নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক তৎপরতা বাড়াচ্ছে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ। জেলায় জেলায় তো বটেই, ঢাকার রাজপথে মিছিল বার করছে একদা বাংলাদেশের এই শাসকদল। গত কালই ঢাকা শহর এবং সংলগ্ন এলাকায় এক দিনে ২০ থেকে ২৫টি মিছিল হয়েছে বলে দাবি আওয়ামী লীগ নেতাদের। তাঁদের যুক্তি, দলের কর্মী-সমর্থকদের উপরে মুহাম্মদ ইউনূস সরকার দমননীতিতে চালাচ্ছে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের। তাই দলের কাছে রাস্তাই একমাত্র রাস্তা।
গত ১০ মে আওয়ামী লীগকে কার্যত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সে দেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকার। কয়েক দিন পরে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন শেখ হাসিনার দলের বৈধতা বাতিল করে দেয়। যার পরে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না আওয়ামী লীগ। এই জোড়া ধাক্কার পর থেকে বিভিন্ন প্রান্তে আওয়ামী লীগের তৎপরতা বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। মিছিল যেমন হচ্ছে, তেমনই দেশের বাইরে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা প্রতিক্রিয়াও দিচ্ছেন।
প্রায় প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের কর্মসূচি থাকছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঝটিকা মিছিল করছেন, তাতে ভিড় হচ্ছে চোখে পড়ার মতো। দলের এক নেতা জানিয়েছেন, নজরকাড়া বিষয় হল, ইউনূস সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর অলিগলিতে মিছিল করতেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা। কিন্তু দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণার পরে সেই মিছিলগুলি রাজপথে চলে এসেছে। ওই ধরনের মিছিলের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনই বাড়ছে মিছিলের বহরও। দিন কয়েক আগে ঢাকার মহম্মদপুরে কল্যাণপুর থেকে শ্যামলী পর্যন্ত হয়েছিল আওয়ামী লীগের মিছিল। সাম্প্রতিক কালে এত বড় ছিল ঢাকায় হয়নি। উত্তরায় পর পর কয়েকদিন মিছিল হয়েছে। ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের উত্তরের নেতারা মিছিল করেছেন। বাড্ডা, রামপুরা, ধনিয়া, ধানমুন্ডি, ডেমরা, ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় মিছিল হচ্ছে। গত রবিবার ২০-২৫টি মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগ নেতাদের একটা বড় অংশের মতে, এখন দলের অস্বিত্বের সঙ্কট। তাঁদের অভিযোগ, ইউনূস সরকার দেশে ‘অঘোষিত মার্শাল ল’ জারি করেছে, গোটা দেশকে এই সরকার ‘কারাগারে পরিণত’ করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম টেলিফোনে আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘আমাদের দলকে নিষিদ্ধ করায় কর্মী-সমর্থকেরা ক্ষুব্ধ। তাঁদের উপরে যে দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে, তাতে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ছাড়া উপায় নেই। তাই মরিয়া হয়ে তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন।’’ আগামী দিনে লড়াই আরও জোরদার হবে দাবি করে বাহাউদ্দিন বলেন, ‘‘এই দখলদার সরকার মানুষের জীবনকে দুঃসহ করতে তুলেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম দিনে দিনে বাড়ছে। সরকারের মদতপুষ্ট জঙ্গি বাহিনীর নির্যাতনে দিশাহারা মানুষ আমাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন।’’
আওয়ামীর মিছিলকে তেমন গুরুত্ব
দিচ্ছে না বিএনপি। তারা বরং প্রকারান্তে াঅন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী করেছে। দলের প্রাক্তন সাংসদ তথা বিএনপি-র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হুসেন আলাল বলেন, ‘‘একটি দলের চাপে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করে যদি আইনি পদ্ধতিতে করা হত, তা হলে ঠিক হত। এ রকম মিছিল করে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা বন্ধ করা যেত।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)