Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ডেকচিতে ফুটছে পাথর, বাছারা ঘুমো

খাবারের আশায় আশায় কখন আজকের মতো ঘুমিয়ে পড়বে ছেলেমেয়েরা। কারণ মা-ই শুধু জানেন, হাঁড়িতে ফুটছে শুধু জল। আর ক’টা নুড়িপাথর! 

খাবার নেই, ফুটছে পাথর।

খাবার নেই, ফুটছে পাথর।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২০ ০৪:৪০
Share: Save:

ধোঁয়া উঠছে। ডেকচিতে ফুটছে কিছু। বাছারা আশায়, নিশ্চয়ই রান্না হলেই খেতে দেবেন মা। বাবা খুন হয়েছে গত বছর। আট ভাইবোনের ভরসা একা মা। কিছু দূরে এক জায়গায় কাপড় কাচার কাজ করে অল্প কিছু যা জোটে, তা দিয়েই চলছিল কোনও মতে। কিন্তু করোনার কারণে, সেখানে যাওয়া বন্ধ। মা পেনিনা বাহাটি কিৎসো তাই অপেক্ষায়, খাবারের আশায় আশায় কখন আজকের মতো ঘুমিয়ে পড়বে ছেলেমেয়েরা। কারণ মা-ই শুধু জানেন, হাঁড়িতে ফুটছে শুধু জল। আর ক’টা নুড়িপাথর!

কেনিয়ার মোম্বাসায় দু’কামরার ছোট্ট বাড়িটি থেকে কিৎসোর বাচ্চাদের কান্না শুনে প্রতিবেশী প্রিস্কা মোমানি গিয়েছেলেন খোঁজ নিতে। গিয়ে দেখেন এই অবস্থা। অসহায় কিৎসোর কথা সংবাদমাধ্যমকে জানান প্রিস্কা। সাংবাদিকরা এলে কিৎসো বলেন, “প্রথম প্রথম বিশ্বাসই করেছিল ছেলেমেয়েরা। কিন্তু পরে বুঝতে পেরে যায়, মা ঠকাচ্ছে ওদের। সে কথা বলতেও থাকে ওরা।

চুপ করে থাকি। এ ছাড়া যে আর কোনও পথই জানা নেই আমার!” কিৎসোর সাক্ষাৎকার বিপুল ভাবে নাড়া দিয়ে যায় কেনিয়াবাসীর মনকে। ফোনের মাধ্যমে কিৎসোর নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়েছে। আসছে সাহায্য। লিখতে-পড়তে জানেন না। প্রতিবেশীরাই সাহায্য করছেন। আপ্লুত কিৎসো বলেছেন, “বিশ্বাসই হচ্ছে না এত ভালবাসতে পারেন কেনিয়ার মানুষ! গোটা দেশ থেকে ফোন আসছে। সকলে জানতে চাইছেন, কী ভাবে সাহায্য করতে পারেন।”

কেনিয়ায় এ পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন ৪১১ জন। মারা গিয়েছেন ২১ জন। প্রতি ১০ লক্ষে পরীক্ষা হয়েছে ৪০৪ জনের। সংক্রমণ মূলত ছড়িয়েছে শহরগুলিতেই। সকাল থেকে সন্ধে চলছে কার্ফু। কোভিড-১৯ অতিমারিতে পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটিতে নিম্নবিত্তদের রুটি-রুজি প্রায় বন্ধ। সরকারি বা রেড ক্রসের ত্রাণ পৌঁছয়নি তাঁদের কাছে। খবর উঠে আসছে, বিশ্ব ব্যাঙ্ক যে অর্থ দিয়েছে, তার প্রায় সবটাই নাকি চা-নাস্তা আর ফোনের বিলে ওড়াচ্ছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্মীরা।

কিৎসো ভাগ্যবান। প্রিস্কার মতো কোনও প্রতিবেশী আছে তাঁর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

lockdown hunger mombasa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE