একা আর ওঠা যাবে না এভারেস্টে। দৃষ্টিহীনেরাও পাবেন না বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ জয়ের স্বাদ। এমনকী, চার হাত-পায়ের মধ্যে দু’টি অঙ্গ বাদ গিয়েছে যাঁদের, তারও আর যেতে পারবেন না এভারেস্ট অভিযানে। দুর্ঘটনা ও মৃত্যু কমাতে এভারেস্ট অভিযানের আগামী মরসুম থেকেই এই ধরনের এক গুচ্ছ বিধিনিষেধ চালু করছে নেপাল।
নেপালের সংস্কৃতি, পর্যটন ও বিমানমন্ত্রী মহেশ্বর নেউপানে শনিবার বলেছেন, ‘‘মৃত্যু কমানো ও পর্বতাভিযানকে আরও নিরাপদ করে তোলার লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত বিধিতে বেশ কিছু বদল আনা হচ্ছে। গত কাল রাতে মন্ত্রিসভা এই পরিবর্তনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।’’
একা নুপ্ৎসে শৃঙ্গ জয় করতে গিয়ে সুইৎজারল্যান্ডের অভিজ্ঞ পর্বতারোহী উয়েলি স্টেক খাদে পড়ে গিয়ে মারা যান গত বছর এপ্রিলে। দু’টি পা ছাড়াই এভারেস্ট জয় করতে গিয়ে ২০০৬ সালে মারা যান নিউজিল্যান্ডের মার্ক ইংলিশ। দু’টি অঙ্গ বাদ গিয়েছে এমন (ডাবল অ্যাম্পিউটি) অভিযাত্রীর মৃত্যু সেই প্রথম। নেপাল সরকার নিয়ম বদলের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে এই অঘটনগুলিকেই সামনে রাখছে।
এটা ঘটনা, একাই হোক বা দল বেঁধে, বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করতে গিয়ে প্রায় বছরই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নিরাপত্তার যথেষ্ট ব্যবস্থা না করেই স্রেফ অর্থের টানে অভিযাত্রীদের বিপদের মুখে ঠেলার অভিযোগও উঠছে বেশ কয়েক বছর ধরে। সেই সূত্রেই এই নিয়ম বদল বলে জানিয়েছেন নেপাল সরকারের মুখপাত্র। কিন্তু একা, এমনকী অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াই, কিংবা শারীরিক কোনও প্রতিবন্ধকতাকে ছাপিয়ে দুর্গমকে জয় করার চ্যালেঞ্জ যাঁদের হাতছানি দেয়— তাঁদের পথে এ ভাবে পুরোপুরি দেওয়াল তুলে দেওয়ায় অনেকেই রুষ্ট। বিশেষ করে দক্ষ একক অভিযাত্রীরা। অনেকেরই অভিযোগ, পর্বতাভিযানকে বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহার করার ফলেই এভারেস্ট প্রতি বছর কিছু না কিছু অঘটন ঘটে চলেছে। শুধু গত বছরেই ২৫৯ জন নেপালি ও ১৯০ জন মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চারশও জন দক্ষিণ দিক দিয়ে চড়েছেন এভারেস্টে। প্রশ্ন উঠছে, নেপাল সরকার প্রতিবন্ধী ও একক অভিযাত্রীদের পথে কাঁটা হলেও প্রতি বছরের ওই এভারেস্ট-পর্যটনের মোচ্ছবে কি ছেদ পড়বে?
উঠছে আর একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন। ‘পঙ্গুর পর্বত ডিঙোনো’ কথাটাই বুঝি ইতিহাসে পাঠিয়ে দিতে চলেছে নেপাল! অতীতে বিভিন্ন রকম শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই শৃঙ্গ জয় করেছেন বহু অভিযাত্রী। আমেরিকার এরিক ওয়াইহেনমেয়ার চোখে দেখেন না। ২০০১ সালে তিনি এভারেস্ট জয় করেন। শুধু তা-ই নয়, বর্তমানে তিনিই বিশ্বের একমাত্র দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, যিনি সাতটি মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গগুলি জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। নেপাল সরকারের নয়া বিধি চালু হলে, আর কোনও এরিককে পাবে না বিশ্ব।
আফগানিস্তানে যুদ্ধে গিয়ে দু’পা-ই বাদ গিয়েছে গোর্খা সৈনিক হরিবুদ্ধ মগরের। ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার (২৯ হাজার ২৯ ফুট, ২০০৬ সালের হিসেব) উঁচু জায়গাটিতে পৌঁছনোর স্বপ্ন দেখেন তিনি। নেপাল সরকার এভারেস্টে ওঠার নিয়ম পাল্টাচ্ছে জেনে কয়েক মাস আগে থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছেন তিনি। কয়েক মাস আগেই ফেসবুকে তিনি লিখেছিলেন, ‘এমন নিয়ম চালু হলে তা হবে প্রতিবন্ধীদের প্রতি বৈষম্যমূলক। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘনও।’
আপাতত হেরে গেলেন হরিবুদ্ধ। তাঁর স্বপ্নটা নয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy