Advertisement
E-Paper

‘উইল ইউ শাট আপ, ম্যান?’

ছিল বিতর্কসভা, হয়ে দাঁড়াল গলাবাজি করে পরস্পরকে খাটো করে দেখানোর হাট।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২০ ০২:৩৫
যুযুধান: ক্লিভল্যান্ডের ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটের’ মঞ্চে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন। এএফপি

যুযুধান: ক্লিভল্যান্ডের ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটের’ মঞ্চে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন। এএফপি

তূণীর তৈরিই ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটের’ প্রথম দিনে তাই তিনি যে প্রতিপক্ষ জো বাইডেনকে দম ফেলারও ফুরসত দেবেন না, সেটা মোটামুটি জানাই ছিল। বাইডেনের উদ্দেশে তাই বিশেষজ্ঞরা পই-পই করে বলেছিলেন, ট্রাম্প ব্যক্তিগত আক্রমণ করলে গায়ে মাখবেন না। কাঁধ ঝাঁকিয়ে মুখের হাসিটা ধরে রাখুন। কিন্তু সে আর হল কই! ক্লিভল্যান্ডে ওয়েস্টার্ন রিজ়ার্ভ ইউনিভার্সিটির বিতর্ক-মঞ্চে দেখা গেল— সাতাত্তরের বাইডেন মুখ খুললেই বাগড়া দিচ্ছেন ট্রাম্প। এক বার নয়, নব্বই মিনিটের মধ্যে পাক্কা ৭৩ বার। বিতর্কের সঞ্চালক বাহাত্তরের ক্রিস ওয়্যালেস কার্যত জোড়হস্তে থামাতে চাইলেন ট্রাম্পকে। রীতিমতো হোমওয়ার্ক করে আসা প্রেসিডেন্ট আপন বেগেই পাগলপারা। মাঝখান থেকে ট্রাম্পের লাগাতার আক্রমণে মেজাজ হারালেন বাইডেন। ট্রাম্পকে ঘুরিয়ে এক বার বললেন, ‘ক্লাউন’, একাধিক বার ‘মিথ্যুক’। আর এক বার অবিকল ট্রাম্পকেই নকল করে— ‘উইল ইউ শাট আপ, ম্যান?’

ছিল বিতর্কসভা, হয়ে দাঁড়াল গলাবাজি করে পরস্পরকে খাটো করে দেখানোর হাট। হোয়াইট হাউসের দৌড়ে নিজেকে যোগ্যতম প্রমাণ করাটা চ্যালেঞ্জ ছিল বাইডেনের কাছে। ট্রাম্পের সামনে সুযোগ ছিল, ভোটের আগে শেষ প্রহরে নিজের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দু’জনের কেউই সে-পথ মাড়ালেন না। ৯০ মিনিট ধরে চলল লাগাতার চলল শুধু খেয়োখেয়ি। ‘প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক’ যে ভোটে আদৌ কোনও প্রভাব ফেলবে না, সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় তা নিয়ে স্পষ্ট মত দিয়েছিলেন ৪৪ শতাংশ ভোটার। দোলাচলে থাকা বাকি যে অংশটা হয় টিকিট কেটে, না হয় টিভি-নেটে মুখ গুঁজে ক্লিভল্যান্ডের বিতর্কসভায় ছিলেন, শেষমেষ তাঁরাও দিশাহীন। কে কতটা নীচে নামলেন, তা নিয়েই আলোচনা চলল দিনভর।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, গত ষাট বছরের প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটের ইতিহাসে এটাই ছিল সবচেয়ে কুৎসিত। চলতি করোনা-ত্রাসের আবহে ঠিকই ছিল, বিতর্কের শুরুতে পরস্পরের হাত মেলাবেন না ট্রাম্প-বাইডেন। কাকতালীয় ভাবে সেটাই যেন আগাগোড়া সুর বেঁধে দিল পরের নব্বই মিনিটের।

১৫ মিনিট করে ছ’টি স্লটে যে বিষয়গুলি বিতর্কের জন্য নির্ধারিত ছিল, তার মধ্যে ‘প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের আয়কর’ ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে ট্রাম্পের ‘কারচুপি’ ফাঁস হতেই অস্ত্র পেয়ে গেলেন বাইডেন। দু’বছরে মাত্র ৭৫০ ডলার করে আয়কর দিয়েছিলেন ট্রাম্প! ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছর এক ডলারও দেননি। এই খবর বেরোনোর পরের দিনই নিজের আইটি-রিটার্ন ফাইল প্রকাশ্যে আনেন বাইডেন। জানান, ২০১৯-এই তিনি ৩ লক্ষ ডলার আয়কর দিয়েছেন। মঞ্চেও এ নিয়ে সরাসরি বিঁধলেন ট্রাম্পকে। ট্রাম্প কিন্তু নিজস্ব ভঙ্গিতেই কাঁধ ঝাঁকিয়ে বাউন্সার এড়ালেন। বললেন, এই আয়কর-রিপোর্ট সম্পূর্ণ নয়। আর এমন কর-বন্দোবস্ত নাকি সব ব্যবসায়ীই করে থাকেন। কেউ না-করলে, সে বোকা!

মঞ্চে নামার আগে কাল বিশেষজ্ঞরা বাইডেনের উদ্দেশে বলেছিলেন, গায়ে একটু কাদা লাগলে লাগুক। কিন্তু নিজেকে স্মার্ট প্রতিপন্ন করাটাই সবচেয়ে জরুরি। ট্রাম্প যেন সেখান থেকেই নির্যাসটুকু নিয়ে মঞ্চে বিঁধলেন বাইডেনকে— ‘‘আমাকে স্মার্টনেস দেখাবেন না। ৪৭ বছর ধরে আপনি নিজে কিছুই করেননি।’’ বিতর্কসভায় ‘ফ্যাক্টচেকারের’ ভূমিকা নেওয়া বাইডেন কার্যত এর জবাবই দিতে পারেননি।

তবে প্রশ্ন বাইডেন করেছিলেন। যেমন-যেমন সুযোগ পেয়েছিলেন আর কী! আমেরিকায় ২ লক্ষ করোনা-মৃত্যু নিয়ে তিনি খানিক সুর চড়াতেই ট্রাম্প আবার চলে গেলেন কাউন্টার-অ্যাটাকে! কোনও পরিসংখ্যান-তত্ত্ব ছাড়াই বলে বসলেন, ‘‘আপনি ক্ষমতায় থাকলে তো সংখ্যাটা এখনই ২০ লক্ষ হয়ে যেত!’’ হেলথ কেয়ার নিয়েও কার্যত প্রশ্ন এড়ালেন ট্রাম্প।

নির্বাচনী স্বচ্ছতা প্রসঙ্গে আবার বাইডেন পরিবারের ইউক্রেনের সঙ্গে অবৈধ বাণিজ্য-যোগ টেনে আনেন ট্রাম্প। কোণঠাসা হওয়ারই কথা। কিন্তু বাইডেন করলেন উল্টোটা— সরাসরি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘সামনেই ভোট, এখন আর আমার-আপনার পরিবার নয়— সবার পরিবার আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার কথা।’’

Joe Biden Donald Trump
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy