালো, পোড়ো কঙ্কালসার চেহারার বাড়ি আধভাঙা অবস্থায় দাঁড়িয়ে। কোথাও আবার বহুতল ভেঙে মাটিতে ধ্বংসস্তূপ পড়ে রয়েছে। গত দু’দিনে ইরানের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইজ়রায়েলের তেল আভিভ এবং তার আশপাশের এলাকা থেকে ধ্বংসের এমনই সব ছবি উঠে এসেছে।
ইরানের রাজধানী শহর তেহরানের অবস্থাও একই রকম। হয়তো এর চেয়েও ভয়ঙ্কর চেহারা কোনও কোনও জায়গার। আকাশ জুড়ে শুধু কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী। দাউদাউ করে জ্বলছে তৈলভান্ডার আর ঘরবাড়ি।
ইরান-ইজ়রায়েল সংঘর্ষ সোমবার চতুর্থ দিনে পড়ল। কিন্তু সংঘর্ষ থামার নাম নেই! রবিবার রাতেও তেহরানে হামলা চলেছে। এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে তেহরানের ৮০টি জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েল। তাদের হামলায় ইরানে অন্তত ২২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম প্রায় ১২০০। এমনটাই জানিয়েছে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
অন্য দিকে, সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দফতর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইজ়রায়েলে এখনও পর্যন্ত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম অন্তত ৫০০ জন। গত চার দিনে ইরানও ইজ়রায়েলের দিকে প্রায় ৩৭০ বার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। সংবাদপত্র ‘দ্য ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল’ জানিয়েছে তেহরানের লক্ষ্য ছিল ইজ়রায়েলের ৩০টিরও বেশি এলাকা।
ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কর্পসের দাবি, তাদের ছোড়া ৯০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। তার মধ্যে ইজ়রায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, বায়ুসেনা ঘাঁটিও রয়েছে। ইজ়রায়েল অবশ্য দাবি করেছে, ইরানের অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্রই প্রতিহত করে দিয়েছে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (‘আয়রন ডোম’)। যা কিছু ক্ষয়ক্ষতি, সবটাই ইরানীয় ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবেশষ উড়ে এসে হয়েছে।

তেহরানে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বহুতল। ছবি: রয়টার্স।
বিভিন্ন রিপোর্টে দাবি, ইজ়রায়েলি হানায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইরানের নাতানজ়, এসফাহান, আরক, ফরডৌয়ের পরমাণুকেন্দ্র। মোসাদের ড্রোনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তেহরানের ব্যালিস্টিক মিসাইলের ঘাঁটি, পিরানশাহেরের সেনাঘাঁটিও। এ ছাড়াও তেহরানের আজ়গলের মতো জনবসতিতেও ইজ়রায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়েছে। ধ্বংস হয়ে গিয়েছে উত্তর তেহরানের ওয়ান হোল্ডিং টাওয়ার, ওয়েলফেয়ার ডিপার্টমেন্ট বিল্ডিংও।

তেল আভিভেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বহুতল। ছবি: রয়টার্স।
ইরানও ইজ়রায়েলের বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি এবং কূটনৈতিক কৌশলগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকায় আঘাত করেছে। বিভিন্ন রিপোর্টে দাবি, ইরানীয় ক্ষেপণাস্ত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তেল আভিভে ইজ়রায়েলি সেনার সদর দফতর ‘দ্য কিরিয়া’, গবেষণাকেন্দ্র ‘ওয়েইজ়মান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স’ এবং হাইফা শহরের বাজ়ান তৈলশোধনাগার কেন্দ্র। এ ছাড়াও তেল আভিভের বাট ইয়াম, রমাত গানের মতো জনবসতি এলাকার বহু ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইরানীয় ক্ষেপণাস্ত্রে। উল্লেখ্য, ইজ়রায়েলের এই হাইফা বন্দরটি ভারতের আদানি গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত। রবিবার হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। আদানিরা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, বন্দর এখনও সক্রিয় আছে। তবে সোমবারের হামলার পর এই বন্দরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, এখনও স্পষ্ট নয়।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড বলেছে, ‘‘আমাদের অভিযানে যে কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে, তা লক্ষ্যবস্তুতে সফল ভাবে সর্বাধিক আঘাত হেনেছে। আমেরিকা তথা পশ্চিমি বিশ্বের সমর্থন এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ওদের কাছে থাকা সত্ত্বেও।’’ পাল্টা ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কাট্জ় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘‘তেহরানের বাসিন্দাদের এর মূল্য চোকাতে হবে।’’