E-Paper

চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ, গাজ়ায় ত্রাণ আটকানোর হুঁশিয়ারি

শান্তিচুক্তির প্রথম ধাপে পণবন্দি শেষ ৪৮ জনকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ছিল হামাসের। যার মধ্যে জীবিত ২০ জনকে মুক্তি দিয়েছিল তারা। বাকি ২৮ জন মৃত বলে জানা যায়। মঙ্গলবার তাদের মধ্যে চার জনের দেহ ফেরত পাঠিয়েছিল হামাস।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:৫৭

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

শান্তিচুক্তির শর্ত মেনে ইজ়রায়েল ও হামাসের মধ্যে সদ্য সংঘর্ষবিরতি শুরু হয়েছে। তার মধ্যেই একে অপরের বিরুদ্ধে নতুন করে শর্ত ভাঙার অভিযোগ তুলল উভয় পক্ষ।

শান্তিচুক্তির প্রথম ধাপে পণবন্দি শেষ ৪৮ জনকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ছিল হামাসের। যার মধ্যে জীবিত ২০ জনকে মুক্তি দিয়েছিল তারা। বাকি ২৮ জন মৃত বলে জানা যায়। মঙ্গলবার তাদের মধ্যে চার জনের দেহ ফেরত পাঠিয়েছিল হামাস। ফরেন্সিক পরীক্ষার পরে আজ ইজ়রায়েল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তিনটি দেহ চিহ্নিত করা গেলেও, চতুর্থ দেহের নমুনা কোনও পণবন্দির সঙ্গে মেলেনি। ফলে হামাসের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ এনেছে তারা। বাকি তিন জনের পরিচয় জানা গিয়েছে। দুই সন্তানের বাবা ৩৫ বছরের উরিয়েল বারুচ, পেশায় শিক্ষাকর্মী ২০ বছরের তামির নিমরোদি এবং ৫৩ বছরের ট্যাক্সিচালক এইতান লেভি। হামাসের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া জীবিত শেষ ২০ পণবন্দির মধ্যে ছিলেন আভিনতান ওর। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর নোভা সঙ্গীত উৎসবে বান্ধবীর সঙ্গে গিয়ে অপহৃত হন দু’জনেই। ২০২৪ সালের ৮ জুন মুক্তি পান ওর-এর বান্ধবী নোয়া আরগামানি। এ বার ওর মুক্তি পাওয়ায়, ৭৩৮ দিন পরে দেখা হল যুগলের। হাসপাতালে দেখা হতেই বান্ধবীকে জড়িয়ে ধরেন ওর। একসঙ্গে ধূমপানও করেন। সেই ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন নোয়া। লিখেছেন, ‘দু’বছর আগে আমাদের অপহরণ করেছিল জঙ্গিরা। মোটরসাইকেলে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সেই ছবি গোটা দুনিয়া দেখেছে। এ বার একসঙ্গে সেরে ওঠার পালা।’ নোয়াকে একটি বাড়িতে অন্য পণবন্দি মহিলা ও শিশুদের সঙ্গে রাখা হলেও ওরকে সুড়ঙ্গে ছোট্ট একটা কুঠুরিতে দু’বছর ধরে বন্দি করে রেখেছিল হামাস। ওরের বাবা বলেছেন, ‘‘ছেলে শারীরিক ভাবে খুবই দুর্বল হয়ে গিয়েছে। তবে মানসিক ভাবে ও যে এখনও অটুট রয়েছে, তার জন্য ঈশ্বরের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’’

এ দিন ইজ়রায়েল থেকে ৪৫টি দেহ ফেরত পাঠানো হয়েছে গাজ়ায়। গাজ়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, দেহগুলি এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। অনেকের হাত, পা শিকলে বাঁধা। কারও কারও চোখও বাঁধা কাপড়ে। বেশ কিছু দেহে গুলির ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। এই অবস্থায় মৃত পণবন্দিদের দেহ দ্রুত ফেরানো না হলে গাজ়ায় ত্রাণ ঢোকা সীমিত করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে ইজ়রায়েল। ফলে প্রমাদ গুনছেন গাজ়ার মানুষ। যে কোনও মুহূর্তে ফের যুদ্ধ শুরু হতে পারে এই আশঙ্কায় ময়দা, তেলের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ফের বাড়তে শুরু করেছে।

অন্য দিকে, গাজ়ার কিছু অংশে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে হামাস। অভিযোগ, শান্তিচুক্তি মেনে ইজ়রায়েলি বাহিনী সরে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হতেই প্যালেস্টাইনে নিজেদের রাশ ধরে রাখতে নানা কাণ্ড ঘটাচ্ছে তারা। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, আট জনকে বেধড়ক মারধরের পরে চোখ বেঁধে রাস্তায় বসিয়ে গুলি করে মারছে বন্দুকধারীরা। ঘাতকদের মাথায় হামাসের সবুজ ফেট্টি বাঁধা। কোনও প্রমাণ ছাড়াই তারা দাবি করেছে, যাঁদের ‘মৃত্যুদণ্ড’ দেওয়া হয়েছে তাঁরা সবাই ‘অপরাধী’ এবং ‘ইজ়রায়েলের ষড়যন্ত্রের শরিক।’ হামাসের তরফে বলা হয়েছে, ইজ়রায়েলের সঙ্গে যারা হাত মিলিয়েছিল তাদের সম্পর্কে সমস্ত তথ্য হামাসের হাতে তুলে দেওয়ার এই শেষ সুযোগ। এর পরে হামাস তাদের ‘ন্যায়সঙ্গত শাস্তি’ দেবে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে গাজ়া এবং স্বাধীন প্যালেস্টাইনি কমিশনের মানবাধিকার সংগঠন। সূত্রের খবর, শান্তিচুক্তির সমস্ত শর্ত পুরোপুরি এখনও মেনে নেয়নি হামাস। মিশরে মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে সমঝোতা চূড়ান্ত করার চেষ্টা এখনও চলছে।ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আগেও বার বার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, হামাস অস্ত্র ত্যাগ না করলে যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ হবে না। এ বার একই কথা শোনা গেল আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখেও। ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘গাজ়ায় শান্তিচুক্তি দ্বিতীয় ধাপে পা রাখল। এ বার হামাসকে অস্ত্রত্যাগ করতেই হবে। হামাস তা না করলে আমরা ওদের অস্ত্র ত্যাগ করাতে বাধ্য হব।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

israel hamas Israel Hamas Conflict

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy