E-Paper

‘রহস্যময়’ আগুন ঢাকার সচিবালয়ে, ছাই নথিপত্র

ছাত্রনেতারা ইঙ্গিতে আগুনের দায় চাপিয়েছেন সরকারের কাজে ক্ষোভ প্রকাশ করে আন্দোলনে নামা এক শ্রেণির আমলা ও সরকারি কর্মীর উপরে। এঁদের ‘সমূলে ধ্বংস করার’ হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন ছাত্রনেতারা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:১৩
ঢাকায় বাংলাদেশ সরকারের সচিবালয়ের আগ্নিকাণ্ড। বৃহস্পতিবার ভোর রাতের ছবি।

ঢাকায় বাংলাদেশ সরকারের সচিবালয়ের আগ্নিকাণ্ড। বৃহস্পতিবার ভোর রাতের ছবি। —নিজস্ব চিত্র।

বড়দিনের রাতে বাংলাদেশ সরকারের সচিবালয়ে আগুন লেগে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একমাত্র কোটা-বিরোধী আন্দোলনের ছাত্রনেতারা ছাড়া সরকার সমর্থক সব রাজনৈতিক দলই দেশের প্রশাসনের সদর দফতরের এই অগ্নিকাণ্ডকে ‘রহস্যময়’ আখ্যা দিয়ে ইউনূস সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন। ছাত্রনেতারা ইঙ্গিতে আগুনের দায় চাপিয়েছেন সরকারের কাজে ক্ষোভ প্রকাশ করে আন্দোলনে নামা এক শ্রেণির আমলা ও সরকারি কর্মীর উপরে। এঁদের ‘সমূলে ধ্বংস করার’ হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন ছাত্রনেতারা।

অগ্নি নির্বাপণে অংশ নেওয়া নৌবাহিনীর দলে থাকা এক জন সিনিয়র অফিসার মোহম্মদ আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন যে, তাঁর কাছে এই ঘটনা নাশকতা বলেই মনে হয়েছে। তিনি বলেন, “শর্ট সার্কিট থেকে নয়। মনে হয়েছে, পরিকল্পিত ভাবে আগুন লাগানো হয়েছে।” আগুন নেভানোর কাজ করার সময়ে এক দমকল কর্মী ট্রাক চাপা পড়ে মারা যান। এই মৃত্যুকেও রহস্যময় বলছেন অনেকে।

বুধবার গভীর রাতে আগুন লাগে সচিবালয়ের ৭ নম্বর বহুতলটিতে। দশতলা ভবনটির একাধিক জায়গায় এক সঙ্গে আগুন জ্বলতে দেখা যায়, যা থেকেই অনেকে বলছেন, দুর্ঘটনায় এটা সম্ভব নয়। দশ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্বে আনা দমকল ও সেনাদের দুই বাহিনীর অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর সদস্যরাও নাশকতার ইঙ্গিত দিয়েছেন। নৌবাহিনীর ওই কর্তার কথায়, “বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখা গিয়েছে। শর্ট সার্কিট হলে একটা জায়গা থেকে হয়। এটা হয়েছে এক সঙ্গে কয়েকটা জায়গা থেকে।”

আবার সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আগুন নেভানোর কাজ চলছে, অথচ পাশের ব্যস্ত সড়কের গাড়ি চলাচল কেন বন্ধ করা হল না, সেই প্রশ্নও করছেন দমকল কর্মী এবং দুর্ঘটনায় মৃতের স্বজনেরা। ঘাতক ট্রাকের চালক ও কর্মীকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন ছাত্ররা।

পুলিশ জানিয়েছে, ভবনটির ৬ থেকে ১০ তলা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের ১০টি বিভাগের দফতর ছিল। সেখানে থাকা সব আসবাব, নথি ও কাগজপত্র সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে।

বিএনপি-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির বিবৃতিতে বলেছেন, “সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে ভস্মীভূত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়া অস্বাভাবিক নয়।” দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে সব চেয়ে দুর্বল সরকার এই অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।”

অন্য দলগুলিও এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে। চাপে পড়ে সরকার অগ্নিকাণ্ডের তদন্তের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি তৈরি করে তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট দিতে বলেছে। বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, এই প্রথমিক রিপোর্ট সংবাদমাধ্যমকে জানানো হবে না। তবে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করা হতে পারে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangladesh Unrest

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy