সব ঠিক থাকলে আগামী শুক্রবার ব্রিটেনে মুখোমুখি বৈঠকে বসতে পারেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নির্বাচন, সংস্কার-সহ বিভিন্ন বিষয়ে ইউনূস প্রশাসন এবং বিএনপি-র মধ্যে মতপার্থক্য যখন চরমে, তখন ওই বৈঠক আশাবাদী করে তুলেছে সে দেশের রাজনৈতিক দলগুলিকে বটেই, বাংলাদেশবাসীকেও। বিএনপি-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তো বলেই দিয়েছেন, ইউনূস-তারেক বৈঠক ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হতে পারে।
বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরকার এবং বিএনপি-র মধ্যে টানাপড়েন ক্রমশ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে গত কাল ব্রিটেন সফরে গিয়েছেন ইউনূস। এ দিন স্থানীয় সময় সকাল ৭টা নাগাদ হিথরো বিমানবন্দরে নামেন তিনি। গত দেড় দশক ধরে ব্রিটেনে রয়েছেন বিএনপি-র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক। বিএনপি-র তরফে জানানো হয়েছে, আগামী শুক্রবার সকালে হোটেল ডরচেস্টারে বৈঠকে বসবেন ইউনূস এবং তারেক। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বৈঠকটি হওয়ার কথা।
ইউনূস-তারেক বৈঠকে নির্বাচন, দেশের রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সম্ভাব্য. সমঝোতা ও কৌশলগত অবস্থান নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে ওই বৈঠক নিয়ে ইউনূসের দফতর থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানানো হয়নি। একটি সূত্রের খবর, ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে তারেক ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করানোর কথা তুলতে পারেন।
সূত্রের খবর, গত কাল সোমবার রাতে দলের চেয়ারপার্সনের গুলশন কার্যালয়ে বিএনপি-র স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারেক নিজেই ইউনূসের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতের বিষয়টি জানান। স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকে দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে মতামত জানতে চান তিনি। দলের সব প্রবীণ নেতাই এই বৈঠকে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে তাঁদের সম্মতির কথা জানান। এর আগে, বিএনপি-র দাবি অনুযায়ী বৈঠকে নিরাপত্তা উপদেষ্টা যে থাকবে না, সেই গ্যারান্টি চাওয়া হয়। সরকারের শীর্ষ এক জন উপদেষ্টা এই বার্তা প্রধান উপদেষ্টার কাছে পৌঁছে দেন এবং সেটা মেনে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই বৈঠক থেকে ইতিবাচক কিছু বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতৃত্ব। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আমরা আশা করছি, এই সাক্ষাৎকার বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক সঙ্কটগুলি কাটিয়ে উঠতে ইতিবাচক ভূমিকা নেবে। ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটি একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে।’’ বিএনপির মহাসচিবের মতে, ইউনূস-তারেক বৈঠক থেকে বাংলাদেশ নতুন দিশা পেতে পারে। তিনি সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বেশ কয়েক দিন আগে, যখন প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে যাবেন সিদ্ধান্ত হয়েছে, তখন থেকেই মোটামুটি আলোচনা হচ্ছিল যে, সেখানে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আছেন; সেখানে সাক্ষাৎ হতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের প্রশ্ন, জাতির উদ্দেশ্যে ইউনূসের ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি বলেছিল, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম করেছে। তাঁর শব্দচয়ন নিয়েও আপত্তি তুলেছিল তারা। সেই ইউনূসের সঙ্গে তারেকের বৈঠকে কোন নতুন দিশা মিলবে?
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)