Advertisement
E-Paper

দিল্লির চিন্তা চিন, মাথাব্যথা তালিবানও

সারা বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সরকার মূলত ভিডিয়ো মাধ্যমে হওয়া কূটনৈতিক বৈঠকগুলিতে বলে গিয়েছেন বহুপাক্ষিক এক বিশ্বব্যবস্থার কথা।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৫১

ফাইল চিত্র।

চিনের উপরে বিষফোঁড়া, তালিবান!

২০২১-এর শেষ দিনে এসেও বিদেশনীতি নিয়ে উদ্বেগ কাটছে না মোদী সরকারের। সারা বছরের সালতামামি করতে গিয়ে এমনটাই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

কোভিডের ফলে ২০২০ সালের ধসে যাওয়া বিশ্ব মানচিত্র একটু একটু করে জেগে উঠেছিল ২০২১-এর গোড়ায়। জাগছিল ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রের কূটনৈতিক লেনদেনও। ভিডিয়ো বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী, বিদেশসচিব সম্মিলিত ভাবে বেশ কিছু সফরে গিয়ে মুখোমুখি বৈঠক করছেন। অন্য দিকে, সাউথ ব্লকও নয়াদিল্লির বুকে আয়োজন করেছে বিদেশমন্ত্রীদের একের পর এক দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক সম্মেলন।

মাঝে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ ভারতকে চার মাসের জন্য স্তব্ধ করে দেয়। কিন্তু সারা বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সরকার মূলত ভিডিয়ো মাধ্যমে হওয়া কূটনৈতিক বৈঠকগুলিতে বলে গিয়েছেন বহুপাক্ষিক এক বিশ্বব্যবস্থার কথা। আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা। রাষ্ট্রের সম্প্রসারণবাদের বিরোধিতা করে পরস্পরের ভৌগোলিক অখণ্ডতা মানার ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, অতিমারির নাগরদোলায় চড়া পুরো বছরেই ভারতের এই ক্ষেত্রগুলিতে আশঙ্কা বেড়েছে বই কমেনি।

বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য শক্তির সঙ্গে সারা বছরের বিভিন্ন সময়ে ত্রিপাক্ষিক কাঠামোয় সফল দৌত্য সেরেছে নয়াদিল্লি। জাপান-আমেরিকা-ভারত, অস্ট্রেলিয়া-জাপান ভারত, ভারত-ফ্রান্স-জাপান এবং গুরুত্বপূর্ণ রাশিয়া-চিন-ভারতের বৈঠকগুলি হয়েছে। বছরের শেষে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নয়াদিল্লি এসেছেন। দিল্লির সঙ্গে মস্কোর সামরিক সম্পর্কে এক নতুন মাইলফলক তৈরি হয়েছে। আমেরিকার রক্তচক্ষুকে সামাল দিয়ে নতুন সামরিক প্রযুক্তি চুক্তি করেছে ভারত এবং রাশিয়া।

এ রকম টুকরো টুকরো সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে চিনকে মোকাবিলা করার প্রশ্ন। পুরো ২০২১ জুড়েই চিন তার সামরিক আস্ফালন বজায় রেখেছে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং ভারতের সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায়। ভারতের বহু চেষ্টা সত্ত্বেও পূর্ব লাদাখে তাদের পুরনো পোস্টে চিনা সেনা ফিরে যায়নি। যে জমি এত দিন ভারতের ছিল, তা বহু কূটনৈতিক এবং সামরিক পর্যায়ের বৈঠকের পরেও ফিরে পাওয়া যায়নি।

প্রতিষেধক কূটনীতি ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরু করেছিল নয়াদিল্লি। যা মূলত প্রতিবেশী কূটনীতিরই নামান্তর। কিন্তু ভারতে মার্চে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পরে, মাঝপথে ভারত বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় প্রতিষেধক রফতানি। অন্যান্য দেশ থেকে প্রশ্ন ওঠে, পরিস্থিতি পর্যালোচনা না করেই কেন প্রতিষেধক-মৈত্রী নিয়ে এত আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ বা নেপালকে?

বিশ্ব মানচিত্রে একুশের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা সম্ভবত হঠাৎ করে আফগানিস্তানের জমি থেকে আমেরিকার সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা। তার ফলশ্রুতি, তালিবানের কাবুল দখল। অগস্ট থেকে আফগানিস্তান তথা পুরো অঞ্চল ভারতের রক্তচাপ ক্রমশ বাড়িয়েছে। প্রশ্নটা শুধুমাত্র নিরাপত্তাগত নয়, অর্থনৈতিকও। সে দেশের বহু ভারতীয় বিনিয়োগ এখন জলের তলায়। ২০২২ সালে পাকিস্তান যে কাবুলের অর্থনীতি (চিন এবং রাশিয়ার মাধ্যমে) এবং কৌশলগত ক্ষেত্রে শেষ কথা বলবে, এমন দেওয়াল লিখন পড়তে পারছে সাউথ ব্লক। ঘটনা হল, এর কোনও চটজলদি সমাধান নেই। আফগানবাসীর কাছে সাহায্য পাঠাতে হলেও পাকিস্তানের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। অন্য দিকে, আগামী বছরে ইসলামাবাদ যে কাবুলের তালিবান সরকারকে কাজে লাগিয়ে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস বাড়াবে, সেটাও স্পষ্ট।

Narendra Modi China taliban Afghanistan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy