Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Israel Gaza Conflict

গাজ়াকে মৃত্যুপুরী বানিয়ে সরল ইজ়রায়েলি সেনা

ফিরে আসা মানুষগুলোর অনেকেই ভাঙা বাড়ির দেওয়ালের আড়ালেই ফের সংসার পাতা শুরু করেছেন।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:৩০
Share: Save:

বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ... দীর্ঘদিন পরে খান ইউনিস প্রদেশের রাজধানী খান ইউনিস শহরে পা রাখলেন সেখানকার বাসিন্দারা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত সে শহর জুড়ে এলোমেলো দমকা গরম হাওয়ায় ভেসে আসে ভেঙে পড়া বাড়ির ধুলো। সেই ধুলোতেই নিষ্পলক তাকিয়ে ছিলেন ৩৮ বছরের মাহা তাহের। চার সন্তানের মা মাহা বিড়বিড় করে বললেন, “আমাদের শহরটা আর নেই। মানুষজন গুঁড়িয়ে যাওয়া বাড়ির তলা থেকে খুঁড়ে বার করছেন প্রিয়জনের মৃতদেহ।”

দীর্ঘ পাঁচ মাস যুদ্ধের পরে গত রবিবার সকালে দক্ষিণ গাজ়া ভূখণ্ড থেকে একটি বাদে বাকি সেনাবাহিনী সরিয়ে নিল ইজ়রায়েল। এখন স্রেফ ‘নহল’ নামের একটি সেনাবাহিনী রয়েছে সেখানে। দক্ষিণ ইজ়রায়েল থেকে গাজ়া ভূখণ্ড পর্যন্ত বিস্তৃত নেটজ়ারিম করিডর সুরক্ষায় রাখা হয়েছে ‘নহল’ বাহিনীকে। এই করিডরের সাহায্যেই উত্তর ও মধ্য গাজ়ায় অভিযান চালায় ইজ়রায়েলি বাহিনী। প্রসঙ্গত গত বছরের ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলে হামাসের আক্রমণের জেরে ১১৭০ জন নিহত হন। সেই সময়েই হামাসের জঙ্গিরা প্রায় ২৫০ জন ইজ়রায়েলিকে পণবন্দি করে। পাল্টা অভিযানে নামে ইজ়রায়েল। এখনও পর্যন্ত ইজ়রায়েলি সেনার আক্রমণে গাজ়ায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৩ হাজার মানুষ।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ড্রোন-চিত্রে গাজ়া ভূখণ্ডের পূর্বচিত্র ও পরের চিত্রের পার্থক্য তীব্র। যুদ্ধের আগের গাজ়া উচ্ছল, আনন্দমুখর। আর যুদ্ধের পরের গাজ়া? স্রেফ ধ্বংসের খতিয়ান।

দক্ষিণ গাজ়া থেকে বাহিনী সরে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে ফিরতে শুরু করেন সেখানকার বাসিন্দারা। রাফা সীমান্ত-সহ বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণশিবির থেকে খান ইউনিস প্রদেশের দিকে রওনা দিয়েছেন বহু মানুষ। রাফা সীমান্তের শরণার্থী শিবির থেকে একের পর এক গাড়িতে ফিরছেন দক্ষিণ গাজ়ার বাসিন্দারা। ধ্বংসস্তূপে খুঁজছেন নিজেদের চার দেওয়ালের আশ্রয়। তাঁদের চলার পথে পড়ছে দারএস সালাম হাসপাতালের ধ্বংসস্তূপ। পুড়ে ঝামা হয়ে গিয়েছেহাসপাতালের দেওয়াল।

ফিরে আসা মানুষগুলোর অনেকেই ভাঙা বাড়ির দেওয়ালের আড়ালেই ফের সংসার পাতা শুরু করেছেন। তাঁদের একাংশই জানালেন, বহু মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু স্রেফ গুঁড়িয়ে গিয়েছে। তাঁদের সত্যিই আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তবু, একটাই শান্তি, নিজেরবাসস্থান, নিজের শহরে ফিরে আসতে পেরেছেন তাঁরা।

তবে, হামাসের বিরুদ্ধে তাঁদের অভিযান বন্ধ হয়নি, স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ইজ়রায়েল। সোমবার মিশরের হস্তক্ষেপে হামাস ও ইজ়রায়েলের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি ইজ়রায়েলের বিদেশমন্ত্রী ইজ়রায়েল কাটজ়ের। হামাস অবশ্য বলেছে, কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই হয়নি।

এর মধ্যে পাল্লা দিয়ে চলছেহুথি জঙ্গিদের হামলা। গত ৭২ ঘণ্টায় ছ’টি ইজ়রায়েলি জাহাজের উপর হামলা চালিয়েছে হুথিরা। ভারত মহাসাগর, আরব সাগর ও লোহিত সাগরের কৌশলী এলাকায় চলেছে এই হামলা।

যদিও কূটনীতিকদের একাংশের দাবি, ইরানের সরাসরি যুদ্ধের হুঁশিয়ারির পরেই সেনা সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইজ়রায়েল। গত বছর অক্টোবরে গাজ়া ভূখণ্ডে ইজ়রায়েলি বাহিনী হামাস-বিরোধী অভিযান শুরু করার পর থেকেই সিরিয়ায় ইরানের অজস্র ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েল। দিন কয়েক আগে সিরিয়ার দামাস্কাসে ইরানি দূতাবাসে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল ইজ়রায়েলের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে। সেই প্রেক্ষিতেই হুঁশিয়ারি দেয় ইরান। পাশাপাশি, আমেরিকাকে ইরান-ইজ়রায়েল সম্পর্ক থেকে দূরে থাকতে বলে। তার পরে গাজ়া থেকে সেনা সরানোর সিদ্ধান্ত ইজ়রায়েলের, দাবি কূটনীতিকদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gaza hamas israel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE