Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Internationa News

৭ বছর ইকুয়েডর দূতাবাসের আশ্রয়ে থাকার পর লন্ডনে গ্রেফতার জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

পুলিশ সূত্রের খবর, ইকুয়েডর দূতাবাসের পক্ষ থেকেই পুলিশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তারপরই লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি দল দূতাবাসে গিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

সংবাদ সংস্থা
লন্ডন শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯ ১৯:২২
Share: Save:

সাত বছরের টানাপড়েন। ইকুয়েডরে রাজনৈতিক পুনর্বাসনে থাকা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে গ্রেফতার করতে কম চেষ্টা হয়নি। শেষ পর্যন্ত সেই প্রচেষ্টা সফল হল। লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে গ্রেফতার উইকিলি‌ক্‌সের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জ। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড সূত্রে খবর, একটি যৌন হেনস্থা ও ধর্ষণের মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ না করায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য দিকে ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো জানিয়েছেন, বার বার আন্তর্জাতিক চুক্তি ভঙ্গ করায় অ্যাসাঞ্জের ‘রাজনৈতিক পুনর্বাসন’ তুলে নেওয়া হয়েছিল। যদিও উইকিলিক‌্‌সের দাবি, ‘আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ’ করে গ্রেফতার করা হয়েছে অ্যাসাঞ্জকে।

প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। ধর্ষণ ও যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠায় অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে সুইডেন সরকার। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেন অ্যাসাঞ্জ। তাঁর পাল্টা অভিযোগ ছিল, মার্কিন সরকারের একাধিক গোপন বার্তা ফাঁস করে দেওয়ার জন্যই তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে। তাঁকে সুইডেন থেকে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তবে পরের মাসেই লন্ডন পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন অ্যাসাঞ্জ। কিন্তু জামিন পাওয়ার পরই উধাও হয়ে যান। অবশেষে ২০১২ সালের অগাস্টে অ্যাসাঞ্জকে রাজনৈতিক পুনর্বাসন দেওয়ার ঘোষণা করে ইকুয়েডর সরকার।

তার পর থেকেই কূটনৈতিক রক্ষাকবচ নিয়ে অ্যাসাঞ্জের অস্থায়ী আস্তানা ছিল লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতবাস। বৃহস্পতিবার সেই দূতাবাস থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করে তাঁকে হেফাজতে নিয়েছে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। পুলিশ সূত্রের খবর, ইকুয়েডর দূতাবাসের পক্ষ থেকেই পুলিশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তারপরই লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি দল দূতাবাসে গিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। অন্য দিকে ইকুয়েডরের তরফে জানা গিয়েছে, রাজনৈতিক পুনর্বাসনের রক্ষাকবচ তুলে নিতেই গ্রেফতারির প্রক্রিয়া শুরু হয়। দূতাবাস থেকে তাঁকে বের করার সময় দেখা যায়, এক মুখ ভর্তি পাকা দাড়ি। চুলও পাকা। পুলিশ সূত্রে খবর, অ্যাসাঞ্জকে সেন্ট্রাল লন্ডন পুলিশ স্টেশনে রাখা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব তাঁকে ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পেশ করা হবে।

আরও পড়ুন: ২০০৪ মনে আছে? সব ভবিষ্যদ্বাণীই উল্টে যাবে, মোদী অপরাজেয় নন’, বললেন সনিয়া

আরও পড়ুন: ‘স্নাইপার নিশানায় রাহুল! কেন্দ্র বলল মোবাইলের আলো

অ্যাসাঞ্জ গ্রেফতার হওয়ার পর ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র সচিব সাজিদ জাভিদ টুইট করেন, ‘‘আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ এখন পুলিশের জিম্মায় এবং ব্রিটেনের বিচার ব্যবস্থার মুখোমুখি হবে। ইকুয়েডর সরকার এবং পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়।’’ অন্য দিকে ব্রিটেনের বিদেশ মন্ত্রী স্যার অ্যালান ডানকান বলেন, ‘‘দু’দেশের (ইকুয়েডর ও ব্রিটেন) মধ্যে আলোচনা চলবে।

অন্য দিকে ৪৭ বছরের অ্যাসাঞ্জের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, ইকুয়েডর দূতাবাস ছাড়তে কোনও ভাবেই রাজি ছিলেন না তিনি। আগের মতোই তাঁর আশঙ্কা, উইকিলিকসে হোয়াইট হাউজের বহু বার্তা ফাঁস করায় তাঁকে প্রত্যর্পণের মাধ্যমে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হবে এবং সেখানেই তাঁর বিচার হবে। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হল না। কারণ ইকুয়েডর রাজনৈতিক পুনর্বাসনের রক্ষাকবচ তুলে নেওয়ার পর অ্যাসাঞ্জের সামনে গ্রেফতার হওয়া ছাড়া আর কোনও বিকল্প ছিল না। অ্যাসাঞ্জের গ্রেফতারির পরই টুইট করে ইকুয়েডরকে কাঠগড়ায় তুলেছে উইকিলিকস। তাদের অভিযোগ, অনৈতিক ভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে রাজনৈতিক পুনর্বাসন তুলে নিয়েছে ইকুয়েডর সরকার।

পেশায় কম্পিউটার প্রোগ্রামার অ্যাসাঞ্জ ২০০৬ সালে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১০ সালে তাঁর সংস্থা সারা বিশ্বের বহু কেবল বার্তা ফাঁস করে। তার পর থেকেই আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। সেই সময় মার্কিন সরকারের বহু গোপন বার্তা ফাঁস করে দেওয়ায় আমেরিকার কোপে পড়েন অ্যাসাঞ্জ। তবে এত দিন ইকুয়েডরের আশ্রয়ে কূটনৈতিক রক্ষাকবচের আড়ালে থাকায় তাঁকে গ্রেফতার করা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE