তিন দিনে বড়জোর এক বার খাবার যাচ্ছে কচি পেটগুলোতে। মিলছে না পানীয় জল, বিদ্যুৎ, ওষুধ। ইরাকি-প্রশাসনের আশঙ্কা, এ রকম চললে আমেরলি শহরটার ১৮ হাজার বাসিন্দা শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবেন। কিন্তু পালানোরই বা পথ কোথায়? শহরের চার দিক ঘিরে আইএস জঙ্গিদের প্রহরা। গত দু’মাস ধরে তাই মৃত্যুফাঁদেই দিন কাটছে। অনাহারে, মৃত্যুর অপেক্ষায়।
ইরাকের সরকার ও কুর্দিস্তান-প্রশাসন অবশ্য জঙ্গিদের উপর লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এ কাজে তাদের সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছে আমেরিকাও। কিন্তু আমেরলির কথা যেন কারও খেয়ালই নেই। অনেকের আর্জি, এ মুহূর্তে বাসিন্দাদের উদ্ধার করা সম্ভব না হলেও নিদেন পক্ষে ত্রাণ পাঠানো হোক। কিন্তু একের পর এক জঙ্গি নাশকতা সামলে আদৌ সেই ত্রাণ বিলির কাজ সুসংহত ভাবে করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এ দিন আবার ইরাকের রাজধানী বাগদাদের গোয়েন্দা দফতরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে জঙ্গিরা। তাতে অন্তত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড এ দিন জানিয়েছেন, আমেরলির পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, ইরাকের মাটিতে সেনাবাহিনী নামানোর পক্ষপাতী নয় ব্রিটিশ সরকার। সিরিয়ার ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত ব্রিটেনের। গত কাল প্রশ্ন উঠেছিল, মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফোলির হত্যাকারী সেই ‘ব্রিটিশ’ জঙ্গির খোঁজে সিরিয়ায় কি ঢুকতে চলেছে ব্রিটিশ সেনা? যদি তা-ই হয়, সে ক্ষেত্রে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সঙ্গে হাত মেলাতে হবে ব্রিটেনকে। ফিলিপ এ দিন সে জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “শত্রুর শত্রু বলেই কেউ বন্ধু হয়ে উঠতে পারে না।”
কিন্তু তা হলে ফোলির হত্যাকারী ধরা পড়বে কী করে? ব্রিটেনের সরকারি সূত্রে খবর, ঘরে ও বাইরে দু’দিকেই তল্লাশির কাজ চালানো হবে। তাতে সাহায্য করতে ইতিমধ্যেই লন্ডনে এসে পৌঁছেছেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইএয়ের অফিসাররা। ব্রিটিশ প্রশাসন সূত্রে খবর, আইএস জঙ্গিদের যোগ থাকতে পারে এমন বাসিন্দাদের চিহ্নিত করে তাঁদের গতিবিধির উপর ইতিমধ্যেই নজর রাখা শুরু হয়েছে। নজরদারি চলছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতেও। তবে ফোলির হত্যাকারীর আসল পরিচয় জানা গেল কি না, তা নিয়ে কিছু বলেননি তিনি। ব্রিটেনের এক দৈনিকের দাবি, এখনও পর্যন্ত সন্দেহের তালিকায় তিন যুবককে রাখা হয়েছে। প্রত্যেকেরই বয়স কুড়ির উপর। তাদের মধ্যে কেউ র্যাপার (বিশেষ ধরনের পাশ্চাত্য গান), কেউ কম্পিউটার হ্যাকার, কেউ বা আবার গাইড। এদের সঙ্গে ‘জেহাদি জন’-এর (এ নামেই ডাকা হচ্ছে ফোলির হত্যাকারীকে) ব্যাপক মিল পেয়েছেন তদন্তকারীরা। ওই দৈনিকের দাবি, তিন জনই বর্তমানে সিরিয়ার রাক্কা শহরে আইএস জঙ্গিদের হয়ে কাজ করছে।
ফোলির হত্যাকারীর খোঁজে এ হেন তল্লাশি শুরু হলেও সন্তুষ্ট নন তাঁর ভাই মাইকেল। তাঁর দাবি, ভাইকে বাঁচাতে আরও অনেক কিছুই করতে পারত আমেরিকা। কিন্তু ঠুঁটো বিদেশনীতির জন্যই তা করা সম্ভব হয়নি। তবে ভাইয়ের মৃত্যু যাতে বিফলে না যায়, সে কথা ফের এক বার মনে করিয়ে দিয়ে মাইকেল আর্জি জানান, আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হবে, সে ব্যাপারে দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy