পদাতিক: দ্য হেগ শহরে আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতের সামনে মমতা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
সকাল ন’টায় প্রাতরাশের সময় ঠিক ছিল। হোটেল ম্যারিয়টের লবিতে ইতিউতি গল্পগাছা চলছে। জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর সম্মানে মেনুতে লুচি-ছোলার ডাল। রানাঘাটের বাঙালি শেফ লুচি ভেজেছেন। মুখ্যমন্ত্রী কখন নীচে নামেন, সেটুকুই যা অপেক্ষা।
মুখ্যমন্ত্রী ঘড়ি ধরেই নামলেন। ব্লেজার-জ্যাকেটে সজ্জিত সফরসঙ্গী শিল্প-কর্তারা দাঁড়িয়ে। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘চলুন একটু হেঁটে আসি, তার পর লুচি-টুচি খাওয়া যাবে।’’
একটু হাঁটা মানে দশ কিলোমিটার। লুচি-ছোলার ডালের অ্যাপেটাইজার! নিজের স্বভাবসিদ্ধ পদচারণায় শহরের এমুড়ো-ওমুড়ো চষে ফেললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিল্প-কর্তারাও সঙ্গী না হয়ে করেন কী! ঝাড়া আড়াই ঘণ্টার হণ্টনে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁরা শুনলেন, ব্যবসাটা কী ভাবে বাড়াতে হয়।
আইটিসি-র সিইও সঞ্জীব পুরী ঝকঝকে চামড়ার জুতো পরেছেন। তাই দেখে একজন বললেন, ‘‘আপনি হাঁটতে পারবেন তো?’’ মাথা নাড়লেন পুরী সাহেব। পাশ থেকে আর এক জন বললেন, ‘‘আরে ম্যাডাম হাওয়াই চটি পরে পারছেন, আর উনি জুতো পরে পারবেন না?’’ মুখ্যমন্ত্রী পিছনে তাকালেন এক বার, ঠোঁটের কোণে হাসি— ‘‘চলুন যাই তবে সিটি সেন্টার। ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসটাও (আইসিজে) দেখে যাব।’’ নিরাপত্তা অধিকর্তা বীরেন্দ্র লাইভ ট্রাফিক অ্যাপ খুলে দেখতে লাগলেন। লেফট-রাইটের গতি বেড়ে গেল।
আইসিজে-র সামনে এসে কেউ স্মরণ করালেন, কুলভূষণ যাদব মামলার কথা। মমতা ক্ষণিকের জন্য দাঁড়ালেন। বীরেন্দ্র এসে বললেন, ‘‘ম্যাডাম, এই স্মারকস্থলটা দেখুন। সব দেশের পাথর এনে রাখা হয়েছে। দেখতে শিবলিঙ্গের মতো। মাঝখানে বসানো আরও এক শিবলিঙ্গ।’’ মুখ্যমন্ত্রী দেখলেন। বললেন, ‘‘এখানে আমাদের প্রতিনিধি করে কাউকে পাঠালে কেমন হয়?’’ সবাই হাসলেন একবার, মুখ্যমন্ত্রীও।
সিটি সেন্টারে চক্কর কাটা হল। টিটাগড় ওয়াগনস-এর উমেশ চৌধুরি, টেগা গোষ্ঠীর মেহুল মোহানকা-রা পা মেলাচ্ছেন। কথাবার্তায় ঘুরেফিরে আসছে নোটবন্দি থেকে জিএসটি, খাল সংস্কার থেকে এসি ট্রাম। একটু আগেই এক শালিক দর্শন হয়েছে। তার পরেই উঠল জিএসটি নিয়ে দুর্ভাবনার কথা। উদ্বেগের বিরাম হল কফি শপে।
কফি, কুকিজ, কেক। তত ক্ষণে নিউজ অ্যালার্ট বলছে, নরেন্দ্র মোদী লখনউতে বৃষ্টিতে ভিজে যোগাভ্যাস করেছেন। মমতা জানালেন, আজ বিশ্ব সঙ্গীত দিবস। ফেসবুক, টুইটারে বার্তা লিখতে লিখতে বললেন, ‘‘ভারতীয় সঙ্গীতও দেশের সফট পাওয়ার, শুধু যোগ নয়।’’ সবাই ‘সাধু সাধু’ করলেন।
যোগচর্চার আলোচনায় রামদেব আসবেন না? আইটিসি কর্তার মুখ থেকেই জানা গেল, তামাকজাত দ্রব্যছাড়া আইটিসি এখন যা লাভ করে, রামদেবও তা-ই করছেন। শুনেই পাল্টা দাওয়াই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মেয়েদের সাবান, মুখ পরিষ্কারের ক্রিম ইত্যাদি কী ভাবে বাজারে নামাতে হবে, কী ভাবে প্যাকেজিং করতে হবে, কী ভাবে মার্কেটিং বাড়াতে হবে, বলে গেলেন। একটি সুরভিত অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিমের বাজার ফেরাতে কেমন পরিকল্পনা ছকে দিয়েছিলেন, জানালেন। টিনের টিউব ছেড়ে চ্যাপ্টা প্লাস্টিকের ডিবে, চটচটে ভাব কমানোর পরামর্শটা তিনিই দিয়েছিলেন।
কথার ফাঁকে চারটি ঘোড়ার ফিটন গাড়ি টগবগ করে পেরিয়ে গেল। জানা গেল, রাজার কনভয়।
মুখ্যমন্ত্রী অস্ফুটে বললেন, ‘‘আমরা মাটির মানুষ। পথে পথেই স্বপ্ন দেখা।’’ ফিরতি হাঁটা শুরু। লুচি-ছোলার ডাল অপেক্ষা করছে যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy