টারপিন দম্পতি ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া
রাত থাকতেই ঘরের জানলা বেয়ে রাস্তায় নেমে এসেছিল ১৭ বছরের কিশোরী। বাড়ি থেকে চুরি করে আনা সেলফোনে ৯১১ ডায়েল করে প্রথম ফোনটিই করে দক্ষিণ ক্যালিফর্নিয়ার পুলিশকে। জানায়, যে বাড়ি থেকে সে পালিয়েছে, সেই বাড়িতেই বাবা-মা শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে তার ১২ জন ভাইবোনকে। বছরের পর বছর যখন-তখন চলে মারধর। কখনও কখনও যৌন হেনস্থাও। খাবার পর্যন্ত জোটে না রোজ।
২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে সেই ‘আতঙ্কের বাড়ি’ থেকে পালিয়ে ডেভিড অ্যালেন টারপিন (৫৭) ও লুই অ্যানা টারপিনের কীর্তির কথা ফাঁস করে তাঁদেরই কিশোরী মেয়ে জর্ডন। আজ ওই দম্পতিকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত জানিয়েছে, প্রতিটি অভিযোগ প্রমাণিত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে তাদের।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ৭০ মাইল পূর্বে পেরিসে ওই দম্পতির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তাজ্জব বনে যান পুলিশ অফিসাররাও। অন্ধকার বাড়িটিতে কার্যত আটক করে রাখা হয়েছে ১২ জন ভাইবোনকে। বয়স ২ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। দুর্গন্ধে টেঁকা যাচ্ছে না। কেউ শিকলবন্দি। প্রত্যেকের চেহারায় অপুষ্টি-অযত্নের ছাপ। পুলিশ জানতে পেরেছে, সন্তানদের হামেশাই বেধড়ক মারধর করত বাবা-মা। কখনও গলা টিপে ধরত। ‘বেআদপি’ করলে দড়ি ও শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হত তাদের। কখনও মাসের পর মাস। বছরে এক বারের বেশি স্নান করতে দেওয়া হত না। হাতের কবজির বেশি ধুলে ‘জল নিয়ে খেলা’ করার জন্য কড়া ‘শাস্তি’ পেতে হত।
পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই দম্পতির ২২ বছরের এক ছেলেকে প্রায় সাড়ে ছ’বছর ধরে অধিকাংশ সময়েই বেঁধে রাখা হয়েছিল। ১৭ বছরের এক মেয়ে গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, বাবা ডেভিড টারপিন তার উপর যৌন অত্যাচার চালিয়েছে। তার ১২ বছর বয়সে তাকে নগ্ন করে কোলে বসিয়ে হেনস্থা করেছিল বাবা। তার আরও অভিযোগ, জাস্টিন বিবারের ভিডিয়ো দেখায় একবার গলা টিপে মেরেই ফেলছিল মা! দিন কয়েক বাদে বাদে নামমাত্র খাবার দেওয়া হত তাদের।
পুলিশ অফিসাররা হাজির হয়েও দেখেন, ঘরে তিন জন শিকলবন্দি। প্রচুর খেলনা সাজানো থাকলেও সেগুলি মোড়কবন্দি। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, দোকান থেকে মুখরোচক খাবার কিনে আনতেন ওই দম্পতি। কিন্তু কখনওই সন্তানদের তা খেতে দিতেন না। খাবার প্যাকেটেই পচে যেত। ঘরেই লেখাপড়া করত ওই ১৩ জন। বাইরের জগতের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না। চেনবন্দি অবস্থা শুধুমাত্র বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করার অনুমতি ছিল তাদের। সেই পত্রিকাগুলিই এ বার সংগ্রহ করছে পুলিশ। আদালত জানিয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মা লুই টারপিন ছেলেমেয়েদের উপরে অত্যাচার চালালেও বাবা ডেভিড বাঁধা দেননি। অতএব দু’জনেই সমান দোষী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy