Advertisement
E-Paper

ভুটান-পশ্চিমবঙ্গ বাণিজ্য সম্ভাবনা বাড়াতে তৎপর মমতা

বীজটা পোঁতা হয়েছিল গতকালই। আজ তাতে সামান্য হলেও সম্ভাবনার অঙ্কুর। ভুটানের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে গতকাল বিবিধ পর্যায়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দেবাশিস ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৫ ২০:৪৫
ক্যামেরায় মগ্ন মুখ্যমন্ত্রী।— নিজস্ব চিত্র।

ক্যামেরায় মগ্ন মুখ্যমন্ত্রী।— নিজস্ব চিত্র।

বীজটা পোঁতা হয়েছিল গতকালই। আজ তাতে সামান্য হলেও সম্ভাবনার অঙ্কুর। ভুটানের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে গতকাল বিবিধ পর্যায়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যে একটি, ব্যাঙ্কক থেকে ভুটানের বিমান অন্ডাল বিমানবন্দর ছুঁয়ে আসা। গতকাল কলকাতা থেকে ভুটান এয়ারলাইন্সের বিমানে পারো আসার পথে বিমানেই এই আলোচনার সলতে পাকিয়েছিলেন মমতা। সন্ধ্যার বাণিজ্য সম্মেলনেও একই কথা বলেছিলেন তিনি।

আজ সকাল থেকে ভুটান এবং ড্রুক (সরকার পোষিত), দুই বিমান সংস্থার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যের পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অন্ডাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। ঠিক হয়েছে, ভুটানের দুই বিমান সংস্থা অন্ডাল বিমানবন্দরের পরিকাঠামো দেখতে শীঘ্রই প্রতিনিধি দল পাঠাবে। সব দিক অনুকূল হলে ব্যাঙ্কক থেকে ভুটানের যে বিমান এখন কলকাতা ছুঁয়ে পারো আসে তা কলকাতার আগে অন্ডালে নামবে। শুধু তাই নয়, পারো-র ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দরে কোনও কারণে বিমান নামতে না পারলে তা এখন ঢাকা, বাগডোগরা, কাঠমান্ডু ইত্যাদি জায়গায় পাঠানো হয়। সেই তালিকাতেও অন্ডালকে রাখার জন্য মমতার প্রস্তাব বিশেষজ্ঞ কমিটির বিবেচনায় গুরুত্ব পাবে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অন্ডাল বিমানবন্দরে জ্বালানি ভরার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই জ্বালানির দামে ছাড় দিয়েছে রাজ্য সরকার। তাই এই ধরনের বিমানের পক্ষে অন্ডালে নামা লাভজনক হবে বলে আমাদের আশা।’’

আরও একটি বিষয়ে আজ ব্যবসায়িক আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। গতকাল দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পরে রাতে আবার তাঁর হোটেলে দেখা করতে আসেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে। তখন উভয়ের কথায় ভুটানের ডলোমাইট খনির প্রসঙ্গ ওঠে। শেরিংয়ের কাছে মমতার প্রস্তাব, পশ্চিমবঙ্গে কোনও ডলোমাইট খনি নেই। তাই ভুটানের সব থেকে কাছে ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে ভুটান যদি ডলোমাইট পাঠায় তা হলে তাতে ভুটানের রফতানি ব্যবসা হবে, পশ্চিমবঙ্গও সেই ডলোমাইট নিয়ে ব্যবসা করতে পারবে। প্রস্তাবটি মনে ধরেছিল প্রধানমন্ত্রীর। আজ সেই প্রসঙ্গেও প্রাথমিক কথা চালাচালি শুরু হয়। মমতার সঙ্গে আসা বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের কেউ কেউ বিষয়টিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

আরও দু’টি বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে যা মূলত উত্তরবঙ্গকেন্দ্রিক। একটি হল সঙ্কোশের জল এবং অন্যটি আলু।

ভুটান থেকে আসা সঙ্কোশ নদীর জল উত্তরবঙ্গে বন্যা ঘটায়। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে এই প্রসঙ্গটি ওঠে। সেখানেই স্থির হয়, যদি দেখা যায় ভুটানে সঙ্কোশ নদীতে জল ছাড়ার জন্য উত্তরবঙ্গে বন্যা হচ্ছে সে ক্ষেত্রে ভুটান এবং পশ্চিমবঙ্গ যৌথ ভাবে জল ছাড়ার ব্যাপারে নজরদারি করবে। আর যদি দেখা যায়, অন্য কোনও কারণে এই ঘটনা ঘটছে সে ক্ষেত্রে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে। বস্তুত, এই বিষয়টি আগে থেকেই মমতার বিবেচনায় ছিল বলে তিনি তাঁর সঙ্গে রাজ্য সেচ দফতরের সচিব নবীন প্রকাশ এবং জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারের জেলাশাসককে এনেছেন।

ভুটানে উৎপাদিত আলু উত্তরবঙ্গে পাঠানো নিয়েও রাজ্য সরকার চেষ্টা শুরু করেছে। সরকারের খবর, ভুটান লাগোয়া উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় এই আলু ঘুরপথে বাজারে ঢোকে। তাই বিষয়টিতে সিলমোহর দিয়ে ভুটানের সঙ্গে আলুর ব্যবসা করার সুযোগ হাতছাড়া করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজি নন।

সকাল থেকে এই ধরনের কিছু কিছু সম্ভাবনার ইঙ্গিত একসঙ্গে মিলিয়ে সন্ধ্যায় মমতার দাবি, ‘‘ভুটান সফর সার্থক হবে বলে আমার বিশ্বাস।’’

আজ বিকালে রাজা জিগমে কেশর নামগিয়েল ওয়াংচুকের সঙ্গে দেখা করতে যান মমতা। ভুটান সফরের দ্বিতীয় দিনে এটাই ছিল তাঁর সব থেকে উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি। পরে তিনি জানান, বাণিজ্য সম্ভাবনার প্রতিটি বিষয়ে রাজা খোঁজ নিয়েছেন। ভুটানের পক্ষে প্রয়োজনীয় সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছেন।

এ ছাড়া অন্য কোনও কথা হল? মমতার জবাব: ‘‘আসলে ওঁকে কলকাতায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানোর সময় জানতে চেয়েছিলেন কখন গেলে সুবিধে হয়। আমি ওঁকে বলেছিলাম, মার্চ-এপ্রিল-মে যখন খুশি। তবে, ওই সময়ে যে আমাদের রাজ্যে ভোট আছে রাজা দেখলাম সেটাও জানেন। তাই আমাকে বললেন, ‘আপনি ২০১৬-র ভোটে জিতে নিন। তার পর একেবারে আপনাকে অভিনন্দন জানাতে যাব।’’

মমতা যখন প্রাসাদে যান, তখন সেখানে একটি ঈগল উড়ে এসে জুড়ে বসেছিল। ঈগলের ভয়ে ইঁদুর ছানারা কাবু হলেও ভুটানে এই পক্ষী নাকি ‘লক্ষ্মীপ্যাঁচা’র মতো পয়া। যুবক রাজা মুখ্যমন্ত্রীকে সে কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘আগে কোনও দিন আমাদের এখানে ঈগল দেখিনি। আজ আপনার আসার সঙ্গে সঙ্গে এল।’’

মমতার এই ভুটান সফরে তাঁর ‘কল্যাণে’ ভুটান বেশি লাভবান হয় না পশ্চিমবঙ্গ, বাকি রইল তার হিসেবনিকেশ।

debashis bhattacharya trade prospect west bengal bhutan trade mamata bhutan tour mamata bhutan trade prospect
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy