Advertisement
E-Paper

হিজাব বিধির সমর্থক, খামেনেইয়ের ঘনিষ্ঠ সেই কট্টরপন্থী সামরিক কর্তার কন্যার বিয়ে পশ্চিমী কায়দায়! বিতর্ক

ইরানের অন্দরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার ঘনিষ্ঠ ওই আধিকারিকের ভূমিকা নিয়ে। তেহরানের সব সরকারি পদ থেকে তাঁর ইস্তফার দাবি উঠেছে। জনসমক্ষে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে— এমন দাবিও শোনা গিয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:৩১
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। তাঁর ঘনিষ্ঠ অ্যাডমিরাল আলি শামখানির কন্যার বিয়ের ভিডিয়ো ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। তাঁর ঘনিষ্ঠ অ্যাডমিরাল আলি শামখানির কন্যার বিয়ের ভিডিয়ো ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে। ছবি: সংগৃহীত।

পশ্চিম এশিয়ার শিয়া প্রধান রাষ্ট্র ইরানে মহিলাদের জন্য কড়া পোশাকবিধি রয়েছে। সে দেশের আইন অনুযায়ী, মহিলাদের সর্বত্র হিজাব পরে থাকতে হয়। না-মানলে কড়া শাস্তির নিদানও রয়েছে। কিন্তু এই পোশাক ফতোয়া কি শুধুই ইরানের সাধারণ মহিলাদের জন্য? ক্ষমতার অলিন্দে যাঁরা ঘোরাফেরা করেন, তাঁরা কি এ সবের ঊর্ধ্বে? সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ইরানের এক বিয়ের ভিডিয়োয় সেই প্রশ্নই উঠে এসেছে।

যাঁর বিয়ের ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, তিনি কোনও সাধারণ মহিলা নন। তিনি ইরানের প্রতিরক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তার অন্যতম শীর্ষ আধিকারিক অ্যাডমিরাল আলি শামখানির কন্যা। শামখানি শুধু তেহরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ব্যক্তিত্বই নন, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের ঘনিষ্ঠ বৃত্তেরও অন্যতম মুখ তিনি। পারমাণবিক কর্মকাণ্ড নিয়ে আমেরিকা এবং ইরানের মধ্যে সর্বশেষ যে আলোচনা হয়েছে, তার-ও দায়িত্বে ছিলেন তিনি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘নিউ ইয়র্ক টাইম্‌স’ অনুসারে, ইরানে মহিলাদের উপর কঠোর নিয়মবিধি চাপানোর বিষয়টির তত্ত্বাবধানেও ছিলেন শামখানি। মহিলাদের উপর এই কড়াকড়ির বিরুদ্ধে যাঁরা বিক্ষোভ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছিলেন খামেনেই-ঘনিষ্ঠ এই অ্যাডমিরালই।

সম্প্রতি শামখানির কন্যার বিয়ের একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম। গত এপ্রিলে শামখানি-কন্যার বিয়ে হয়। ‘নিউ ইয়র্ক টাইম্‌স’ জানাচ্ছে, বিয়ের সময়ে তোলা ওই ভিডিয়োটি সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে সমাজমাধ্যমে। তার পরে নিমেষে তা ‘ভাইরাল’ হয়ে যায়। ৫৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, কন্যা সেতায়েশকে নিয়ে একটি করিডর দিয়ে বিয়ের হলের দিকে যাচ্ছেন অ্যাডমিরাল শামখানি। শামখানির পরনে স্যুট। তবে ইরানের সাধারণ মহিলাদের যেমন হিজাব পরে থাকতে দেখা যায়, কনের বেশ তেমন নয়। সেতায়েশের পরনে সাদা রঙের একটি পশ্চিমী বিয়ের পোশাক। কাঁধ খোলা একটি লো-কাট পোশাক। নেই হিজাবও। শামখানির স্ত্রীকেও দেখা গিয়েছে ভিডিয়োতে। তিনি পরে ছিলেন নীল রঙা একটি পশ্চিমী পোশাক। তাঁরও মাথায় হিজাব নেই। ভিডিয়োয় অন্য যে মহিলাদের দেখা গিয়েছে, তাঁদেরও কাউকে হিজাব পরতে দেখা যায়নি।

ভিডিয়োটি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই তেহরানের রাজনীতিতে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। আলোচনা শুরু হয়েছে ইরানের আমজনতার মধ্যেও। শামখানিকে ঘিরে যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে, শিয়া প্রধান ইরানে উঁচুতলার আধিকারিকদের মধ্যে এমন ঘটনা খুব কমই দেখা যায়। তাঁকে ‘দু’মুখো’ বলে কটাক্ষ করতে শুরু করেছেন অনেকে। অভিযোগ উঠছে, জনসমক্ষে তিনি ‘ধর্মপরায়ণ’ হিসাবে নিজেকে প্রচার করেন। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের জীবনযাবন করেন তিনি।

অতীতে হিজাব না-পরার জন্য মহিলাদের উপর বিভিন্ন ধরনের কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছিল। ২০২২ সালে ইরানি তরুণী মাহসা আমিনিকেও হিজাব না পরার ‘অপরাধে’ তুলে নিয়ে গিয়েছিল ইরানের নীতিপুলিশ। ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। মাহসার মৃত্যুর পর গোটা ইরানে যখন প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গিয়েছিল। গত বছর পোশাক-ফতোয়ার প্রতিবাদে ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসলামিক আজ়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া আহু দারইয়াই প্রকাশ্যে অন্তর্বাস পরে হেঁটেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল ইরানের পুলিশ।

পরে ইরানি প্রশাসন জানায়, দারইয়াই মানসিক ভাবে সুস্থ নন। একাধিক সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়, তাঁকে এক মানসিক রোগের চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে। ওই মানিসক রোগের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে দারইয়াই ছাড়া পেয়েছেন কি না, তা পরবর্তীতে প্রকাশ্যে আসেনি। গত বছরের শেষ দিকে কাঁধখোলা পোশাকে সঙ্গীত পরিবেশন করার জন্য এক মহিলা শিল্পীকেও শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছিল ইরানে।

সেই ইরানেই এ বার খামেনেই-ঘনিষ্ঠের কন্যার বিয়ের ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই হইচই পড়ে গিয়েছে। ইরানের সংস্কারপন্থী সংবাদপত্র ‘শার্গ’ সোমবার প্রথম পাতায় শামখানির একটি ছবি-সহ ‘কলঙ্কে চাপা পড়ে গিয়েছেন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘নিউ ইয়র্ক টাইম্স’ জানাচ্ছে, ইরানের অন্দরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে শামখানির ভূমিকা নিয়ে। তেহরানের সব সরকারি পদ থেকে তাঁর ইস্তফার দাবি উঠেছে। জনসমক্ষে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে— এমন দাবিও শোনা গিয়েছে। ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আমির হোসেন মোসাল্লা ওই ভিডিয়ো প্রসঙ্গে বলেন, “ইরানে শাসনের দায়িত্বে থাকা কর্তারা নিজেরাই নিজেদের আইনে বিশ্বাস করেন না। তাঁরা শুধু সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করতে জানেন।”

Iran Tehran Wedding Video
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy