আতঙ্কের মুখ: সন্ত্রাসের হাত থেকে রেহাই নেই শিশুরও। অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাসপাতালের পথে। শনিবার কাবুলে। ছবি: রয়টার্স।
ঠিক সাত দিনের ব্যবধান। তালিবানি হামলায় ফের রক্তাক্ত আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল।
গত শনিবার কাবুলের অভিজাত ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ঢুকে পড়ে তাণ্ডব চালিয়েছিল কয়েক জন তালিবান জঙ্গি। ১২ ঘণ্টার অভিযানের পরে হোটেলটিকে জঙ্গিমুক্ত করতে পেরেছিল আফগান সেনা বাহিনী। দেশ-বিদেশের নাগরিক মিলিয়ে সেই হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ২৫ জনের। সেই হামলার ঠিক এক সপ্তাহের মাথায়, আজ দুপুরে এক শক্তিশালী আত্মঘাতী বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা কাবুল শহর। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াহিদ মাজরোহ জানিয়েছেন, হামলায় ৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন শ’দেড়েক মানুষ। হতাহতদের মধ্যে সিংহ ভাগই সাধারণ মানুষ বলে জানিয়েছে আফগান সরকার।
কড়া নিরাপত্তায় ঘেরা অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের পুরনো ভবনের একেবারে কাছের একটি চেকপোস্টে হয় বিস্ফোরণটি। ওই এলাকায় বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার দফতর রয়েছে। তালিবানের সঙ্গে মধ্যস্থতাকারী ‘পিস কাউন্সিল’-এর দফতরও ঘটনাস্থল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। মূলত ওই দফতরকেই হামলার নিশানা করা হয়েছিল বলে ধারনা। তবে ওই সংস্থার মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে তাঁদের সব কর্মীই সুরক্ষিত রয়েছেন। ঘটনাস্থলের কাছেই জামুরিয়ত হাসপাতাল। এক ইতালীয় স্বেচ্ছেসেবী সংস্থা দ্বারা পরিচালিত কাবুলের অন্যতম বড় একটি হাসপাতালও ওই চত্বরেই রয়েছে। আর তার সুযোগই নেয় ওই আত্মঘাতী জঙ্গি।
আরও পড়ুন: সেতু ভেঙে নদীতে বাস, মহারাষ্ট্রে মৃত অন্তত ১৩
আরও পড়ুন: ভ্যান গঘের ছবিতে না, ট্রাম্পকে সোনার কমোড অফার করল মিউজিয়াম
রাজধানী কাবুলে যেখানে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলি রয়েছে, সেখানেই ওই বিস্ফোরণ ঘটে। ছবি: রয়টার্স।
বিস্ফোরক বোঝাই অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে আজ হামলা চালায় ওই তালিবান জঙ্গি। দুপুর তখন একটা। জামুরিয়ত হাসপাতালে এক রোগীকে নিয়ে যাচ্ছে বলে প্রথম চেকপোস্টটি পেরিয়ে গিয়েছিল সে। দ্বিতীয় চেকপোস্টের কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর সন্দেহ হওয়ায় গাড়িটি আটকানো হয়। সঙ্গে সঙ্গেই নিজেকে উড়িয়ে দেয় ওই জঙ্গি।
বিকট আওয়াজে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় শহরের আকাশ। আর মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে যায় কাবুলের অন্যতম ব্যস্ত এলাকার ছবিটা। বিস্ফোরণের কয়েক সেকেন্ড পরেই রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায় লাশের স্তূপ। রক্তে ভেসে যাচ্ছে এলাকা। কেউ রাস্তায় শুয়ে আর্তনাদ করছেন। নিহত ও আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কুড়িটি অ্যাম্বুল্যান্স আনা হয়। আহতদের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কাজনক। নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে মনে করছে প্রশাসন।
আজকের বিস্ফোরণ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরের বাড়ি-ঘরের দরজা-জানলাও কেঁপে উঠেছে। বিস্ফোরণস্থলের একেবারে কাছেই দোকান আমিনুল্লাহের। বললেন, ‘‘ভয়ঙ্কর আওয়াজের সঙ্গে গোটা বাড়িটাই কেঁপে ওঠে। আমার দোকানের সব কাচ ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি রাস্তায় রক্তের স্রোত। কত মানুষ নিথর। কেউ বা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।’’
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা বার্তায় তালিবানই আজকের হামলার দায় স্বীকার করেছে। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে হামলার দায়ও একই ভাবে নিয়েছিল তারা। আফগান গোয়েন্দারা কিছু দিন আগেই সতর্ক করে জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিদেশিদের উপর বড়সড় হামলার ছক কষছে আইএস জঙ্গিরা। রেস্তোরাঁ, শপিং মল বা যে সব হোটেলে বিদেশিরা থাকেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে সেখানে। দিন তিনেক আগে জালালাবাদে একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দফতরে হামলা চালিয়েছিল আইএস জঙ্গিরা। দু’জনের মৃত্যু হয় তাতে। তার পর আজ ফের আঘাত হানল তালিবান জঙ্গিরা। দেশের মাটি থেকে বিদেশি বাহিনী না সরালে এই ধরনের হামলা আরও হবে আগে ভাগেই হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে তারা।
আজকের বিস্ফোরণের কড়া নিন্দা করেছে নয়াদিল্লি। হোটেলের হামলার সময়ও একই প্রতিক্রিয়া জানায় ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলাকারী আর তাদের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আফগান সরকারের প্রতি ভারত সাহায্যের সব রকম হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত বলেও জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy