গাজ়া ভূখণ্ডে বোমাবর্ষণ অব্যাহত রাখল ইজ়রায়েল। এর জেরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এখনও পর্যন্ত ৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গাজ়ার স্বাস্থ্য প্রশাসনের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে এমনটাই জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ‘আল জাজ়িরা’। ধারাবাহিক বোমাবর্ষণে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজ়ায় পর্যাপ্ত ত্রাণ না-পৌঁছোলে ৪৮ ঘণ্টায় ১৪ হাজার শিশুর মৃত্যু হতে পারে বলে সতর্ক করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। তার পর অবশ্য কিছু ত্রাণ পৌঁছোয় সেখানে। কিন্তু তাতে অনাহারে মৃত্যু রোখা যায়নি।
গাজ়ার স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, খাদ্যের অভাবে সেখানে এখনও পর্যন্ত ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে প্রত্যেকেই শিশু এবং প্রবীণ ব্যক্তি। অনাহারে আরও কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রবিবার গাজ়ায় ‘সীমিত পরিমাণে’ খাদ্যসামগ্রী ও মানবিক সাহায্য পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছিল ইজ়রায়েল। সেইমতো দীর্ঘ ১১ সপ্তাহ পর সোমবার গাজ়ায় পাঁচটি ত্রাণবোঝাই ট্রাক প্রবেশে অনুমোদন দেয় ইজ়রায়েল। তবে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবিক সহায়তা বিষয়ক কর্তা টম ফ্লেচার জানান, এই ত্রাণ সরবরাহ ‘অত্যাবশ্যক চাহিদার বিশাল সমুদ্রে এক ফোঁটা জলের সমান’। কারণ, যুদ্ধবিধ্বস্ত এই অঞ্চলে প্রায় ২১ লক্ষ মানুষের বাস। তার প্রায় অর্ধেকই শিশু। মাত্র পাঁচটি ট্রাকবোঝাই ত্রাণে তাদের চাহিদা কোনও ভাবেই মিটবে না বলে আশঙ্কাপ্রকাশ করে রাষ্ট্রপুঞ্জ।
অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার দক্ষিণ এবং পূর্ব লেবাননেও বোমাবর্ষণ করে ইজ়রায়েলি সেনা। লেবাননের শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজ়বুল্লার সঙ্গে গত নভেম্বরে সংঘর্ষবিরতি হয়েছিল ইজ়রায়েলের। তার পর থেকে লেবাননে এত বড় মাত্রার হামলা চালায়নি ইজ়রায়েল। বৃহস্পতিবারের এই হামলায় অন্তত এক জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন:
ইতিমধ্যে গাজ়ায় হামলা বন্ধের জন্য ইজ়রায়েলের উপর চাপ বেড়েছে আন্তর্জাতিক স্তরেও। গাজ়ায় নতুন করে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ইজ়রায়েলের পাশে নেই ‘বন্ধু’রাষ্ট্রগুলিও। সোমবারই নিজমুখে সে কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। সেই আবহে ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং কানাডাও হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, ইজ়রায়েল যদি গাজ়ায় সামরিক অভিযান বন্ধ না করে এবং মানবিক সাহায্য প্রবেশে বাধা দেয়, তা হলে ‘কড়া পদক্ষেপ’ করা হবে। তবে গাজ়ায় ত্রাণ পাঠাতে রাজি হলেও হামাসের বিরুদ্ধে ইজ়রায়েলের অভিযান থামেনি।
স্বাধীনতাপন্থী প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বরের হামলার পরেই অভিযান শুরু করেছিল তেল আভিভ। কাতার, আমেরিকা এবং মিশরের উদ্যোগে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় দু’পক্ষ। তবে প্রথম দফার ওই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মার্চের গোড়ায় ফের গাজ়ায় হামলা শুরু করে ইজরায়েলি সেনা। একই সঙ্গে গাজ়া ভূখণ্ডে খাদ্য ও ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করা-সহ নানা নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।