ইস্তফার কথা প্রচার করা নেহাতই ‘নাটক’ ছিল। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস শেষ দিন পর্যন্ত গদি আঁকড়ে থাকতে চাইবেন বলেই আজ দাবি করা হল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব সূত্রে। আওয়ামী নেতৃত্বের মতে, আগামী বছরের গোড়ায় নির্বাচনের কথা ইউনূস এখন বলছেন ঠিকই, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ‘ধর্মান্ধদের’ সঙ্গে নিয়ে সেনাবাহিনীকে প্রভাবিত করার চেষ্টা তিনি চালিয়ে যাবেন।
আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। মুহাম্মদ ইউনূস কখনই সহজে কোনও ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন এমন নয়। আইন অনুযায়ী গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে যখন তাঁর অব্যাহতি নেওয়ার কথা, তিনি
দীর্ঘদিন তাঁর পদ টিকিয়ে রেখেছেন। দেড় দশক আগে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহু আলোচিত ‘১/১১’ বা এক-এগারো পর্ব ছিল ইউনূসকে সরকারের প্রধান করার করার সেই বহু আলোচিত উদ্যোগ। সে সময়েও তিনি টানা ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে গিয়েছেন।’
এই পরিস্থিতিতে দলনেত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আত্মগোপন করা অবস্থাতেও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রেখে চলেছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। যে নির্দেশ হাসিনা দিচ্ছেন, তার মধ্যে রয়েছে— নীরবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানো, বর্তমান শাসকের আমলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তিকে তুলে ধরা, যে যার জায়গায় ঐক্যের বার্তা দেওয়া, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে এমন মানুষ-সম্প্রদায়-দলের সঙ্গে বৃহত্তর গণতান্ত্রিক ঐক্য তৈরি করার চেষ্টার মতো বিষয়গুলি।
বিএনপি-র ভূমিকা এই মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের দাবি, বিএনপি আপাতত তার ‘নিজস্ব রাজনীতি’তে চলছে। অর্থাৎ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকাকে পুষিয়ে নিতে চলছে বিভিন্ন সংস্থা এবং উদ্যোগ থেকে টাকা আদায়ের পালা। সেই সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমতা পাওয়ার লক্ষ্যে ইউনূস সরকারকে চাপ দেওয়া। এই সরকারে আপাতত জামায়েতে ইসলামির প্রভাব ও ক্ষমতা বেশি। তাই বিজেপিও তাতে ভারসাম্য আনতে চাইছে। যদি শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়েই নির্বাচন হয় (যার সম্ভাবনা যথেষ্ট), তা হলে জামায়েতে, বিএনপি এবং এনসিপি আসন ভাগাভাগি করে সমঝোতা করে নেবে। তবে লীগের মতে, ইউনূসের গোড়া থেকেই লক্ষ্য হল সেনাবাহিনীর দখল নেওয়া। সে ক্ষেত্রে বিএনপিকে দুর্বল করে দিতে পারবেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আজ এক বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট ইউনূস অবৈধ ভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছেন। তাঁর বক্তব্য, জনাদেশবিহীন এই সরকারের দায় দেশের জনগণের কাছে নয়, বরং তাদের বিদেশি প্রভুদের কাছে। গত ন’মাসে জনগণের কল্যাণে তারা কিছু করতে না পারলেও বিদেশি প্রভুদের সন্তুষ্ট করার সব রকম কাজ করে গিয়েছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। করিডোর দিয়ে বহির্শক্তির আগ্রাসনকে অনুমোদন এবং চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া-সহ দেশ বিক্রির সকল পরিকল্পনা জনগণের সামনে ফাঁস হয়ে গিয়েছে। জনগণ বুঝতে পেরেছে যে জাদুকরের মতো কৌশল প্রয়োগ করে তাদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলা হয়েছিল। সেই ভ্রমের পর্দা সরিয়ে জনগণ সব কিছু স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে বলে তারা এই সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। তাই জনরোষ থেকে বাঁচতে ‘অবৈধ দখলদার ইউনূস মিথ্যা পদত্যাগের নাটক মঞ্চস্থ’ করেছেন এবং সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি উগ্র-সাম্প্রদায়িক শক্তির দলগুলিকে নিয়ে জনবিরোধী শিবিরের শক্তি প্রদর্শন করে জনগণকে চোখ রাঙাচ্ছেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)