ইরানের কড়া পোশাকবিধির প্রতিবাদে এ বার সে দেশের রাস্তায় নগ্ন অবস্থায় হাঁটলেন এক মহিলা। শুধু তা-ই নয়, নগ্ন অবস্থাতেই পুলিশের গাড়ির উপর ঝাঁপ দিলেন তিনি। গাড়ির বনেটের উপর দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানালেন ইরানের সরকারের চাপিয়ে দেওয়ার আইনের বিরুদ্ধে! এমনই দাবি করে সমাজমাধ্যমে ওই মহিলার একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন ইরানের এক সাংবাদিক। যদিও সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, এক মহিলা নগ্ন অবস্থায় পুলিশের গাড়ির উপর উঠে পড়েছেন। বনেটের উপর উঠে চিৎকার করে সরকারের কড়া পোশাকবিধির সমালোচনা করছেন। গাড়ি থেকে এক পুলিশ অফিসার হাতে বন্দুক হাতে মহিলাকে সরে যেতে বলছেন। তবে ওই মহিলা কোনও কথাতে কর্ণপাত করতে রাজি নন!
ইরানের বিভিন্ন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, ঘটনাটি ঘটেছে মাশহাদে। ইরানি সাংবাদিক মাসিফ আলিনেজাদের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়েছে। নগ্ন অবস্থায় প্রতিবাদ জানানোয় ওই মহিলার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়েছে, কি না তা স্পষ্ট নয়। যদি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে ওই মহিলার স্বামীর পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রীর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত ইরান প্রশাসনের তরফে সরকারি ভাবে কোনও বক্তব্য জানানো হয়নি।
গত বছর ডিসেম্বরেই পোশাকবিধি নিয়ে কড়া আইন এনেছে ইরান। সেই আইনে বলা হয়েছে, পোশাকবিধি না-মানলে এ বার মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে ইরানি মহিলাদের। আইনে এ-ও বলা হয়েছে, কেউ ‘অশোভন পোশাক’ কিংবা ‘নগ্নতা’-কে তুলে ধরছেন বলে মনে করা হলে ১২ হাজার ৫০০ পাউন্ড (ভারতীয় মুদ্রায় ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা) আর্থিক জরিমানা হতে পারে। বার বার একই ‘অন্যায়’ করলে পাঁচ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত জেলও হতে পারে।
আরও পড়ুন:
ইরানে দীর্ঘ দিন ধরে মহিলাদের জন্য কড়া পোশাকবিধি চালু রয়েছে। ইরানি মহিলাদের আবশ্যিক ভাবে মাথা ঢেকে রাখতে হয় হিজাবে। এ ছাড়া রাস্তায় বার হলে ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হয় তাঁদের। এ নিয়ে বার বার প্রতিবাদ হয়েছে ইরানে। ইরানের হিজাববিধি নিয়ে অতীতে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন উঠেছে আন্তর্জাতিক মঞ্চে। সম্প্রতি এই হিজাববিধির প্রতিবাদে ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী প্রকাশ্যে অন্তর্বাস পরে হেঁটেছিলেন। এর পর তাঁকে আটক করে নিয়ে যায় ইরানের নীতি পুলিশ।
তেহরানের ওই তরুণীর প্রতিবাদ মনে করিয়ে দিয়েছিল ২০২২ সালে মাহ্সা আমিনির কথা। ২০২২ সালে হিজাব না-পরার ‘অপরাধে’ মাহ্সাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ইরানের নীতি পুলিশ। পুলিশি হেফাজতেই তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন বলে দাবি করা হয়েছিল। কিছু দিনের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর উপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছিল। ওই ঘটনার প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মঞ্চ তো বটেই, ইরানের মহিলারাও সরব হয়েছিলেন। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন ইরানি মহিলারা। পোশাক ফতোয়া উড়িয়ে, চুল কেটে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন তাঁরা। সেই প্রতিবাদ কড়া হাতে দমন করে ইরান-প্রশাসন। পরে পোশাকবিধি নিয়ে আইনও আনে ইরান সরকার। তবে তাতেও প্রতিবাদ দমানো যায়নি, তা আরও এক বার প্রকাশ্যে এল মাশহাদে এই মহিলার কাণ্ডে।