সংবাদ সংস্থা
নওয়াজ শরিফ, রাহিল শরিফ, রিজওয়ান আখতারকে কার্যত পথে বসিয়ে দিল তাঁদেরই অতি ঘনিষ্ঠ মাসুদ আজহার! উরি-কাণ্ডের পরে গোটা দুনিয়ার সমালোচনার মুখে ক’দিন আগেও বড় মুখ করে নওয়াজ বলেছেন, আমরা জঙ্গিদের মদত দিই না। তাতে সায় দিয়েছেন পাক সেনাপ্রধান রাহিল ও আইএসআই-প্রধান রিজওয়ান। অথচ পাক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজহার কিনা প্রকাশ্যেই পাক সরকারকে বলে বসল, ‘‘তোমরা আর একটু সাহস দেখাও। কাশ্মীর এক্ষুনি দখল করে দেখিয়ে দিচ্ছি!’’
জইশের মুখপত্র আল-কালামের সর্বশেষ সংখ্যায় মাসুদের এই লেখা নিয়ে তুমুল চাপে পাক সরকার। কারণ ওই লেখাতেই মাসুদ বলেছে, ’৯০-এর দশক থেকে পাক সরকার জঙ্গিদের সরাসরি সমর্থন করে ফায়দা পেয়েছে। এখন আর একটু সাহস দেখালে ষোলকলা পূর্ণ হয়! মাসুদ লিখেছে, ‘পাক সরকার একটু সাহস দেখালে কাশ্মীর তো বটেই, সিন্ধু জল-সমস্যাও মিটে যাবে চিরকালের জন্য। শুধু মুজাহিদিনদের জন্য দরজাটা খুলে দিক পাক সরকার।’ নওয়াজ প্রশাসনকে তার পরামর্শ, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় গাফিলতি হলে, পাকিস্তানের হাত থেকে ফস্কে যেতে পারে কাশ্মীর দখলের ঐতিহাসিক সুযোগ।’’
পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির রক্ষাকর্তা— এ কথা বলে নওয়াজ সরকারের রোষের মুখে পড়েছেন সে দেশের সাংবাদিক সিরিল আলমেইদা। তাঁর দেশ ছাড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিদেশি তো বটেই, দেশি সংবাদমাধ্যমেরও তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছে নওয়াজ সরকার। দিন কয়েক আগে আলমেইদা লিখেছিলেন, ‘আইএসআই বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করছে। আর তাদের এই অবস্থান নিয়ে সরকার এবং সেনার মধ্যে তৈরি হয়েছে চরম সংঘাত।’ এই লেখার জন্য বিড়ম্বনায় পড়ে জঙ্গি-যোগ অস্বীকার করেছে পাক সরকার। আর তার পরেই বুক ফুলিয়ে মাসুদ লিখেছে, ’৯০-এর দশক থেকে পাক সরকার কী ভাবে জঙ্গিদের মদত দিয়েছে! বস্তুত প্রয়াত পাক প্রেসিডেন্ট জিয়া উল হকের ‘হাজার ক্ষত’ তত্ত্বের কথা মনে করিয়ে মাসুদ লিখেছে, ‘‘নয়াদিল্লির অখণ্ড ভারত তৈরির চেষ্টায় জল ঢেলেছে জেহাদ। ভারতীয় সেনার বীরত্ব প্রমাণ হয়ে গিয়েছে পঠানকোট আর উরির মতো ঘটনায়।’’
মাসুদ বলেছে, জেহাদের হাত ধরেই ভারতকে কাবু করতে পারে পাকিস্তান। তার বক্তব্য, ‘কাশ্মীরে লাগাতার জেহাদ ভারতকে দুর্বল করেছে। কাশ্মীরে সংঘর্ষের আগে ও পরের ভারতকে মিলিয়ে দেখলে নাটকীয় তফাত চোখে পড়বে। আমি সেই পরিবর্তনের সাক্ষী। আগে ওরা (ভারত) সাপ ছিল। এখন কেঁচো হয়ে গিয়েছে!’ একই সঙ্গে সে লিখেছে, ‘‘কাশ্মীর নিয়ে চাপ বাড়াচ্ছে ভারত। এটা আগে পাকিস্তানেরই করা উচিত ছিল। কাশ্মীর আমাদের হৃদয়ের প্রধান শিরা। আমাদেরই সার্ক বৈঠক বয়কট করা উচিত ছিল। নিয়ন্ত্রণরেখার সংঘর্ষবিরতি আমরাই আগে ভাঙতে পারতাম।’’
মাসুদের এই লেখা সন্ত্রাস-প্রশ্নে নয়াদিল্লিকে অনেক সুবিধা করে দিল বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা। আগামী শনিবার থেকে গোয়ায় শুরু হচ্ছে ‘ব্রিকস সম্মেলন’। সেখানে চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিঙের সঙ্গে বৈঠক হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। ক’দিন আগেই রাষ্ট্রপুঞ্জের সন্ত্রাসবাদী তালিকায় মাসুদকে রাখা নিয়ে ভারতের উদ্যোগে জল ঢেলেছে বেজিং। মোদী-চিনফিং বৈঠকের আগে মাসুদের লেখা বেজিংকেও প্যাঁচে ফেলে দিল।
২৬/১১ হামলার প্রধান চক্রী মাসুদ অবশ্য আগেও পাকিস্তানের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্য জনসভায় ভারত-বিরোধী জেহাদের ডাক দিয়েছে। আমেরিকাও এ নিয়ে পাকিস্তানকে বলেছে। কিন্তু চিনের সমর্থন নিয়ে ইসলামাবাদ সবই উড়িয়ে দিয়েছে। তাই এ বারও চিন বিশেষ কিছু করবে, এমনটা ভাবছেন না অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy