সরকারের পক্ষ থেকে বারবার ৬ ফুট দূরত্বের কথা বলা হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত
১৭ এপ্রিল: ছ’ফুট দূরত্বেও কি আর নিস্তার আছে! জবাবে নিঃসঙ্কোচে ‘হ্যাঁ’ বলতে পারছেন না বিশেষজ্ঞেরা। বরং সাবধান করছেন, শক্তি বাড়িয়ে ভাইরাস এখন এতটাই সংক্রামক, তাকে বাগে আনা ক্রমশ মুশকিল হয়ে পড়ছে। একটি ঘরে একাধিক লোক দূরত্ব বজায় রেখে থাকলেও, তা কী ভাবে বিপজ্জনক হতে পারে, ব্যাখ্যা দিয়েছেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) দুই বিজ্ঞানী।
‘কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড ম্যাথমেটিকস’ বিভাগের অধ্যাপক মার্টিন জ়েড বাজ়ান্ট এবং জন ডব্লিউ এম বুশ-এর তৈরি করা গাইডলাইনটি প্রকাশিত হয়েছে পিএনএএস জার্নালে। তাতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে: একটি নির্দিষ্ট জায়গায় কত জন মানুষ কত ক্ষণ থাকলে কী হতে পারে। তাঁরা মাস্ক পরে থাকলে কী হবে, না-পরে থাকলে কী হবে। ঘরের ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা কতটা দায়ী ইত্যাদি। এই গাইডলাইনটি তৈরি করা হয়েছে ব্যবসায়ী, অফিসকর্মী, স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের কথা মাথায় রেখে। মাস্ক পরে, দূরত্ববিধি মেনে স্কুল-কলেজ-অফিস চালু রাখা আদৌ কতটা নিরাপদ, সেটাই ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এ পর্যন্ত গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মানুষ যখন কথা বলছেন, কাশছেন, হাঁচছেন, গান গাইছেন কিংবা খাচ্ছেন, ভাইরাসটি তখন সংক্রমিত ব্যক্তির মুখ থেকে বেরিয়ে বাতাসে ভাসমান জলকণায় ঝাঁপ দিচ্ছে। বাতাসে মিশে গিয়ে ওই অবস্থায় তারা দীর্ঘক্ষণ থাকতে পারে। এবং কোনও বদ্ধ জায়গার বাতাসে সম্পূর্ণ ভাবে ছড়িয়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এ ভাবেই সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। তার প্রমাণও মিলেছে। বুশ বলেন, ‘‘সরকারের পক্ষ থেকে বারবার ৬ ফুট দূরত্বের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ঘরের ভিতরে, কোনও বদ্ধ জায়গায় এই নিয়ম কতটা খাটে, তা জানতেই আমরা গবেষণা শুরু করি।’’
সম্পূর্ণ ভাবে সংগৃহীত তথ্য ঘেঁটে অঙ্ক কষে গাইডলাইনটি তৈরি করেছেন বুশরা। কোনও বদ্ধ জায়গায় কোনও সংক্রমিত ব্যক্তি ঢুকলে, তাঁর থেকে অন্যদের সংক্রমিত হতে কত ক্ষণ সময় লাগবে, তার হিসেব করার চেষ্টা করা হয়েছে। কোনও দোকান হলে হয়তো সময়টা কয়েক মিনিট, রেস্তরাঁয় তুলনায় জায়গা বড়, তাই হয়তো এক ঘণ্টা। স্কুল-অফিস হলে হয়তো কয়েক ঘণ্টা। এক জন মানুষ একটি বদ্ধ জায়গায় কত ক্ষণ নিরাপদ, তার একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এমআইটি-র
দুই অধ্যাপক।
বুশ বলেন, ‘‘ব্যাপারটা এ রকম: দ্রুত বদলাচ্ছে প্রেক্ষাপট। নিশানা ক্রমশ জায়গা বদল করছে। ফলে তাকে শেষ করা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।’’ গাইডলাইন তৈরি করতে গিয়েও বেশ নাকানি-চোবানি খেতে হয়েছে গবেষকদের।
বাজান্ট এবং বুশ একটি বিষয় স্পষ্ট করে জানিয়েছেন— দূরত্ব বজায় রাখা নিয়ে যে বিধি তৈরি করা হয়েছে, সেটা সব পরিস্থিতিতে যথেষ্ট কার্যকরী নয়। কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে, ওই সহজ নিয়মে বিপদ কাটছে না।
আজ গোটা বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ৩০ লক্ষ ছাড়িয়েছে। টিকাকরণ চলছে, তা সত্ত্বেও এই পরিস্থিতি। উদ্বেগে বিশেষজ্ঞেরা। এর মধ্যে ব্রাজিল, ভারত ও ফ্রান্সের পরিস্থিতি সবচেয়ে জটিল। জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসেব অনুযায়ী, যত সংখ্যক মানুষ এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন, তা ইউক্রেনের কিয়েভ শহর, ভেনেজুয়েলার কারাকাস, পর্তুগালের লিসবনের জনসংখ্যার সমান। শিকাগো শহরের জনসংখ্যা এর থেকে কম, ২৭ লক্ষ। ও দিকে, ফিলাডেলফিয়া এবং ডালাস মিলিয়ে বাসিন্দা ৩০ লক্ষের কাছাকাছি।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রাণহানি আসলে অনেক বেশি। অতিমারির গোড়ার দিকে অনেক মৃত্যু নথিভুক্ত হয়নি। রাষ্ট্রগুলি মৃতের সংখ্যা কম দেখাতে গিয়ে অনেক মৃত্যু লুকিয়েছে বলেও অনুমান বিশেষজ্ঞদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy