Advertisement
E-Paper

কিম-মুনের বৈঠকে যুদ্ধ শেষের বার্তা

যুদ্ধ শেষের ঘোষণার পরেই জানা যায়, কোরীয় উপদ্বীপ পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রকল্প নিয়ে কাজ করবে বলে সম্মত হয়েছেন দুই নেতা। বস্তুত আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশের আগ্রহ ছিল এই বিষয়ে কিম কী বলেন, তা জানতে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৮ ১৫:৫৪

সাড়ে ছ’দশকেরও বেশি সময়ের ব্যবধান। দুই দ্বীপরাষ্ট্রকে ভাগ করছে যে সামরিক রেখা, সেটি পেরিয়ে এই প্রথম উত্তর কোরিয়ার কোনও রাষ্ট্রনেতার পা পড়ল দক্ষিণ কোরিয়ায়। শুক্রবার সকালে দু’দেশের নেতা হাতে হাত মেলালেন। কথা বললেন। আর সেনামুক্ত অঞ্চলে (ডিমিলিটারাইজড জোন) সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী রইল উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়া-সহ সারা পৃথিবী।

১৯৫৩ সালের কোরীয় যুদ্ধের পরে দু’দেশের তিক্ততার শুরু। দীর্ঘ ৬৫ বছরের যন্ত্রণার এ বার শেষ। সে যুদ্ধে ইতি টানার কথা ঘোষণা করে শান্তির শপথ নিলেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন। সামরিক রেখা পেরিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় যখন পা দিলেন কিম, তখন তাঁর চারপাশ থেকে সরে গিয়েছেন সরকারি সব স্তরের কর্মী। তিনি একাই এগিয়ে যান এবং বলেন, এটা শান্তির ‘প্রথম ধাপ।’ তার পরে হাসিমুখে দু’নেতার করমর্দন, ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে ছবি। সব ছকে বাঁধা। হঠাৎই প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের দিকে হাত বাড়ালেন কিম, যেন বললেন, ‘চলুন ও পারটাও একটু ঘুরে আসি!’ ভিডিয়োবন্দি হল সে দৃশ্য। মুহূর্তের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ঘুরে এলেন কিমের দেশ। আবার ফিরেও এলেন। সোলের সংবাদমাধ্যমের দাবি, রাষ্ট্রনেতাদের বৈঠক পরিকল্পনামাফিক এগোয়। কিন্তু কিম যে ভাবে ডেকে নিয়ে গেলেন মুনকে, তা মোটেই ‘চিত্রনাট্যে’ লেখা ছিল না।

যুদ্ধ শেষের ঘোষণার পরেই জানা যায়, কোরীয় উপদ্বীপ পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রকল্প নিয়ে কাজ করবে বলে সম্মত হয়েছেন দুই নেতা। বস্তুত আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশের আগ্রহ ছিল এই বিষয়ে কিম কী বলেন, তা জানতে। কিম সরাসরি এ বিষয়ে মুখই খোলেননি। শুধু সইসাবুদেই পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষান্ত দিয়েছেন কিম। আর তাই এ ব্যাপারে গোটা বিশ্বের উদ্বেগ এতটুকু কমেনি। কূটনীতিকদের ধারণা, কিম তাঁর ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে যতই সক্রিয় হোন, তাঁর একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার স্মৃতি এত দ্রুত মুছে যাবে না মানুষের মন থেকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘‘ভাল জিনিস ঘটছে। সময়ই সব বলবে।’’ ট্রাম্পের বক্তব্যের শেষটুকু দেখে অনেকেই মনে করছেন, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে যে সংশয় জিইয়ে রেখেছেন কিম, মার্কিন প্রেসিডেন্টের ইঙ্গিত সে দিকেই। দু’দেশকে অভিনন্দন জানিয়েছে চিন এবং রাশিয়া।

পাশাপাশি বসে স্বাক্ষরের আগে দুই নেতা একান্তে আধ ঘণ্টা আলোচনা করেন। সেনামুক্ত অঞ্চলে পানমুনজম গ্রামের ‘পিস হাউস’-এ বসে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ বছরের শেষে পিয়ংইয়ং যাবেন প্রেসিডেন্ট মুনও। যুদ্ধ শেষের ঘোষণা শুধু নয়, দু’দেশ একটি ‘মৈত্রী দফতর’ তৈরি করবে যেখানে যুদ্ধের জেরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া মানুষজন ফিরে পাবেন আপনজনকে। জুনের মাঝামাঝি ফের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের কথাও হয়েছে। কথা হবে দু’দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরও।

স্বাক্ষর শেষে দুই নেতা জড়িয়ে ধরেন একে অপরকে। কিম বলেন, ‘‘এই মুহূর্তটা কবে আসবে, তার জন্য আমরা বহু দিন অপেক্ষা করেছিলাম, আমরা সবাই। যে পথ ধরে আজ আমি এগিয়েছি, আশা রাখি উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রত্যেক নাগরিক সে পথে এগোবেন। যুদ্ধের ভয় ভুলে কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি-সমৃদ্ধি নিয়ে আমরা বাঁচব।’’ মুনও বলেন, ‘‘আর যুদ্ধ হবে না। শান্তির নতুন যুগ শুরু হল।’’ প্রথম-পর্ব শেষের পরে দুই নেতা নিজ নিজ দেশে মধ্যাহ্নভোজ সারেন। বিকেলে ফের দেখা। দু’দেশের মাটি আর জল মিশিয়ে পাইন গাছ পোঁতেন দু’জনে। পরে একসঙ্গে নৈশভোজ। আরও কিছু স্বাক্ষর এবং যৌথ বিবৃতিও দেন তাঁরা।

উপরের ছবিগুলো: সীমা-পার: করমর্দন দুই নেতার। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের দিকে হাত বাড়ালেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন। ছক ভেঙে কিমও কিছু ক্ষণের জন্যে মুন জায়েকে ঘুরিয়ে আনলেন তাঁর দেশে। ক্যামেরাবন্দি হল সেই দৃশ্য। শুক্রবার কোরীয় উপদ্বীপের সীমান্তবর্তী পানমুনজম গ্রামে। এপি

Kim Jong Un Moon Jae-in North Korea South Korea
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy